গত ১০ই মে আনন্দপূর্ণিমার (বৈশাখী পূর্ণিমা) পুণ্য তিথিতে আনন্দমার্গের প্রবক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী ৯৭ তম শুভ জন্মতিথি উৎসব অনুষ্ঠিত হ’ল৷ বিশ্বের ১৮২ টি দেশের আনন্দমার্গীরা মহাসমারোহে এই দিনটিকে পরম ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করেন৷
কলকাতা ভি. আই. পি নগরে আনন্দমার্গের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই উপলক্ষ্যে ৯ই মে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ‘ৰাৰা নাম কেবলম্’ মহামন্ত্র সহযোগে অখন্ড কীর্ত্তন অনুষ্ঠিত হয়৷ এই কীর্ত্তনে কলকাতা ও আশপাশের জেলার কয়েক হাজার আনন্দমার্গী যোগদান করেন৷ শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী পবিত্র জন্মক্ষণ ১০ই মে সকাল ৬.০৭ মিনিট পর্যন্ত এই অখন্ড কীর্ত্তন চলে৷ এর পর মার্গগুরুদেবের জয়ধ্বনি ও শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি প্রভৃতি দিয়ে সবাই মিলিত সাধনা ও মিলিত গুরুপূজা করেন৷ তারপর মার্গগুরুদেবের বাণীপাঠ হয়৷ বাণীটি হল ঃ
‘‘কোন জীবকে ঘৃণা করবার অধিকার তোমার নেই৷ তুমি কেবল সেবাই করতে পার৷ মনে রেখো, প্রতিটি জীবকে হ্মের বিকাশ ভেবে’ সেবা করতে হবে৷ এটাও মনে রেখো, এই সেবার গৌরবও তোমার প্রাপ্য নয়৷ এই গৌরব তাঁরই প্রাপ্য যাঁর শক্তিতে তুমি সেবা করছ, যাঁর ভাবনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তুমি সেবা করবার যোগ্যতা অর্জন করেছ৷’’
প্রথমে আচার্য সর্বাত্মানন্দ অবধূত মার্গগুরুদেব –প্রদত্ত এই বাংলা বাণীটি পাঠ করেন৷ এরপর সংস্কৃত, ইংরেজী, হিন্দী, ওড়িয়া, তেলেগু, তামিল, অঙ্গিকা, ভোজপুরী, ছত্তিশগড়ি, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, জার্মানী, ইতালি, চীনা প্রভৃতি পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় বাণীপাঠ হয়৷ বাণীপাঠের পর এই বাণীর তাৎপর্য বাংলা ভাষায় ব্যাখ্যা করেন আচার্য সর্বেশ্বরানন্দ অবধূত ও হিন্দীতে আচার্য কিষাণ সিং সুদ৷
ভি.আই.পি. নগর এলাকাতে কীর্ত্তন পরিক্রমা ও সঙ্গে সঙ্গে জনসাধারণের মধ্যে প্রসাদ বিতরণও করা হয়৷ আনন্দমার্গের মহিলা কল্যাণ বিভাগের পক্ষ থেকে বারুইপুর সরকারী হাসপাতালে ৪৭০জন রোগীদের মধ্যে ফল ও মিষ্টান্নও বিতরণ করা হয়৷
বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা
সকাল ১০টা থেকে কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে আনন্দমার্গের এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাও বের হয়৷ সঙ্গে ছিল শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী প্রতিকৃতি ও তাঁর বাণী সহ সুসজ্জিত ট্যাবলো৷ সঙ্গে প্রভাত সঙ্গীত ও কীর্ত্তন৷ এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ধর্মতলাতে গিয়ে সমাপ্ত হয়৷
বস্ত্রদান
আশ্রমে সকাল ১০টায় ভি. আই. পি. নগর এলাকার দুঃস্থ মানুষদের মধ্যে আনন্দমার্গ ইয়ূনিবার্স্যাল রিলিফ টীমের পক্ষ থেকে ১০০ বস্ত্র (ধুতি ও শাড়ী) বিতরণও করা হয়৷
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
এরপর আশ্রমে প্রভাতসঙ্গীত অবলম্বনে এক মনোজ্ঞ সাংসৃক্তিক অনুষ্ঠান ও সমাজে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী অবদানের ওপর এক মনোজ্ঞ আলোচনাসভারও আয়োজন করা হয়৷ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রথিতযশা সঙ্গীশিল্পী সুস্মিতা গোস্বামী, দীপ্তিশ্রী সিন্হা, তাপস রায় প্রমুখ প্রভাত সঙ্গীত পরিবেশন করে দর্শক তথা শ্রোতাদের বিমুগ্ধ করে দেন৷
শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী অবদানের ওপর আলোচনা সভা
মার্গগুরু শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী অবদান সম্পর্কিত আলোচনা সভায় প্রথমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক ডঃ অচিন্ত্যকুমার বিশ্বাস শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী আদর্শের বিভিন্ন দিক আলোচনা করে বলেন, আজকের যুগের সমস্ত প্রকার সমস্যারই সুষ্ঠু সমাধান রয়েছে শ্রীশ্রীআননন্দমূর্ত্তি আদর্শে৷ এরপর একে একে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ডঃ অরুণ ঘোষ, , কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ডঃ অমিত ভট্টাচার্য, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ডাঃ পবিত্র গুপ্ত প্রমুখ শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী সর্বাণূস্যূত আদর্শের ভূয়সী প্রশংসা করেন৷
আনন্দমার্গের নোতুন ওয়েবসাইট
এই অনুষ্ঠানে আনন্দমার্গের এক নোতুন ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন আনন্দমার্গের প্রবীণ সন্ন্যাসী আচার্য সর্বেশ্বরানন্দ অবধূত৷ এই ওয়েবসাইটটি হ’ল ঃ www.anandamargamission.com
আনন্দমার্গের নোতুন পুস্তক
যাঁরা শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে এসেছিলেন তাঁদের প্রায় সবার মার্গগুরুদেব সম্পর্কে আপন আপন বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি রয়েছে৷ মার্গের আর্কাইভ বিভাগের পরিচালক আচার্য প্রণবাত্মকানন্দ অবধূত এমনই হাজার হাজার আনন্দমার্গীর সঙ্গে যোগাযোগ করে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী সম্পর্কে তাঁদের আপন আপন অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির কথা ভি.ডি.ও রেকর্ডিং করেছেন৷ সেই সমস্ত বিবরণ সম্বন্ধিত ৬০০ পৃষ্ঠার একটি নোতুন গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন আচার্য প্রণবাত্মানন্দ অবধূত৷ এই গ্রন্থটিও এবার মার্গগুরুদেবের জন্মতিথি অনুষ্ঠানে উন্মোচন করেন প্রবীণ সন্ন্যাসী আচার্য ভবেশানন্দ অবধূত৷