বিশ্বকাপের উত্তেজনা এখন তুঙ্গেl চলছে শেষ চারে যাওয়ার জোর লড়াই চ্যাম্পিয়নের লক্ষ্যে অঙ্ক কষে এগোচ্ছে ভারত

সংবাদদাতা
ক্রীড়া প্রতিনিধি
সময়

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯-এর রাউণ্ড রবিন লীগের খেলাগুলি চলছে৷ ইংল্যাণ্ডের বিভিন্ন স্টেডিয়ামে৷ মোটামুটিভাবে খাতায-কলমে ভাল দলগুলি ঠিকমত শুরু করেছে৷  কিন্তু তার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা আশানুরুপ খেলতে পারেনি৷ ওয়েষ্ট ইণ্ডিজও বেশ কয়েকটি ম্যাচে নিজেদের ভুলে বিপক্ষের  কাছে হার স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে৷ তবে অষ্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যাণ্ড ও ইংল্যাণ্ড নিজেদের সুনাম অনুযায়ী পারফরম্যান্স করেছে৷ দিন যত গড়াচ্ছিল ততই স্পষ্ট হচ্ছিল অষ্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যাণ্ড ও ইংল্যাণ্ডই সেমিফাইনালে যাবে৷ প্রত্যেক দলের যখন পাঁচটি বা ছয়টি করে ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে তখন এই চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে৷ ঠিক এমন সময় ছন্দপতন ঘটে গেল৷ শক্তিশালী ইংল্যাণ্ড দল পরপর দুটি ম্যাচে হেরে সেমিফাইনাল খেলায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ল৷ বাঙলাদেশ, পাকিস্তান পয়েণ্ট তালিকায় এখন অনেক দলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে৷ আই সি সি-র নিয়ম অনুযায়ী মধ্যে রাউণ্ড রবিন লীগের শেষে পয়েণ্ট প্রাপ্তির বিচারে প্রথম চারটি দল যাবে সেমিফাইনালে৷ হিসাবে দেখা যাচ্ছে ১২ পয়েণ্ট সংগ্রহ না করা পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নয়৷ সেদিক থেকে বিচার করলে অষ্ট্রেলিয়া ভাল জায়গায় রয়েছে৷ তারা ভারত ছাড়া অন্য কোনও দলের কাছে পরাজিত হয়নি৷ ভারত অবশ্য অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যাণ্ড বা ইংল্যাণ্ডের থেকে কম ম্যাচ খেলে ভাল পয়েণ্ট সংগ্রহ করে ফেলেছে৷ অঘটন না ঘটলে সেমিফাইনালে ভারত যাচ্ছেই৷ সেবেত্রে বাকী দুটি দল কারা সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে তা নিয়ে ব্যাটে-বলে লড়াই বেশ জমে গেছে৷ বাঙলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা কিছুটা পেছনে থাকলেও এখন যেভাবে ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচগুলোতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে তাতে যে কোনও দলই সেমিফাইনাল খেহতে পারে৷ মনে রাখতে হবে ক্রিকেট অনিশ্চিতের খেলা৷ সেই কারণে ইংল্যাণ্ডকে শ্রীলঙ্কা হারানোর পর পরই অষ্ট্রেলিয়ার কাছেও ইংল্যাণ্ড পরাজিত হ’ল৷ ফলে বেশ চিন্তায় ইংল্যাণ্ড দল৷ এরই মধ্যে পাকিস্তান আবার নিউজিল্যাণ্ডকে পরাজিত করে বেশ ভাল জায়গায় উঠে এসেছে৷ কারণ বাঙলাদেশ ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল আফগানিস্তানকে হারাতে পারলেই তাদের সংগ্রহ হবে ১১ পয়েণ্ট৷ সেবেত্রে ইংল্যাণ্ড বা নিউজিল্যাণ্ড কত পয়েণ্টে তাদের ৯টি ম্যাচ শেষ করে সেটাই দেখার৷ ওদিকে ঈর্ষণীয় পারফরম্যান্স করে চলেছে বাঙলাদেশের খেলোয়াড়রা৷ এই দেশের শাকিবুল হাসান যে পারফরম্যান্স করে চলেছেন তাতে তিনি যে কোন দলের কাছেই বিপজ্জনক৷ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অলরাউণ্ডার এখন শাকিবুল৷ তার হাত ধরে পাকিস্তানকে হারাতে পারলে বাঙলাদেশ সেমিফাইনালে যেতে পারে৷ অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসেবে পাকিস্তান তখন ছিটকে যাবে বিশ্বকাপ থেকে৷ সেই কারণে আগামী দিনে পাকিস্তান, বাঙলাদেশ, ইংল্যাণ্ড, শ্রীলঙ্ক---এই চার দলের কাছে পয়েণ্ট টেবিলের চার নম্বরে থেকে সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে৷ তাই জুনের শেষের দিকের প্রত্যেকটি ম্যাচ বেশ উপভোগ্য হবে---এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই৷ এই ম্যাচগুলোতে পরাজিত দল বিশ্বকাপ থেকে একরকম বিদায়ই নেবে৷

