গত ১৩,১৪ ও ১৫ জুলাই উত্তর ২৪ পরগণার বঁনগা শহরে আনন্দমার্গের এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়৷ আনন্দমার্গের এই প্রথম ডায়োসিস স্তরীয় সেমিনারে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, কলকাতা, নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ থেকে দুই শতাধিক আনন্দমার্গী যোগদান করেছিলেন৷ এই সেমিনারে প্রশিক্ষক ছিলেন আচার্য তন্ময়ানন্দ অবধূত ও আচার্য সর্বজয়ানন্দ অবধূত৷ এই সেমিনারে আলোচ্য বিষয়গুলি ছিল ‘তারকব্রহ্ম’, ‘সংগ্রামে বৈপরীত্যম্’, ‘সুসংবদ্ধ কৃষি’ ও ‘সামাজিক সুবিচার’৷
‘ব্রহ্মসদ্ভাব’ বিষয়ের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে আচার্য তন্ময়ানন্দ অবধূত বলেন, মানবজীবনের পরম লক্ষ্য ‘ব্রহ্ম’৷ ব্রহ্মকে জীবনের চরমলক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে মানুষকে তার দৈহিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশ ঘটাতে হবে৷ এজন্যে অষ্টাঙ্গিক যোগসাধনার নিয়মিত অনুশীলন একান্ত প্রয়োজন৷ তার সঙ্গে সঙ্গে নিপীড়িত মানবতার সেবায় আত্মোৎসর্গ করতে হবে৷
এইভাবে খাঁটি মানুষ হতে হবে৷ বর্তমান পৃথিবীটা সমস্যা জর্জরিত সমস্যা সংকুল৷ এই সমস্যা সমাধান করতে গেলে চাই মজবুত মানুষ যার ভেতরটা একদম খাঁটি৷ সাধনা, সেবা ও ত্যাগের মধ্য দিয়েই এমনি মানুষ তৈরী হবে৷
আচার্য তন্ময়ানন্দ অবধূত ‘সুসংবদ্ধ কৃষি’র ওপর আলোচনা করতে গিয়ে প্রাউটের ভিত্তিতে বর্তমান কৃষিসমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের কথা বলেন৷
আচার্য সর্বজয়ানন্দ অবধূত, ‘সংগ্রাম বৈপরীত্যম্’ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ‘কীর্তনের মাহাত্ম্য সম্পর্কে বলেন, ‘সাধারণতঃ মানুষের স্বভাব হ’ল দু’তিন জন একসঙ্গে জুটলে পরনিন্দা-পরচর্র্চ করে৷ এতে মনের অধোগতি হয়৷ এখানে ‘সংগ্রামে বৈপত্যিম্’ নীতিতে মানুষের উচিত একত্রিত হয়ে যত বেশী পারে ঈশ্বরের নাম কীর্ত্তন করা৷ তাতে মনের ঊধর্বগতি হবে, মন পবিত্র হবে ও মনের সমস্ত ক্লেশ দূরীভূত হবে৷তাই কীর্ত্তন একাধারে সর্ব ক্লেশ বিদূরক ও সাধনায় সহায়ক৷
বনগাঁ আনন্দমার্গ সুকলে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারের প্রথম দিনে আনন্দমার্গের পক্ষ থেকে এক বর্র্ণঢ্য শোভাযাত্রা সমস্ত বনগাঁ শহর পরিক্রমা করে ৷ মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত পথসভায় আনন্দমার্গের আধ্যাত্মিক ও সেবামূলক আদর্শের বিভিন্ন দিকের ওপর বক্তব্য রাখেন শ্রী সন্তোষ বিশ্বাস, অবধূতিকা আনন্দ গতিময়া আচার্য, শ্রী গৌরাঙ্গ ভট্টাচার্য, আচার্য তন্ময়ানন্দ অবধূত প্রমুখ৷ তাঁরা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, আনন্দমার্গ এক নোতুন সর্বাত্মক শোষণমুক্ত সর্বাঙ্গসুন্দর মানব সমাজ গড়তে চায়৷ তাই মানুষের মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্যে আনন্দমার্গে যেমন অষ্টাঙ্গিক যোগসাধনা শেখানো হচ্ছে, তেমনি আনন্দমার্গের এই সর্বাত্মক সেবাযজ্ঞে সর্বসাধারণকে যোগদানের জন্যে আহ্বান জানানো হচ্ছে৷
এই সেমিনারে আনন্দমার্গ দর্শন ও আদর্শের ওপর আলোচনা ছাড়াও নিয়মিত ভজন, কীর্ত্তন ও মিলিত সাধনার মধ্য দিয়ে ভক্তিভাব মিশ্রিত এক সুন্দর আধ্যাত্মিক পরিবেশ গড়ে ওঠে৷
এই সেমিনার উপলক্ষ্যে আনন্দমার্গের স্থানীয় ইয়ূনিটের পক্ষ থেকে বস্ত্র বিতরণেরও ব্যবস্থা করা হয়৷ এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আচার্য সর্র্বনন্দ অবধূত৷ সমগ্র সেমিনার অনুষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন অবধূতিকা আনন্দরেখা আচার্যা ও অবধূতিকা আনন্দ গতিময়া আচার্যা৷