ভারতীয় ফুটবলে নজির গড়লেন দীপেশ মুর্মু

সংবাদদাতা
ক্রীড়াপ্রতিনিধি
সময়

  ক’জন তাঁর নাম শুনেছেন, কতজন তাকে চেনেন জানা নেই৷ কিন্তু নামটা মনে রাখাই ভাল৷ কারণ, দীপেশ মুর্মূ এখন এমন এক কীর্তির অধিকারী,সারা ভারতের সর্বকালের ফুটবল ইতিহাসে কারও নেই৷ কলকাতা ফুটবল লিগ থেকেই ভারতীয় ফুটবলে নতুন নজির গড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন তিনি৷ ইউনাইটেড স্পোর্টসের দীপেশ মুর্মু৷  সব চেয়ে কম সময়ের মধ্যে তিনটি গোল করে হ্যাটট্রিকের নজির এখন ২২ বছরের দীপেশের দখলে৷ শুধু কলকাতা নয়, ভারতীয় ফুটবলেও৷ চার মিনিটে হ্যাটট্রিক করেন তিনি৷ পাঁচ মিনিটে করেন চার গোল৷ গত ২৫ জুলাই সিএফসির বিরুদ্ধে ৮৬, ৮৭, ৮৯ ও ৯০ মিনিটে গোল করেন হুগলির বলাগড়ের ছেলে৷

তবে গোল করে আনন্দে যে দৌড় তিনি সে দিন দৌড়েছিলেন, তাঁর পিছনে লুকিয়ে আছে কঠিন সংগ্রামের কাহিনী৷ বলাগড়ের একতানপুর গ্রাম থেকে যে স্বপ্ণের সূত্রপাত হয়েছিল৷ যেখানে ফুটবল শেখানোর কোনও কোচ নেই৷ পাড়ার বড় দাদারাই কোচ৷ কুঁড়ে ঘরের মধ্যে ফুটবল স্বপ্ণকে ঁকড়ে বড় হয়েছে দীপেশ৷ দুরন্ত সব গোল করার স্বপ্ণ৷ তবে এখানেই থামতে চান না দীপেশ৷ পরতে চান ভারতের জার্সি৷ কোন ক্লাব প্রিয়? এক কথায় উত্তর এল, মোহনবাগান৷ প্রিয় ফুটবলার? লিস্টন কোলাসো৷ তাঁর কথায়, ‘‘ছোটবেলা থেকে সবুজ-মেরুন জার্সি ভালোবাসি৷ ইস্টবেঙ্গল কখনও বেশি টাকার প্রস্তাব নিয়ে এলেও যাব না৷’’ ফুটবলারদের মধ্যে আদর্শ কে? উত্তর আসে, ‘‘বিশ্ব ফুটবলে আর্জেন্টিনার লিয়োনেল মেসি৷ ভারতীয়দের মধ্যে সুনীল ছেত্রী৷’’ কাতারে মেসি যখন বিশ্বকাপে চুম্বন করছেন, আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলেন৷ সেই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়, বললেন দীপেশ৷ বাড়িতে থাকেন বাবা, মা, দাদা ও ভাই৷ বাবার এখন শরীর অসুস্থ বলে কাজ করতে পারেন না৷ মাঠে দিনমজুরের খাটতেন৷ শুরুর দিন নিয়ে বললেন, ‘‘আমি জিরাট ফুটবল কোচিং ক্যাম্প থেকে উঠে এসেছি৷ তার পরে ত্রিবেণী কোচিং সেন্টারে খেলেছি৷ সেখান থেকে ট্রায়াল দিয়ে ইউনাইটেড স্পোর্টসে আসি৷ প্রথমে যুব দলে সুযোগ পাই৷ তার পরে সিনিয়র দলে সই করি৷ লক্ষ্য কী? দীপেশের জবাব, ‘‘আমাদের পাড়ার মাঠে কোচিং ক্যাম্প তৈরি করতে চাই৷ উপযুক্ত প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে যাতে গ্রামের ছেলেরা আরও বেশি করে উঠে আসতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে চাই৷’’ ইউনাইটেড কোচ স্টিভ হারবটস্‌ বলছেন, ‘‘দীপেশ আমার সঙ্গে দু’বছর ধরে আছে৷ আমি জানতাম ও ভাল খেলবে৷ কিন্তু এখনও ওকে অনেক দূর যেতে হবে৷ নিবিড় অনুশীলনের মধ্যে দিয়েই ওকে সাফল্যের রাস্তা খুঁজে পেতে হবে৷’’ যোগ করেন, ‘‘আমি মনে করি ওকে আরও ধারাবাহিক হতে হবে৷ তবেই লোকে ওকে মনে রাখবে৷ তবে এটা বলতেই হবে যে, ও খুব পরিশ্রম করে৷’’ অখ্যাত একতানপুর গ্রামকে অনন্য ফুটবল রেকর্ডের আলোয় আলোকিত করে তুলেছেন দীপেশ মুর্মু৷