২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ জ্বরে মজে থাকা ফুটবল প্রেমীরা ইতোমধ্যেই বেশ কিছু অতুলনীয় ম্যাচ দেখে আপ্লুত হয়েছে৷ গ্রুপ লীগের খাদের কিনারা থেকে উঠে এসেছে আর্জেন্তিনা৷ ফ্রান্স, ব্রাজিলও সহজে দ্বিতীয় রাউণ্ডে যেতে পারেনি৷ আর সবচেয়ে বড় অঘটন ঘটিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া৷ শেষ ম্যাচে জার্মানিকে হারিয়ে দিয়ে রাশিয়া থেকে জার্মানিতে যাওয়ার টিকিট হাতে ধরিয়ে দিল৷ এশিয়ার দেশের এই পারফরম্যান্স আমাদের অনুপ্রেরণা যোগাবে৷ তবে ভাল ফুটবল উপহার দিয়েছে ক্রোয়েশিয়া, নাইজিরিয়া, জাপান ইত্যাদি দলগুলো৷ তথাকথিত অনামী দলগুলিই গ্রুপ লীগে ভাল ফুটবল উপহার দিয়েছে৷ মোটামুটিভাবে বিশ্বকাপ জমে উঠেছে বলা যায়৷
গ্রুপ A ঃ এই গ্রুপ থেকে রাশিয়া, উরুগুয়ে শেষ ষোলয় যাওয়া নিশ্চিত করেছে৷ তবে শুরুটা ভাল হলেও শেষ ম্যাচে রাশিয়াকে হার মানতে হয়েছে উরুগুয়ের কাছে৷ গ্রুপে রানার্স হয়েই তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে৷
গ্রুপ B ঃ প্রত্যাশা মতই স্পেন ও পর্তুগালের যাওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি৷ স্পেন ও পর্তুগালের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে৷ ফল ছিল ৩-৩৷ পর্তুগালের তিনটি গোলই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর৷ তাঁর একটি ফ্রি-কিক বাঁক খেয়ে স্পেনের গোলরক্ষককে স্তম্ভিত করে গোলে ঢুকে যায়৷ এই ধরণের ফুটবলের শিল্প দেখার জন্যেই ফুটবলপ্রেমীরা রাত জাগেন৷ তবে স্পেনও বেশ গুছিয়ে ফুটবল খেলছে৷ আশা করা যায় দুটি দলই নক-আউটে ভাল ফুটবল উপহার দেবে৷
গ্রুপ C ঃ ফ্রান্স ইতিমধ্যেই পরের রাউন্ডে চলে গিয়েছে৷ অঘটন না হলে ফ্রান্সের পাশাপাশি এই গ্রুপ থেকে ডেনমার্ক শেষ ষোলয় পৌঁছচ্ছে৷ এই গ্রুপে অষ্ট্রেলিয়া ও পেরু প্রতি ম্যাচেই লড়াই করলেও অভিজ্ঞতার অভাবে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছে৷
গ্রুপ D ঃ এই গ্রুপে ছিল ক্রোয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, আইসল্যাণ্ড ও হেভিওয়েট আর্জেন্তিনা৷ ক্রোয়েশিয়া ৩-০-তে চুর্ণ করে আর্জেন্তিনাকে৷ ঠাণ্ডা মাথায় নাইজিরিয়া আর্জেন্তিার সঙ্গে ড্র করলেই বিদায়ের ঘণ্টা বেজে উঠত মারাদোনার দেশের৷ কিন্তু কঠিন অঙ্কের পরিসংখ্যানে গোল পার্থকের বিচারে শেষ পর্যন্ত টিকে রইল মেসিরা৷ ভাল লড়াই করেও নাইজিরিয়াকে বিদায় নিতে হ’ল৷ উল্লেখ্য যে নাইজিরিয়ার ঊণিশ বছরের কিশোর গোলকিপার এই বিশ্বকাপের সর্বকনিষ্ঠ গোলকিপার---যিনি আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে দারুণ গোলকিপিং করেছেন৷
গ্রুপ E ঃ ব্রাজিল ও সুইসদের চাই একটা ড্র৷ অন্য দিকে পরের রাউন্ডে যেতে গেলে জিততেই হবে সার্বিয়াকে৷ হারলেও নেইমারদের সম্ভাবনা থাকছে পরের রাউন্ডে যাওয়ার৷ বোঝাই যাচ্ছে কোষ্টারিকা ও সুইজারল্যাণ্ড প্রথম রাউণ্ডেই বিদায় নিতে চলেছে৷ ব্রাজিলের ছোট ছোট পাসিং ফুটবল নজর কেড়েছে৷ নেইমার একটি গোল পেয়েছেন৷
গ্রুপ F ঃ দুটি ম্যাচ জিতে এক নম্বরে থাকলেও নিশ্চিত নয় মেক্সিকো৷ জার্মানির বিদায়ের পর সব দলই সতর্ক৷
গ্রুপ G ঃ দুটি ম্যাচ জয় করার ফলে পরের রাউন্ডে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেছে ইংল্যান্ড ও বেলজিয়াম৷ এই গ্রুপ থেকে বিদায় নিয়েছে পানামা ও টিউনিশিয়া৷
গ্রুপ H ঃ শেষ গ্রুপে লড়াই জাপান, সেনেগাল ও কলম্বিয়ার মধ্যে৷ যারাই এই গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় রাউণ্ডে যাক না কেন, শেষ আটে যাওয়ার জন্যে তাদের অনেক ভাল ফুটবল খেলতে হবে৷ এই ধরণের প্রতিযোগিতায় অনেক দলই নিজেদের কিছুটা লুকিয়ে রাখে৷ সময় এলে তবেই তুরুপের তাস ছাড়ে---দেখা যাক পরবর্তীতে কি ফুটবল খেলে এই দলগুলি৷
নক-আউট পর্যায়ে ইংল্যাণ্ড, স্পেন, ক্রোয়েশিয়া, উরুগুয়ে বেলজিয়াম, ফ্রান্স বেশ শক্তিশালী দল৷ আর্জেন্তিনা, ব্রাজিল, পর্তুগাল ইত্যাদি দলগুলিতে খেলোয়াড়দের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ কারণ তারকা খেলোয়াড়রা অনেকেই নিজের দলে উপযুক্ত সহ খেলোয়াড় পাচ্ছেন না৷ আসলে একসঙ্গে অনেকদিন না খেললে ভাল কম্বিনেশন তৈরী হয় না৷ তবে আশা করা যায় নক আউটে খোলস ছেড়ে বের হবে মেসি-রোনাল্ডো-নেইমার-ইনিয়েস্তাদের পায়ের জাদু৷ ফুটবল রসিকরা সেই অপেক্ষাতেই রয়েছেন৷