বিগত ৮ বছর ভিক্ষুকদের চা, বিস্কুট ও জল খাইয়ে সেবা করছেন এক গরীব চায়ের দোকানের মালিক

সংবাদদাতা
পি.এন.এ.
সময়

দোকান চালিয়ে কোনও দিন মেলে ৪০০ টাকা৷ বাজার ভাল হলে আয় কিছুটা বেশি হয়৷ আয় আহামরি না হলেও সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার পূর্বস্থলী ২ব্লকের পারুলিয়া বাজার এলাকার চা বিক্রেতা তপন দেবনাথ তাঁর দোকানে ভিক্ষুকদের চা, বিস্কুট আর জল খাওয়ান বিনা পয়সায়৷ আট বছর ধরে এ ভাবেই ভিক্ষুকদের সেবা করে চলেছেন তিনি৷ আনাজ-সহ নানা জিনিসপত্র বিক্রি হয় পারুলিয়া বাজারে৷ প্রায় তিন দশক ধরে সেখানে চা বিক্রি করছেন তপন৷ বাজার থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে তেলিনপাড়া এলাকায় তাঁর বাড়ি৷ দু’দশক ধরে তিনি কেটলি হাতে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করেছেন৷ আট বছর আগে বাজার কমিটি তাঁকে ‘শেড-এর নীচে দোকান করার জায়গা দেয়৷ এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, প্রতি মঙ্গলবার বাজারে নবদ্বীপ, পাটুলি, লক্ষ্মীপুর, বেলেরহাট, নিমতলা, সমুদ্রগড়, পোলেরহাট থেকে বহু মানুষ ভিক্ষা করতে আসেন৷ গত মঙ্গলবার নবদ্বীপ এলাকার বাজার বন্ধ থাকায় বেশি সংখ্যক ভিক্ষুক পারুলিয়া বাজারে এসেছিলেন৷ তাঁদের বড় অংশই বয়স্ক৷ কাজ করার তেমন ক্ষমতা নেই তাঁদের৷ বাজারে ভিক্ষা করে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তাঁরা৷ ক্লান্ত ভিক্ষুকদের দোকানে ডেকে আনেন তপন৷ তাঁদের হাতে জলের বোতল দেন৷ পরে খাওয়ান গরম চা আর বিস্কুট৷ কিছু ভিক্ষুককে ফলও দেন৷ আনন্দ বালা, গোপাল মণ্ডল, বন্দনা দাসীদের কথায়, ‘‘ভিক্ষা করতে এসে দলবেঁধে ওঁর দোকান গেলেও বিরক্ত হন না উনি৷ হাসি মুখে চা আর বিস্কুট এগিয়ে দেন৷’’ কত মানুষকে বিনা পয়সায় চা, বিস্কুট খাওয়ান? চায়ের গুমটি থেকে উত্তর আসে, ‘‘কখনও ১০০, কখনও ৮০৷ হিসাব করিনি৷ যতক্ষণ ওঁরা আসেন, আমি খাইয়ে যাই৷ হিসাব করে দেখেছি সপ্তাহে এক থেকে দেড় দিনের আয় চলে যায় ওঁদের সেবায়৷ তবে এ নিয়ে আক্ষেপ নেই৷ যাঁরা রোদে পুড়ে ভিক্ষাবৃত্তি করেন, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে ভাল লাগে৷ যত দিন কর্মক্ষম থাকব, ততদিন এ ভাবেই সেবা করব৷’’

তপন জানান, তিনি মাতৃহারা হয়েছিলেন মাত্র দেড় বছর বয়সে৷ বাবা প্রভাতচন্দ্র দেবনাথ খেতমজুরের কাজ করে ছেলেমেয়েদের বড় করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাবার মৃত্যু হয়েছে বছর আট আগে৷ ছোট থেকেই পরিবারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী৷ অভাবের সংসারে ভালবেসে কেউ কিছু দিলে আনন্দ হত৷ তখনই ঠিক করেছিলাম, রোজগার করলে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াব৷’’ তপনের দুই ছেলে কর্ণ এবং অর্জুন-সহ পরিবারের সকলেই এই কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেন৷ এলাকার বাসিন্দা দীপঙ্কর চক্রবর্তী, অনিল দেবনাথ, শঙ্কর ভৌমিক বলেন, ‘‘প্রতিদিন আমরা ওঁর দোকানে চা খাই৷ অসহায় মানুষ, যাঁরা ওঁর দোকানে আসেন, তাঁদের পরম যত্নে চা খাওয়ান উনি৷ অর্থ নেন না৷ ওঁর মতো মানুষ এলাকার সম্পদ৷’’ পারুলিয়া বাজার কমিটির সম্পাদক তথা পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কালীশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে তপনকে চিনি৷ শুধু সপ্তাহে এক দিন নয়, অন্য দিনও অসহায় কোনও মানুষ ওঁর দোকানে এলে তাঁকে বিস্কুট আর চা খাওয়ান তপন৷ বড় মন না হলে এত বছর ধরে এই কাজ করতে পারেন না কেউ৷’’