প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী যতই ঘুরে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিক, কিন্তু অর্থনীতি সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলির কণ্ঠে ভিন্ন সুর৷ ২০২০ সালে অর্থনীতির গতি মন্থরই থাকবে ও বর্ষশেষে লক্ষমাত্রার অনেক নীচে হবে বৃদ্ধির হার৷
বিশ্বব্যাঙ্ক আই.এম.এফ. সহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধির হার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে ও কেন্দ্রীয় সরকারের আনুমানিক লক্ষ্য মাত্রার ধারেকাছে পৌঁছবে না বলে সতর্ক করেছে৷ শুধু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠাগুলি নয়, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও সরকারী প্রতিষ্ঠানও সমীক্ষায় এই আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেছে৷
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা ‘মুডিজ ইনভেস্টার্স সার্ভিস’ জানিয়েছে ২০২০ বর্ষ শেষে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি ৫.৪ শতাংশের কাছাকাছি হবে যা লক্ষ্য্য মাত্রার অনেক নীচে৷ নভেম্বর মাসের এক সমীক্ষায় মুডিজ অবশ্য জানিয়েছিল বর্ষশেষে বৃদ্ধির হার ৬.৬ থাকবে৷ তবে সম্প্রতি মুডিজ ‘গ্লোবাল ম্যাক্রো আউটলুক’ গবেষণাপত্রে বর্তমান সমীক্ষার কথা জানিয়েছেন৷ মুডিজের সমীক্ষায় বলা হয়েছে করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের অর্থনীতি অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে৷ ভারতেও সেই প্রভাব পড়েছে৷ তবে সেই সঙ্গে ভারতের আভ্যন্তরীণ আর্থিক নীতিকেও তারা দায়ী করেছে৷
বিশিষ্ট প্রাউট তাত্ত্বিক আচার্য মন্ত্রেশ্বরানন্দ অবধূত কলকাতায় ‘অর্থনৈতিক গণতন্ত্র’ বিষয়ের ওপর এক আলোচনায় বলেন প্রাউটের পথে বিকেন্দ্রীত অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে রূপ দিলে তবেই তবেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে৷ বর্তমান পুঁজিবাদের স্বার্থ নির্ভর কেন্দ্রীত অর্থনীতির পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়৷ পুঁজিবাদের দিন শেষ হয়ে আসছে৷ এই অর্থনৈতিক পরিকাঠামোয় সাধারণ মানুষের নূ্যনতম প্রয়োজনপূর্ত্তি সম্ভব নয়৷ বর্তমান শাসক দল মুখে সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষার কথা বলে কিন্তু পুঁজিবাদের স্বার্থ রক্ষা করে৷ এ যেন ‘লক্ষ্য পর্বত চূড়ায় ওঠার---ছুটছে সাগর পানে৷’ ভারতের অর্থনীতির এখন এই দশা৷
আচার্য মন্ত্রেশ্বরানত্রন্দ অবধূত বলেন প্রাউটের নীতিতে অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের সার্বজনীন লক্ষ্য হচ্ছে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে নূ্যনতম প্রয়োজনপূর্ত্তির গ্যারাণ্টি দেওয়া৷ অর্থাৎ প্রতিটি মানুষের জীবন ধারণের নূ্যনতম প্রয়োজন---অন্ন,বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা৷ অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমেই এটা করা সম্ভব৷ এর জন্যে প্রয়োজন একাধিক সামাজিক-অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা৷
তিনি আরো বলেন---অর্থনৈতিক গণতন্ত্রে আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে দুটি ভাগে ভাগ করতে হবে৷ প্রাউটের নীতি হচ্ছে রাজনৈতিক কেন্দ্রীকরণ ও অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ৷ বর্তমানে মানুষের রাজনৈতিক ক্ষমতা কিছুটা থাকলেও অর্থনৈতিক ক্ষমতা সম্পূর্ণটাই পুঁজিবাদীরা কুক্ষিগত করে রেখেছে৷ প্রাউটের পরিকল্পনায় রাজনৈতিক ক্ষমতা রাখতে হবে নীতিবাদীদের হাতে, অর্থনৈতিক ক্ষমতা ন্যস্ত থাকবে জনসাধারণের হাতে৷
প্রাউটিষ্ট ইয়ূনিবার্সালের কেন্দ্রীয় সাধারণ সচিব আচার্য রবীশানন্দ অবধূত বলেন---রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাশ অর্থনীতির বেহাল দশা থেকে উঠে আসতে পরিকাঠামোর সংস্কারের কথা বলেছেন৷ কিন্তু যে কাঠামো পুঁজিবাদের ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে তার সংস্কার করে জনসাধারণের কাছে আর্থিক সুফল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়৷ অর্থনৈতিক গণতন্ত্রকে ভিত্তি করে বিকেন্দ্রীত অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে রূপ দিতে নতুন আর্থিক কাঠামো তৈরী প্রয়োজন৷