ভারতীয় পেসারদের মধ্যে বুমরা গড়তে চলেছে  এক  নতুন  ইতিহাস

সংবাদদাতা
ক্রীড়া প্রতিনিধি
সময়

ভারতীয় পেসার মানেই তাঁর কাজ ছিল নতুন বলটার পালিশ তুলে স্পিনারদের হাতে তুলে দেওয়া বা পিচে স্পিনারদের জন্যে ফুট প্রিন্ট তৈরি করা৷ তার মাঝে কিছু কিছু  পেসার নিজেদের দক্ষতায় অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে উঠেছিলেন৷ কিন্তু  কখনওই ওয়েষ্ট ইন্ডিজ, ইংল্যাণ্ড, অস্ট্রেলিয়া বা পাকিস্তানের পেসারদের মতো ব্যাটসম্যানদের মনে ভয় তৈরি করতে পারেন নি৷ কিন্তু সময় পাল্টেছে৷

এখন ছবিটা একেবারে বদলে গিয়েছে৷ ভারতের পেস ব্যাটারি এখন  সব সময় চার্জড আপ৷ ইশান্ত গেলে বুমরাহ আসে, বুমরাহ গেলে শামি আসে, রিজার্ভে তৈরি থাকেন উমেশও৷  নতুনদের মধ্যে নভদীপ, খালিদরাও তৈরী হচ্ছেন ভবিষ্যতের জন্যে৷ এখন ভারতীয় পেস অ্যাটাক নিয়ে চিন্তা করতে হয় ইংল্যাণ্ড, অস্ট্রেলিয়াকে৷ এখন শামিরাও রক্তচক্ষু দেখান ব্যাটস্ম্যানদের৷

ভারতীয় পেসারদের মধ্যে দ্রুততম পঞ্চাশ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ত্ব এতদিন ছিল শামির দখলে৷ কিন্তু অ্যান্টিগায় সেই রেকর্ড ছিনিয়ে নিলেন বুমরা৷ ভারতের  এই তরুন ডানহাতি পেসারের প্রশংসা করেছেন বহু প্রাক্তন পেসার৷ কিন্তু দেশের বাকি পেসারদের তুলনায় ঠিক কতটা এগিয়ে রয়েছেন বুমরা? কী বলছে রেকর্ড? দেখে নেওয়া যাক৷

কপিলদেব - বিশ্বকাপ জয়ী  অধিনায়ক ছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার৷ তাঁকে বাদ দিয়ে ভারতীয় পেসার তালিকা তৈরী হতেই পারে না৷ ১৩১ টেষ্টে তিনি নিয়েছিলেন ৪৩৪ উইকেট৷ তাঁর বল ভয় ধরাতো  ব্যাটস্ম্যানদের৷ যদিও সেইভাবে  পার্টনার পাননি তিনি৷

টেষ্টে ৫০ উইকেট নিতে সময় নিয়েছিলেন ১৬ টি টেষ্ট ৷ কানপুরে অষ্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিনি এই কৃতিত্ব স্পর্শ করেন৷ তাঁর পঞ্চাশতম শিকার ছিলেন  অজি ব্যাটসম্যান ব্রুস ইয়ার্ডলি৷

শ্রীনাথ - ১৯৯১ সালে আর এক পেসারের আবির্ভাবে ঘটে ভারতীয় ক্রিকেটে৷ ব্রিসবেনে  অষ্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথমবার দেখা যায় তাঁকে ভারতীয় জার্সিতে৷ ১৯৯৯ সালে ইডেনের এক ম্যাচে ১৩ উইকেট নেওয়া শ্রীনাথ ভারতের হার বাঁচাতে ব্যর্থ হন৷ সেদিন তিনি যদি সঙ্গী পেতেন, তবে হয়ত ফল অন্য হলেও  হতে পারত৷ পঞ্চাশটি উইকেট নেওয়ার কীর্তি ছুঁয়েছিলেন৷

জাহির খান- ভারতীয় ক্রিকেটের সেরা বাঁহাতি পেসার তিনিই৷ তাঁর অবসরের পরে আর কোনও বাঁহাতি পেসার দাগ কাটতে পারেন নি ভারতীয় ক্রিকেটে৷  ৯২ ম্যাচে ৩১১টি উইকেট নেন তিনি৷ কপিল ছাড়া তিনিই একমাত্র ভারতীয় পেসার যিনি  তিনশোর বেশি উইকেট পেয়েছিলেন৷

তবে পঞ্চাশটি উইকেট নিতে তিনিও তাঁর পূর্বসুরির মতো নেন ১৯টি টেষ্ট৷ সৌরভের অধিনায়কত্বে ভারতীয় পেসারদেরও গতিও যে ভয় দেখাতে  পারে, তাঁরাও যে চোখে চোখে রেখে ব্যাটসম্যানদের শিরদাঁড়ায় ঠাণ্ডা স্রোত নামাতে পারেন তা বুঝিয়ে ছিলেন জাহির৷ পরবর্তী সময় যা রপ্ত করেন শামিরা৷

ইশান্ত শর্মা - এখনকার ভারতীয় পেসারদের মধ্যে তিনি অভিজ্ঞতম৷ ২০০৭ সালে তাঁর আবির্ভাব ঘটে টেষ্ট ক্রিকেটে৷ লম্বা চুলের  ইশান্ত এখন অনেক বেশি পরিণত ও ভয়ঙ্কর৷ একটা সময় খেই হারিয়ে  ফেললেও  আবার তিনি নিজেকে প্রমাণ করে ফিরে  আসেন টেষ্ট ক্রিকেটে৷

এই মূহূর্তে ইশান্তের সংগ্রহ ২৭৭টি উইকেট৷ ৯২টি টেস্ট খেলা  দিল্লি পেসার তিনশো টেস্ট নিয়েছিলেন ৫০টি উইকেট নিতে৷

মহম্মদ শামি- বুমরার আরেক সঙ্গী টেষ্ট কেরিয়ার শুরু করেন ২০১৩ সালে৷ প্রথম ম্যাচেই ইডেনে নয় উইকেট নিয়ে সারা ফেলে দিয়েছিলেন বাংলার শামি৷ ইতিমধ্যেই তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ১৫১টি উইকেট৷ সময় নিয়েছেন মাত্র ৪২ টি টেষ্ট৷

শুধু প্রথম টেস্টে ৯ উইকেট নেওয়াই নয়, এতদিন পেসারদের  মধ্যে দ্রুততম পঞ্চাশ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব ছিল তাঁর দখলে৷ মাত্র ১৩টি টেষ্টে তিনি পৌঁছে যান সেই মাইল ফলকে৷ যদিও সতীর্থ বুমরা তা ভেঙে দিলেন এই সিরিজে৷

তবে সব মিলিয়ে ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে তাড়াতাড়ি পঞ্চাশটি টেষ্ট উইকেট নিয়েছিলেন অশ্বিন৷ মাত্র  ন’টি টেস্টে এই মাইলস্টোন ছুঁয়েছিলেন তিনি৷