বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সংস্কার জনগণকে নিরাশ করেছে

লেখক
প্রভাত খাঁ

আর বি আই-এর  ‘কাস্টোমার কনফিডেন্স সার্ভের  রিপোর্ট  মূলত চারটে বিষয়কে তুলে আনে, যেমন  আর্থিক স্থিতি, আয়, মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্ব৷  এই ব্যাপারে ৬টি মহানগরীর সমীক্ষা দেশের মানুষকে আশাহত করেছে৷

সাধারণ মানুষের মনে মোদি সরকারের প্রতি অসন্তোষ বেড়েছে৷  এটা সমীক্ষায় স্পষ্ট৷ সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কারকে জনসাধারণ মেনে নিতে তো পারেই নি বরং ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে তাদের ভয় ও দুশ্চিন্তা অনেকাংশে বেড়ে গেছে৷ 

আর্থিক অবস্থা ঃ দেশের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে বিজেপি সরকার যে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে সেটা জনসাধারণের জীবনে কিন্তু তিলমাত্র  আসেনি, সেটা এসেছে ধনী ব্যষ্টিদের জীবনে৷ অনেকে বিমুদ্রাকরণের সুযোগ নিয়ে কোটি কোটি কালো টাকাকে সাদায় পরিণত করেছে ৷ এই সুযোগের অংশীদার সাধারণ মানুষ নয় ৷ মোদি জামানা আশাবাদীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৯.৫ শতাংশ, সেটা কমে হয়েছে ৩৫.৬ শতাংশ৷ বর্তমান নিয়ে চিন্তিত মানুষের সংখ্যা ২৫.৫ শতাংশ মানুষ৷ আর দারিদ্রসীমার নীচে মানুষের দুশ্চিন্তার তো শেষ নেই৷ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মধ্য বিত্তের জীবনে নেমে এসেছে ভয়ঙ্কর অনিশ্চিততার ভাবনা৷

 আয় ঃ মোদীর শ্লোগান হল সকলের একসাথে বিকাশ ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ অভিযানে  দেশের জনসাধারণের আয় কোথাও বাড়েনি৷ শুধু কেন্দ্রীয় সরকার , কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী, মন্ত্রী ও এম.পিদের মাসিক সাম্মানিক বেতন বাড়িয়েছেন৷ বহুগুণ৷ সেই অনুপাতে রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের ও সরকারী সাহায্য প্রাপ্তদের বেতন বাড়ে নি৷  আর বেসরকারী ক্ষেত্রে নাগরিকদের আয়ের কথা ছেড়েই দেওয়া হল৷  দিন দিন চরম বেকার সমস্যায় আর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে মানুষ দিশেহারা৷ ভর্তুকী বিভিন্ন ক্ষেত্রে তুলে দেওয়াতে সাধারণ পরিবারগুলির অবস্থা শোচনীয় হয়েছে৷ নোট বাতিলের ফলে  আয় বাড়বে বলে যারা আশাবাদী ছিলেন তাদের সংখ্যা  ৪৮.৬ শতাংশ কমেছে৷ বাস্তবে কিন্তু সুফল ভোগ করছেন ১৩০ কোটি মানুষের মধ্যে  অতিসামান্যমাত্র৷

মূল্যবৃদ্ধি ঃ মোদির রাজত্বে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির এতটাই হু হু করে বাড়ছে যে  তাতে আগামী দিনে যে আরোও বাড়বে এমন আশঙ্কা করছে প্রায় ৮৫.৮ শতাংশ মানুষ৷ মানুষের আয়, বিশেষ করে ব্যাঙ্কের সুদ কমেছে , জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাজারে বাড়ছে তার উপর সরকারী কোন নিয়ন্ত্রণই নেই৷ লোভী ব্যবসাদারগণ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আটকে রেখে বাজারে জোগান কমিয়ে দাম বাড়িয়ে যেন এই শাসন ব্যবস্থাকে শোষণের স্বর্গরাজ্য করে তুলেছে৷  দুঃখের কথা রাজ্য সরকারের হুঁশিয়ারীকে তারা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে চলেছে৷ 