ভারতীয় দলের পারফরম্যান্সের চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে দল হিসেবে ভাল খেললেও শিখর ধাওয়ানের চোটের কারণে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়া ভারতকে খানিকটা দুর্বল করেছে৷ তবে চোট-অঘাত সমস্যা খেলারই অঙ্গ৷ তাই মানসিকভাবে ভারতীয় দল বেশ চাঙ্গা৷ মাঠে চাপের মুখে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে আফগানিস্তানের হাত থেকে৷ যদিও এই ম্যাচে ভারতের ব্যাটিং ব্রিগেডকে আরও কিছু রান দেওয়ার দরকার ছিল৷ যদিও এই ম্যাচে বোলাররা খুব ভাল বল করে আফগানিস্তানকে পরাজিত করেছে৷

যাইহোক ২০১৯ বিশ্বকাপে কোন দল কি অবস্থাতে রয়েছে তার কিছু পর্যালোচনা করা যাক---

আফগানিস্তান ঃ বিশ্বকাপ থেকে পুরোপুরিভাবে ছিটকে গেছে এই দল৷ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাবার আর কোন আশা নেই এই দলের৷ বাকি দুটি যে খেলা  আছে তাতে হয়তো প্রতিদ্বন্ধিতা দলকে সেমিফাইনালে যেতে না দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে৷

সাউথ আফ্রিকা ঃ এবার দক্ষিণ অফ্রিকার সমীক্ষা করলেও সেই একই ফল৷ এই দলেরও কোন সম্ভাবনা নেই সেমিফাইনালে যাবার৷ এদের শেষ দুটি ম্যাচ শ্রীলঙ্কা ও অষ্ট্রেলিয়ার সাথে হবে৷ এই ম্যাচে জিতলেও এদের সেমিফাইনালে যাওয়া সম্ভব হবে না৷

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঃ যে দলকে নিয়ে বড় আশা করেছিল বিশ্বকাপ কারণ যে দলে গেল, রাসেলের মতো বিখ্যাত টি-২০ খেলোয়াড় থাকে তাদের নিয়ে সকলেই আশা করবে৷ কিন্তু সব আশা জল ঢেলে দিয়েছে এই দলের পারফর্মেন্স৷ এখন পর্যন্ত  যে ম্যাচ  গুলি জিতেছে তাতে যা পয়েন্ট পেয়েছে তাতে সেমিফাইনালে যাওয়াটা অনিশ্চিত৷

পাকিস্তান ঃ কয়েকটি ম্যাচ হারলেও মনে রাখতে হবে ইংল্যাণ্ডের মত হেভিওয়েট দলকে ৩৫০ রানের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে ম্যাচ জিতেছিল পাকিস্তান৷ নিউজিল্যাণ্ড ম্যাচ থেকে দলটিকে বেশ উজ্জীবিত দেখাচ্ছে৷ নিউজিল্যাণ্ডকে হারানোর পর প্রতিযোগিতায় টিঁকে রয়েছে পাকিস্তান৷

শ্রীলঙ্কা ঃ অনভিজ্ঞ শ্রীলঙ্কা দলের প্রধান ভরসা তাঁদের পুরোনো সৈনিক লাসিথ মালিঙ্গা৷ তাঁর অভিজ্ঞতায় ভর করে শক্তিশালী ইংল্যাণ্ডকে হারিয়ে তারা উঠে এসেছে লিগ টেবিলের  ছ’নম্বরে ৷ ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে  বাকি তিন ম্যাচে আবার অঘটন ঘটিয়ে  তাঁরা সেমিফাইনালে যেতে পারে কিনা সেটাই  এখন দেখার৷

