ভুয়ো পাসপোর্ট-কাণ্ডে আরও এক জনকে গ্রেফতার করেছে লালবাজার৷ ধৃতের নাম দীপঙ্কর দাস৷ গত মঙ্গলবার রাতে তাকে পর্ণশ্রী থানা এলাকার বেচারাম চ্যাটার্জি স্ট্রিট থেকে ধরে লালবাজারের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)৷ দীপঙ্করকে জেরা করে হরিদেবপুর থানা এলাকার মতিলাল গুপ্ত রোডের একটি অফিসে হানা দিয়ে গোয়েন্দারা প্রচুর জাল নথি, নথি তৈরিতে ব্যবহৃত কম্পিউটার, প্রিন্টার এবং অন্যান্য সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করেছেন৷ একই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সিল এবং ৩৬টি ভারতীয় পাসপোর্টের ফোটোকপি৷ মিলেছে শেনগেন এবং ব্রিটেনের ভিসাও৷ সেই সঙ্গে এ দিন উত্তর ২৪ পরগনার বেশ কয়েকটি জায়গাতেও অভিযান চালান তদন্তকারীরা৷ এক তদন্তকারী আধিকারিক জানান, দীপঙ্করের কাজ ছিল ভুয়ো পাসপোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নথি, যেমন--- আয়কর রিটার্ন এবং অন্য বিভিন্ন করের কাগজপত্র তৈরি করা৷ সেই সব নথি পৌঁছে দেওয়া হত চক্রের আর এক পান্ডা সমরেশ বিশ্বাসের কাছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, এর আগে সমরেশ, তার ছেলে রিপন এবং দু’টি ডাকঘরের দুই অস্থায়ী কর্মী তারকনাথ সেন এবং দীপক মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়েছিল৷ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই দীপঙ্করের নাম উঠে আসে৷ গত বুধবার দীপঙ্করকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হয়৷ সরকারি কেঁসুলি সৌরীন ঘোষাল জানান, ধৃতের কাছ থেকে প্রচুর জাল নথি উদ্ধার হয়েছে৷ যা দেখে মনে করা হচ্ছে, এই চক্রের কয়েক হাজার পাসপোর্ট তৈরি করা হয়েছিল কলকাতায়৷ এর পরেই আদালত ধৃতকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়৷ ধৃতদের জেরা করে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে মনে করছে, শুধু কলকাতাতেই ভুয়ো নথি দিয়ে তিন হাজারেরও বেশি পাসপোর্ট তৈরি করেছে সমরেশ ও তার দলবল৷ সেই সঙ্গে কলকাতার বাইরে জেলাতেও একই কায়দায় প্রচুর ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরি করা হয়েছে৷ প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দারা জেনেছেন, এই ভুয়ো পাসপোর্ট নিয়ে ৭৩ জন ইতিমধ্যেই বিদেশে পৌঁছেছে৷ তাদের সম্পর্কে খোঁজখবরের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পুলিশ৷
পুলিশ জানিয়েছে, এই ভুয়ো পাসপোর্ট চক্রে বেশ কয়েক জন এজেন্টও জড়িত৷ যারা মূলত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত৷ তারাই সমরেশ এবং রিপনের সঙ্গে বাংলাদেশিদের যোগাযোগ করিয়ে দিত৷ এর পরে সমরেশের নির্দেশে জাল নথি তৈরি করে দিত দীপঙ্কর৷ তবে, প্রতিটি পাসপোর্ট আবেদনকারীর হাতে দেওয়ার আগে তার পুলিশি যাচাই করা হয়ে থাকে৷ ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরির সময়ে কেন পুলিশি যাচাই হয়নি, বা তা হলেও সেটি কী ভাবে পুলিশকর্মীদের নজর এড়িয়ে গেল, সব কিছুই খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা৷