আমরা সকলে বাঙালীরা একটা জিনিস খুব পছন্দ করি তা হলো ‘এ্যাডভেঞ্চার’ , তাই তো আমাদের লেখকদেরও সেই দিকেই বিশেষ আকর্ষণ থাকে৷ যেমন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন চাঁদের পাহাড় তাঁর স্বপ্ণ৷ আর সেই স্বপ্ণই জয়ে করে ফিরেছেন এক বঙ্গসন্তান উজ্বল পাল৷ শৈশব থেকে যুবক হওয়া পর্যন্ত বিভূতিভূষণের একটাই স্বপ্ণ ছিল৷ এই স্বপ্ণ পূরণ করলেন উজ্জ্বল৷
সাতটি মহাদেশের সর্র্বেচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বা সেভেন সামিট ও সাতটি মহাদেশের সর্র্বেচ্চ আগ্ণেয়গিরি বা সেভেন ভলক্যানো জয় করে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম উঠেছিল এ রাজ্যের পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্তের৷ প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো পর্বতের সর্র্বেচ্চ শৃঙ্গ উহুরুতে (৫,৮৯৫ মিটার) দেশের পতাকা উড়িয়ে দেন উজ্বল৷ সঙ্গে ছিল প্রিয় সাইকেল চেতক আর সবুজায়নের বার্র্ত৷ বঙ্গ সন্তানের এই সাফল্যে উজ্বল হয়েছে দেশের নাম৷ দেশে ফেরার পরে বৃহস্পতিবার উজ্জ্বলকে সম্মান জানানো হল মহম্মদবাজার ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে৷
মহম্মদ বাজারের বিডিও আশিস মণ্ডল বলেন, ‘‘উজ্বল এমন এক ব্যক্তিত্ব যাঁকে সম্মান জানাতে পেরে মহম্মদবাজার ব্লকের সকলে গর্বিত৷ উজ্জ্বল দেশের মুখ উজ্বল করেছেন৷ এখান থেকেই যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি৷ উজ্বল লাজুক হেসে বলেন, ‘‘কোনও রেকর্ড গড়ার জন্য নয়, ছোটবেলায় বিভূতিভূষণের ‘চাঁদের পাহাড়’ পড়ার পরে স্বপ্ণে ছিল সত্যি চাঁদের পাহাড়ের মাথা ছোঁব৷ পৌঁছোলাম যখন তখন মনে হল স্বপ্ণ সার্থক হল৷ সেই মুহৃর্তের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না৷’’
‘উজ্বল গ্রীণ অন হুইল’ এর বার্র্ত নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন ২৭ অক্টোবর৷ ২৬ জানুয়ারি সকাল ছটায় দুর্গম পথ অতিক্রম করে, মাইনাস ১৫ডিগ্রি তাপমাত্রায় পৌঁছোন কিলিমাঞ্জারো পর্বতের উহুরু শৃঙ্গে৷ ২০১১ সাল থেকে প্রত্যেককে একটি গাছ লাগানোর বার্র্ত দিতে শুরু করেছিলেন সাইকেল নিয়ে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ৷ এ পর্যন্ত ১৭টি দেশের ৫০০ স্কুলে, ১০০টি কলেজ ও ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি সেই বার্র্ত পৌছে দিয়েছেন৷ উজ্বল জানান, অভিযানে তাঁর বার্র্ত ছিল, প্রতিটা মানুষেরই গোটা জীবনে একটা লাগানো ও তাকে বড় করা উচিত ৷ নিজেদের স্বার্থে ও সবার সুস্থ জীবনের স্বার্থে৷ উজ্বলের এই সাফল্যে শুভেচ্ছা জানিয়ে ইতিমধ্যেই একশোটি গাছ লাগিয়েছেন দমদমের তরুণ বিশ্বাস৷ তাঁর অভিযাত্রী সংগঠন ‘পুষ্পিতা প্রকল্পে’র উদ্যোগে এই গাছ লাগানো শুরু হয় ২৬ জানুয়ারি উজ্বলের চাঁদের পাহাড় জয়ের খবর আসার পরেই৷
তরুণ বলেন, ‘‘আমরা প্রতিদিন একটি গাছ লাগানোর চেষ্টা করি৷ গাছ লাগিয়েই উজ্বলকে সম্মান জানালাম৷’’ মহম্মদবাজারের গৌরনগর গ্রামে উজ্বলের মামার বাড়ি৷ আদতে সিউড়ির বাসিন্দা হলেও তিনি সেখানেই থাকেন৷ দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারগুলির ৯০টি শিশুর লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনী৷ তাদের বইপত্র কিনে দেওয়া থেকে শিক্ষামূলক ভ্রমণ সবই করান নিজের খরচে৷ খরচ জোগাতে চাকরিও করেছেন দীর্ঘদিন৷ কিন্তু তাতে অভিযানে বাধা আসায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন৷ বৃহস্পতিবার গৌরনগরে পৌঁছোতেই তাঁকে ঘিরে ভিড় করে কচিকাঁচা থেকে বড়রাও৷