বিদ্বেষ-বিষ নয় সৌভ্রাতৃত্ব  সুদৃঢ় করার বার্র্ত দিন

লেখক
মনোজ দেব

শিখদের বীরত্বের কাহিনী নিয়ে বাঙালী কবি রবীন্দ্রনাথ কবিতা রচনা করলেন ‘বন্দী বীর’---

‘‘পঞ্চনদীর তীরে

বেনী পাকাইয়া শিরে

দেখিতে দেখিতে গুরুর মন্ত্রে জাগিয়া উঠেছে শিখ---

নির্মম নির্ভীক৷’’

শিখ-বাঙালী সৌভ্রাতৃত্বের আরও বড় নিদর্শন সুভাষচন্দ্র৷ ১৯৩৯ সালে কংগ্রেস  সভাপতি নির্বাচনে গান্ধী মনোনীত প্রার্থী সীতারামাইয়াকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র৷ ওই নির্বাচনে সুভাষচন্দ্র বাঙলার পরে সবথেকে বেশী ােটের ব্যবধানে জয় পেয়েছিলেন পঞ্জাব থেকে৷ পঞ্জাবে সুভাষচন্দ্রের পক্ষে বোট পড়েছিল ১৮২ টি, বিপক্ষে ৮৬ টি৷ পক্ষান্তরে  গুজরাট থেকে সুভাষচন্দ্র পেয়েছিলেন মাত্র ৫টি ভোট, বিপক্ষে পড়েছিল ১০০ টি বোট৷

শিখ-বাঙালী সৌভাতৃত্ব দীর্ঘদিন ধরে শক্ত ভিতের  ওপর দাঁড়িয়ে আছে৷ ৮ই অক্টোবর নবান্ন অভিযান কে কেন্দ্র করে৷ বিজেপি যে গুণ্ডামি ও অশান্তির আগুন জ্বালাতে চেয়েছিল পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তা ব্যর্থ করে দিয়েছে৷ যদি উত্তর প্রদেশে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে এমন একটা  অভিযান হতো তার পরিণতি যে কি হতো তা ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়৷ এখন বিজেপি নেতারা ব্যর্থতার জ্বালা মেটাতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তাদের চিরাচরিত বিভেদের রাজনীতিকে হাতিয়ার করেছে৷

বিজেপি দলটার উৎপত্তি ও বাড়বাড়ন্ত সাম্প্রদায়ীকতাকে অবলম্বন করে৷ স্বাধীনতার পূর্বে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও উত্তর পশ্চিম ভারতের কিছু নেতৃবৃন্দ ও একশ্রেণীর দেশীয় পুঁজিপতি সুকৌশলে সাম্প্রদায়ীক দাঙ্গা সৃষ্টি করে বাঙলা ও পঞ্জাবকে ভাগ করে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম দেয়৷ সেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ক্ষত আজও বাঙালীকে কুরে কুরে খাচ্ছে৷ বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে পা রাখতে সেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকেই হাতিয়ার করেছে৷ বহু চেষ্টা করেও বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ১৯৪৬-এর সেই ভয়াবহ দিন ফিরিয়ে আনতে পারেনি৷

নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে রাজ্যে যে অশান্তির আগুন জ্বালতে চেয়েছিল তাতে জনগণের বিপুল সাড়া না থাকায় ও পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামলে দেওয়ায় বিজেপির পরিকল্পনা নিষ্ফল হয়ে যায়৷ কিন্তু অভিযানের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপি তাদের স্বভাব-সুলভ সাম্প্রদায়িক বিভেদের রাজনীতি শুরু করেছে৷

ঘটনা হলো বিজেপির ওই দিনের নবান্ন অভিযানে ভিনরাজ্য থেকে আগত এক শিখ যুবক অস্ত্রসহ মিছিলে ছিলেন৷ আগ্ণেয় অস্ত্রটি শুধুমাত্র জন্মু কশ্মীরের রাজৌরি জেলার মধ্যে ব্যবহারের লাইসেন্স ছিল৷ বেআইনিভাবে অস্ত্র নিয়ে মিছিলে  ঢোকার জন্যে পুলিশ বলবিন্দরকে গ্রেপ্তার করতে গেলে ভীড়ের মধ্যে ধস্তাধস্তিতে তাঁর  পাগড়ি খুলে যায়৷ এখন বিজেপি ওই পাগড়ির  খোলা নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে৷ তবে আশার কথা বাঙলার শিখ সমাজ বিজেপির পাশে দাঁড়ায়নি৷ তাই দিল্লীর দ্বারস্থ হতে হয়েছে৷ দিল্লীর শিখ সমাজের  এক কর্তা মনজিন্দর সিরসা কলকাতায় এসে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে গেছেন৷ পাগড়ী খোলা নিয়ে সরব এক ক্রিকেটারও ৷ কিন্তু কেউ একবারও বলছেন না ওই যুবক অবৈধ অস্ত্র নিয়ে মিছিলে গিয়ে অন্যায় করেছে৷ বিজেপির মিছিলের উদ্দেশ্যই ছিল অশান্তি  বাধানোর৷ বাঙলার শিখ সমাজ বিজেপির পাশে নেই, কারণ তাঁরা জানেন বাঙলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে ঐতিহ্য আছে ভারতবর্ষের অন্যকোন প্রদেশে তা নেই৷ ইন্দিরা গান্ধীর  হত্যার পর একমাত্র কলকাতাই ছিল শিখদের কাছে নিরাপদ স্থান৷

বাঙলায় কেউ যদি দিল্লী থেকে এসে দাঙ্গা বাধাতে চায়,তাদের বলি--- ওই অধম কাজটি বাঙলায় এসে অন্তত করবেন না৷ পুলিশ সেদিন যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামলেছেন৷ উপযুক্ত সময়ে ওই যুবককে গ্রেপ্তার  না করলে পরিস্থিতি অন্যদিকে যেতে পারতো৷

বাঙলার মানুষ শিখদের যথেষ্ট শ্রদ্ধা ও সম্মানের চোখে দেখে৷ স্বাধীনতা সংগ্রামে সব থেকে বেশী অবদান বাঙলা ও পঞ্জাবের৷ স্বাধীনতার বলিও হয়েছে বাঙলা  পঞ্জাব৷ তাই দাঙ্গা নয়, পাগড়ি নিয়ে রাজনীতিও নয়, বেআইনিভাবে অস্ত্র নিয়ে মিছিলে যাওয়ার জন্যে ধিক্কার জানান ওই যুবককে, উপযুক্ত সময়ে দক্ষতার সঙ্গে  পরিস্থিতি সামলানোর জন্যে  ধন্যবাদ দিন পুলিশকে, শিখ বাঙালী সৌভ্রাতৃত্ব সুদৃঢ় করার বার্র্ত দিন৷

 এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে বলি৷ অসমের এক বিজেপি মন্ত্রী বাঙালীকে খচ্চরজাত বলেছে৷ কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাঙালীকে উইপোকা ঘুষপেটিয়া বলেছেন৷ এ নিয়ে বাঙলার কোন নেতা মন্ত্রী, কোন বুদ্ধিজীবী কেউ একটা শব্দ ও বলেন নি৷ জানিনা এ বাঙালীর  সংকীর্ণতা মুক্ত উদারতা নাকি হীণমন্যতা, যাই হোক ঘুমন্ত  বাঘকে  না খোঁচানই ভাল৷