বাংলাদেশ ঃ অভিজ্ঞতা  ও তারুণ্যের মিশেলে  দারুণ এক দল৷  অনেক বড় দলেরই  চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন শাকিবরা৷ শেষ দুই ম্যাচে তাঁরা মুখোমুখি  হবে পড়শি দেশ ভারত ও পারিস্তানের ৷ আর একটি ম্যাচে জয়পেলে শেষ চারে যাওয়ার সম্ভাবনা রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যাবে এই দেশের৷

ইংল্যাণ্ড ঃ এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পায়নি ইংল্যাণ্ড৷ তবে  এ বারের আয়োজক দেশকে  অনেক বিশেষজ্ঞই কাপ জয়ের দাবিদার  মনে করছেন৷ তবে শ্রীলঙ্কার মতো সহজ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হেরে   ও অষ্ট্রেলিয়ার কাছেও হেরে  অনেক চাপের মধ্যে রয়েছে এই দল৷ বাকি দুটি ম্যাচ রয়েছে  ভারত ও নিউজিল্যাণ্ডের বিরুদ্ধে যদি এই দুটি ম্যাচেও বিপর্যয় ঘটে  তাহলে এবারেও এদের  আর শেষের  চারে নাম লেখানো হল না৷

ভারত ঃ সবাই মনে করছেন এবারে বিশ্বকাপের সেরা দল ভারত৷ এমনটাই ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা৷ ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং সব বিভাগেই রয়েছেন একাধিক ভাল ক্রিকেটার৷ লিগ টেবিলেন এখন যা  পরিস্থিতি, তাতে ভারতের সেমিফাইনালে যাওয়ার জন্য দরকার দুটি জয়৷ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচ বাকি বিরাটদের৷ ক্রিকেট অনিশ্চয়তার  খেলা৷  যদি  বাকি ম্যাচে ভারত মুখ  থুবড়ে পরে  তাহলে তাকিয়ে থাকতে হবে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের দিকে৷

অষ্ট্রেলিয়া ঃ পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা  সব সময় প্রস্তুত থাকেন প্রতিবথর তারাই  এই খেতাব নেওয়ার জন্য৷  এক বছর নির্বাসন কাটিয়ে দুইজন (স্টিভ স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার) আবার ফিরে  আসতে এই দল আর প্রাণবন্ত হয়েছে৷  তাদের দলের শক্তি আরও বেড়ে গেছে৷ তার প্রমাণ মিলছে  ইংল্যাণ্ডে৷ সাতটি ম্যাচ খেলে ১২ পয়েন্ট  সংগ্রহ করে ফেলেছে এখন প্রয়োজন শুধু দরকারএকটা ম্যাচ জেতার৷ তাহলেই শেষের চারে এই অনায়াসে পৌঁছে যাবে৷

নিউজিল্যাণ্ড ঃ প্রতি বিশ্বকাপেই এই দল প্রথমের দিকে ভাল শুরু করে কিন্তু শেষের দিকে এর অবস্থা  তেমন ভাল থাকে না৷ এখনও পর্যন্ত নিউল্যান্ড প্রতিটি ম্যাচ জিতে নিজেদের সবথেকে ওপরে রাখার চেষ্টা করে চলেছে  এখন তাদের একটি ম্যাচ জিততে হবে সেমিফাইনালে যেতে হলে৷ অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যাণ্ডের  বিরুদ্ধে  বাকি রয়েছে ম্যাচ এখন দেখার পালা কি হতে চলেছে এই দলের সাথে৷

এই বিশ্বকাপে স্টেডিয়ামগুলোর চাকচিক্য থাকলেও স্পোটিং উইকেট কোনও মাঠেই দেখা যায়নি৷ পিচ এমনই হবে যেখানে ব্যাসম্যান ও বোলার উভয়েই সুবিধা পাবে৷ ৫০ ওভারের ম্যাচে এটাই স্বাভাবিক৷ তবে ক্রিকেট অনিশ্চিতের খেলা, যে কোনও পরিস্থিতিতে যে কোনও দল বিপক্ষকে ছাপিয়ে যাবে---এই জন্যেই মাঠে আসা৷ তাই মাঠ, পিচ, পরিবেশ যাই হোক না কেন যোগ্য দলের হাতেই বিশ্বকাপ উঠুক---এই আশা নিয়েই ক্রিকেট পাগল মানুষ মাঠে যাচ্ছেন, টিভির পর্দায় চোখ রাখছেন---এখানেই ক্রিকেটের সার্থকতা৷