নিজস্বসংবাদদাতা ঃ স্বাধীন ভারতেও বাঙালীকে তার ভাষা সংস্কৃতির মর্যাদা রক্ষার জন্যে জীবন দিতে হয়েছে, মরণপণ সংগ্রাম করতে হচ্ছে৷মানভূমের বঙ্গভুূক্তি আন্দোলন ও বরাক বাঙলায় ভাষা আন্দোলন ইতিহাসে সংগ্রামী বাঙালীর এক ঐতিহাসিক অধ্যায়৷ স্বাধীনতার পরপরই বিহার ও অসমের সঙ্গে যুক্ত বাঙলার অঞ্চলের বাঙালীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ শুরু করে স্বাধীন ভারত সরকার ও অসম বিহার রাজ্য সরকার৷ বিহারে মানভূম জেলায় আন্দোলন শুরু হয় মানভূমের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করার দাবীতে৷ অসমে বরাক বাঙলায় শুরু হয় বাংলা ভাষার অধিকার অর্জনের আন্দোলন৷ তৎকালীন বিহার সরকার ও অসম সরকার কেন্দ্রীয় মদতে বর্বরোচিতভাবে সেই আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করে৷ মানভূমের সাংসদ ভজহরি মাহাত সেদিন সংসদে বিহার সরকারের বর্বরতার নজির তুলে ধরে মানভূমকে বিহার থেকে পৃথক করার দাবী তুলেছিলেন৷ শত অত্যাচারেও আন্দোলন দমন করতে না পেরে মানভূমের এক অংশ পুরুলিয়া মহকুমা পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করা হয়৷
বরাক বাঙলার আন্দোলন দমনে সেদিন ভারত সরকার ও অসম সরকার ব্রিটিশ সরকার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকের বর্বরতাকেও ম্লান করে দিয়েছিল৷ ১৯৬১ সালের ১৯শে মে মাতৃভাষা বাংলা ভাষার অধিকার অর্জনের দাবী নিয়ে শিলচর স্টেশন সংলগ্ণ স্থানে সমবেত হয়েছিল লক্ষাধিক মানুষ৷ শান্তিপূর্ণ সেই জমায়েত বর্বরোচিতভাবে গুলি চালিয়ে ১১জন তরুণ তরুণীকে হত্যা করে অসম সরকার৷ ওইদিন পুলিশের গুলিতে নিহত হয় কমলা ভট্টাচার্য, শচীন্দ্রচন্দ্র পাল, কানাইলাল নিয়োগী, হিতেশ বিশ্বাস,তরণী দেবনাথ, সুকমল পুরকায়স্থ,চণ্ডীচরণ সূত্রধর, সুনীল সরকার, কুমুদরঞ্জন দাস, সতেন্দ্র দেব, বীরেন্দ্র সূত্রধর৷
পশ্চিমবঙ্গ ঝাড়খণ্ড সহ সমস্ত বাঙালী অধ্যুষিত অঞ্চলে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হচ্ছে ১৯শে মের ভাষা শহীদদের এই দিন আমরা বাঙালী সংঘটন কলিকাতা শ্যামবাজার চেতলা, বারাসাত, কাঁকিনাড়া, ব্যারাকপুর সহ বৃহত্তর কোলকাতায় নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রদ্ধার সঙ্গে ভাষা শহীদদের স্মরণ করে৷ এছাড়া প্রতিটি জেলার আমরা বাঙালী কর্মীরা ভাষাদিবস পালন করে৷ শিলচর শহরেও এদিন আমরা বাঙালী ও বিভিন্ন গণসংঘটন ভাষা শহীদ স্মরণে নানা অনুষ্ঠান করেন৷
অসমে বাংলা ভাষা ব্যবহারে সাংবিধানিক অধিকার থাকলেও অসম সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের মদতে বাঙালীদের সেই অধিকার হরণ করার চক্রান্তে লিপ্ত৷ তাই আগামীদিনে ভারতে বিশেষ করে পূর্ব ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে বৃহত্তর ভাষা আন্দোলন শুরু হতে পারে৷