বেকারত্ব ঃ ক্ষমতায় এসে বিজেপি সরকার বাজার গরম করে চলেছেন৷  শিল্পে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সকলের বেকার সমস্যা দূরীকরণ ও সকলের পেটে সরকার অন্ন জোগাবেন এই হল শ্লোগান৷ কিন্তু বাস্তবে সবটা শুধু বাগাড়ম্বর ছাড়া  কিছু নয়৷ এ ব্যাপারে মোদি সরকারের প্রতি  সাধারণ মানুষে প্রচন্ড অনাস্থা দেখা দিয়েছে৷ মানুষ আশা নিয়ে এই সরকারকে গদিতে এনেছিল তারা কিন্তু তিন বছরে একেবারে বিফল মনোরথ হয়েছে৷

এই রিপোর্ট বলে দিচ্ছে এই সরকার কৃষি, শিল্প, ব্যবসা ও বাণিজ্য --- কোনো ক্ষেত্রেই,  সরকারী ও বেসরকারী ক্ষেত্রেই কোন দিকেই কর্মসংস্থানের  বৃদ্ধি ঘটেনি৷  ২০১৬ সালে মার্চ-এর সমীক্ষা রিপোর্টে  ৩৪.৩ শতাংশ মানুষ আশা করেছিল কর্মসংস্থান বাড়বে৷ এবারের সমীক্ষায় সেটা কমে ৩২.৬ শতাংশ হয়েছে৷ ভবিষৎ নিয়ে যারা চিন্তায় ছিল তাদের সংখ্যা বেড়েছে ২১.২ শতাংশ ৷ আর  দেশের সিংহভাগ মানুষ ভাবতেই পারে না , তাদের অবস্থা কি হবে৷

মোদ্দা কথা হলো আর বি আইয়ের সমীক্ষা বিজেপি-এর কাছে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বিরোধীপক্ষ ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংসদের ভিতরে ও বাহিরে এই সমীক্ষা রিপোর্ট নিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে তাল খঁুজছে৷   ভারত পৃথিবীর গরিব দেশের মধ্যে অন্যতম হিসাবে  চিহ্ণিত ৷ দীর্ঘ ৭০ বছরের রাজনৈতিক স্বাধীনতায় কেন্দ্র ও রাজ্য শাসনে  যে দলগুলি  শাসন চালিয়ে আসছে তাতে দেখা গেছে  রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে দেশ কাবু হয়ে পড়েছে৷ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলও নেতা নেত্রী এমন সব দুর্নীতিতে আটকে পড়েছে যেটা দেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পক্ষে চরম লজ্জার কারণ৷ বর্তমানে চরম অপরাধে যুক্ত ব্যাষ্টিরা রাজনীতির ছত্রছায়ায় মাথা গুঁজে আছেন৷ তাঁরাই দলভাঙ্গাভাঙ্গি করে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করছে৷ নির্র্বচন কমিশন-এর রিপোর্ট সে কথাই বলে৷  সারা ভারতের  উত্তর ও দক্ষিণের প্রভাবশালী নেতা ও নেত্রী মানে তো কোটি কোটি টাকার মালিক৷ সত্য কথা বলতে কী বর্তমান রাজনীতিতে সর্বভারতীয় সর্বজন শ্রদ্ধেয় কোন ব্যষ্টিত্বকে যে খঁুজে পাওয়া যায় না৷  সেই গুটি কয়েক পরিবার ও বৃদ্ধ নেতা-নেত্রী আছেন, তাঁরা রাজত্ব করে চলেছেন বংশানুক্রমে৷ নোতুন কোনও বিশেষ মুখ আজ আর দেখা যায় না৷ মামলা মোকদ্দমা গুরুতর অভিযোগে অধিকাংশ অভিযুক্ত৷ এদেশের গণতন্ত্র আজ নোংরা দলতন্ত্রে কলুষিত৷ অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারীতে অধিকাংশ দল কোনো না ভাবে জড়িয়ে আছে৷ প্রকৃত দেশসেবার বড়ই অভাব৷ দেশের কল্যাণের চেয়ে দলের স্বার্থটাই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তাই দেশ আজ বড়ো সংকটের সম্মুখীন৷ গণতন্ত্র তখনই সার্থক যখন প্রতিটি নাগরিকের সমান মর্র্যদাকে মান্যতা দেওয়া হবে৷ সামাজিক ও আর্থিক বৈষম কমে আসবে নাগরিকদের মধ্যে ৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে গরীব দেশে কারোর লক্ষাধিক টাকা মাসিক বেতন আর কোন নাগরিকের অন্ন-বস্ত্র শিক্ষা-চিকিৎসা ও বাসস্থানের কোনো গ্যারান্টিই নেই ৷ তাহলে কী করে বলা যায়, এদেশ একটি সার্থক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র?