নিজস্ব সংবাদদাতা, কলিকাতা ঃ গত ১৮ই মে আনন্দপূর্ণিমা তিথিতে (বৈশাখী পূর্ণিমা) বিশ্বের ১৮২টি দেশে আনন্দমার্গের সমস্ত ইয়ূনিট ও শাখা প্রতিষ্ঠানে মার্গগুরুদেব শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী ৯৯তম শুভ জন্মতিথি উৎসব মহাসমারোহে পালিত হ’ল৷ আনন্দমার্গের কেন্দ্রীয় ধর্মপ্রচার সচিব আচার্য বিকাশানন্দ অবধূত এই সংবাদ জানান৷ কলিকাতাস্থিত আনন্দমার্গের কেন্দ্রীয় আশ্রমেও এদিন মহা ধূমধাম সহকারে মার্গগুরুদেবের জন্মতিথি উৎসব পালিত হয়৷ এই উপলক্ষ্যে আগের দিন অর্থাৎ ১৭ই মে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ‘‘বাবা নাম কেবলম্’’ মহামন্ত্রের অখণ্ড কীর্ত্তন শুরু হয়৷ ১২ ঘণ্টা ব্যাপী অখণ্ড কীর্ত্তনের পর সকাল ৬টা ৭মিনিটে মার্গগুরুদেবের শুভ জন্মক্ষণে শঙ্খধবনি, ঊলুধবনি সহ মার্গগুরুদেবের জয়ধবনি দিয়ে প্রভাতসঙ্গীত, কীর্ত্তন ও মিলিত সাধনা অনুষ্ঠিত হয়৷ এরপর বাবার জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিশেষ ‘‘আনন্দবাণী’’ পাঠ হয়৷ আনন্দবাণী পাঠ করেন আচার্য সর্বেশ্বরানন্দ অবধূত বাংলাতে, ইংরেজীতে আচার্য নিত্যসত্যানন্দ অবধূত, হিন্দীতে আচার্য বীতমোহানন্দ অবধূত ও স’ংস্কৃতে শ্রীমতী বেদবতী জানা৷ এরপর ভারতের ও বহির্ভারতের বিভিন্ন ভাষায় আনন্দবাণী পাঠ করেন ওই ভাষাভাষী আনন্দমার্গীরা৷ এরপর এই বাণীর তাৎপর্য বাংলাতে ব্যাখ্যা করে বোঝান আচার্য নিত্যসত্যানন্দ অবধূত ও হিন্দীতে ব্যাখ্যা করে বোঝান আচার্য বীতমোহানন্দ অবধূত৷
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল প্রসাদ বিতরণ৷ অনুষ্ঠানে যোগদানকারী ভক্তবৃন্দদের মধ্যে যেমন প্রসাদ বিতরণ করা হয়, তেমনি প্রতিবেশীদের মধ্যেও প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়৷ গেটের বাইরে প্রসাদ বিতরণ কেন্দ্র থেকে প্রতিবেশীগণ ভক্তিভরে সুশৃঙ্খলভাবে লাইন দিয়ে প্রসাদ গ্রহণ করতে থাকেন৷
তারপর অনুষ্ঠানের পরবর্তী পর্বে মার্গগুরু শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী আদর্শের ওপর বক্তব্য রাখেন আচার্য সর্বেশ্বরানন্দ অবধূত৷ তিনি মার্গগুরুদেবের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা ও নিজের ব্যষ্টিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মার্গগুরুদেবের সর্বজ্ঞত্বের ও অকল্পনীয় ঐশী শক্তির পরিচয় দেন৷ তিনি বলেন, মার্গগুরুদেব প্রতিটি মানুষের শরীর, মন ও আত্মার বিকাশের জন্যে যে সাধনা ও জগৎকল্যাণের আদর্শ আমাদের উপহার দিয়েছেন, আমাদের উচিত নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁর দেওয়া সেই আত্মবিকাশের পথ অনুসরণ করে আমাদের জীবনকে সার্থক করে তোলা, সঙ্গে সঙ্গে আদর্শ সমাজ গড়ে তোলার জন্যে তিনি যে আদর্শ আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন সেই আদর্শের পথ ধরে এক আদর্শ সর্বপ্রকার শোষণমুক্ত সর্বাঙ্গসুন্দর সমাজ গড়ে তোলার জন্যে সবাইকে উদ্যোগী হতে তিনি আহ্বান জানান৷
মার্গগুরুদেবের জন্মতিথি উপলক্ষ্যে ‘রাওয়া’র উদ্যোগে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়৷ ‘রাওয়া’র বিভিন্ন শিল্পীরা প্রভাত সঙ্গীত ও প্রভাত সঙ্গীত অবলম্বনে বিভিন্ন নৃত্য পরিবেশন করে’ এক অপূর্ব আনন্দময় পরিবেশ রচনা করেন৷ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতে নরেন্দ্রপুর আনন্দমার্গের শিশুসদনের একদল শিশু ‘‘জন্মদিনে এই শুভক্ষণে প্রাণভরা অপার আনন্দে’’---এই প্রভাত সঙ্গীতটি পরিবেশন করে৷ সঙ্গে সঙ্গে অন্য দল এই প্রভাত সঙ্গীত অবলম্বনে নৃত্য পরিবেশন করে সবাইকে আনন্দ দেয়৷ এই অনুষ্ঠানে প্রধান দুই শিল্পীর মধ্যে একজন ছিলেন তুলিকা চক্রবর্তী৷ তিনি ‘বজ্রকঠোর কুসুম কোরক’, ‘কৃষ্ণস্তু পুরুষোত্তম’, ‘কাছে এসে ধরা দিলে’ প্রভৃতি বেশ কয়েকটি প্রভাত সঙ্গীত পরিবেশন করে শ্রোতাদের মোহিত করে দেন৷ শিল্পী সত্যজিৎ জৈনও বিভিন্ন প্রভাত সঙ্গীত পরিবেশন করে সবাইকে মুগ্দ করে দেন৷
হাসপাতালে ফল বিতরণ
আনন্দপূর্ণিমা উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের মত এ বছরেও কলকাতার আনন্দমার্গের মহিলা কল্যাণে বিভাগের অধ্যক্ষা অবধূতিকা আনন্দপ্রেমদীপ্তা আচার্যার উদ্যোগে হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে ফল বিতরণ করা হয়৷ তিনি এই দিন বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে ফল বিতরণ করেন৷