বিশ্বকাপে গোল করার থেকে গোল বাঁচানোর ফুটবল প্রকট

সংবাদদাতা
ভবেশ বসাক
সময়

খেলা ফুটবল৷ গোল করার জন্যেই ফুটবল৷ ফুটবলপ্রেমিকরা মুখে যাই-ই বলুক না কেন দৃষ্টিনন্দন গোল দেখার জন্যেই মাঠে যাওয়া, টিভির সামনে বসে রাত জেগে বিশ্বকাপের ফুটবল দেখা৷ আসলে এ ধরণের প্রতিযোগিতায় যারা মাঠে খেলে তারা    নিজের নিজের ষ্ট্র্যাটেজিকে সামনে রেখে ফুটবলটা খেলে৷ তবে ফুটবল মানেই কিন্তু গোল করতে হবে৷ যদি বিপক্ষ দলকে হারাতে হয় তো বিপক্ষের জালে তো বল ফেলতেই হবে৷ বিশ্বকাপে গোল না করে তো চ্যাম্পিয়ন হওয়া যাবে না৷ যদিও তাবড় তাবড় কোচেরা, ফুটবলাররা বিশ্বকাপের আসরে মাঠে রয়েছেন৷ নিজের দেশকে জয়ের মুকুট উপহার দেওয়ার জন্যেই মূলপর্বের এই লড়াইয়ে আসা৷ কিন্তু রাউণ্ড রবিন লীগের খেলা থেকে বিশ্বকাপের খেলা প্রায় শেষের মুখে---ম্যাচ প্রতি গড়ে গোলের সংখ্যা কত? উত্তর আসবে ১-এর সামান্য বেশী৷ এর মধ্যে আবার পেনাল্টির সংখ্যা, ট্রাইব্রেকারের সংখ্যাটাও রয়েছে৷ আসলে এই বিশ্বকাপে গোল করার জন্যে আক্রমণাত্মক ফুটবলের উদাহরণ তেমন একটা নজরে পড়েনি৷ বরং ডিফেন্স মজবুত করার বিভিন্ন রকম পন্থা-পদ্ধতি নজরে এসেছে৷ এ পর্যন্ত ২০১৮ বিশ্বকাপে আর্জেণ্টিনা ও ফ্রান্সের মধ্যে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটিতে ৭টি গোল হয়েছে৷ ফ্রান্স ৪-৩ ব্যবধানে লাতিন আমেরিকার দলটিকে হারায়৷

এই বিশ্বকাপের বিভিন্ন ম্যাচের পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে বিপক্ষ দলের কোনও একজন বা দু’জন খেলোয়াড়কে যদি ম্যান-টু-ম্যান মার্কিং, জোনাল মার্কিংয়ের মাধ্যমে আটকে দেওয়া যায় তবে নিজেদের গোল বাঁচানোটা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে৷ এই পদ্ধতিতেই মেসি, রোনাল্ডোর পায়ে বল পড়লেই দুই থেকে চারজন ফুটবলার ঝাঁপিয়ে পড়ছেন বল কাড়ার জন্যে৷ তাই লক্ষ্য করা যাবে তথাকথিত নামী খেলোয়াড়দের অনেক ফাউল করা হয়েছে৷ একক প্রচেষ্টায় ফিল্ড গোল হয়নি বললেই চলে৷ তাই এ বিশ্বকাপ গোল করার বিশ্বকাপ নয়৷ গোল বাঁচানোর জন্যেই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ৷ কাপ জিততে হলে আগে গোল বাঁচাও নীতি৷ বলা হয়ে থাকে এখন টোটাল ফুটবলের যুগ৷ অর্থাৎ সাত-আট জন ফুটবলার আক্রমণে উঠে আসবে বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে৷ আবার আট-নয় জন মিলে বিপক্ষের আক্রমণ রুখে দেবে মাঝমাঠে বা নিজেদের পেনাল্টি বক্সে৷ প্রত্যেক দলের খেলাই দেখা গেল নিজেদের পেনাল্টি বক্সে আট জন বা তার বেশী খেলোয়াড় ডিফেন্স করছেন ঠিকই কিন্তু আক্রমণের সময় চার কি পাঁচ জন ফুটবলার৷ পেছন থেকে অনবরত বল সাপ্লাই না হলে ফরোয়ার্ডের খেলোয়াড়রা বিপজ্জনক হয়ে উঠবেন না৷ এটা টোটাল ফুটবল নয়, এটা টোটাল ডিফেন্সিভ ফুটবল৷ গোল বাঁচানোর খেলায় দৃষ্টিনন্দন ফুটবলটাই কেমন যেন হারিয়ে যাওয়ার দিকে৷ তবে হ্যাঁ, কিছু অসাধারণ ফ্রি-কিক, দুরন্ত কাউণ্টার অ্যাটাক, অসাধারণ গতির ঝলক দেখা গেছে এই বিশ্বকাপে৷ তবে ইয়ূরোপিয়ান কাপ, লাতিন আমেরিকান কাপ, কিংবা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ বা ইয়ূরোপ আমেরিকার বিভিন্ন ক্লাবের ম্যাচে ফুটবলের যে অসাধারণত্ব ফুটে ওঠে---সেই মাপের সমতুল্য ফুটবল এই বিশ্বকাপের আসরে এখনও পরিলক্ষিত হয়নি৷ যদিও এই বিশ্বকাপে বেশ কয়েকজন তরুণ খেলোয়াড় নজর কেড়েছেন৷ ফ্রান্সের গ্লিন্সম্যান, এমবেপেদের দুরন্ত গতিময় ফুটবল, অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য৷ বেলজিয়ামের তরুণ গোলরক্ষক, ফরোয়ার্ডের লুকাকো, ইংল্যাণ্ডের হ্যারিকেন ভবিষ্যতে বিশ্বের কোনও না কোনও ক্লাবের তারক-ফুটবলার হতে চলেছেন৷ ক্রোয়েশিয়া সংঘবদ্ধ মাঝমাঠ ফুটবলপ্রেমীদের আনন্দ দিয়েছে৷ সবমিলিয়ে এই বিশ্বকাপ আগামী দিনে আক্রমণাত্মক ফুটবলের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দিয়ে গেল৷