সম্পূর্ণ অদৃশ্য এক হাতিয়ার! এর এক আঘাতে উড়ে যেতে পারে আস্ত একটা শহর৷ ধবংসক্ষমতার নিরিখে ইতিমধ্যেই পরমাণু বিস্ফোরণের সঙ্গে এর তুলনা টানা শুরু করে দিয়েছেন প্রতিরক্ষা গবেষকেরা৷ এ-হেন ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র তৈরিতে হাত পাকাচ্ছে চিন৷ ড্রাগনভূমিতে জোরকদমে চলছে এর নির্মাণকাজ৷ আর সেই খবর প্রকাশ্যে আসতেই আতঙ্কে আমেরিকা৷ নয়াদিল্লির কপালেও পড়েছে চিন্তার ভাঁজ৷ গোয়েন্দা সূত্রে খবর, বর্তমানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোওয়েভ (হাই-পাওয়ার মাইক্রোওয়েভ বা এইচপিএম) হাতিয়ার তৈরিতে মন দিয়েছে বেজিং৷ সেখানকার প্রতিরক্ষা গবেষকদের দাবি, অত্যাধুনিক ওই অস্ত্রটি চালালে সেখানে থেকে বেরিয়ে আসবে তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ৷ সেগুলির শক্তি পারমাণবিক বিস্ফোরণের সমতুল্য হবে বলে মিলেছে ইঙ্গিত৷
‘দ্য ইউরেশিয়ান টাইম্স’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, অত্যাধুনিক নতুন হাতিয়ারটি নিয়ে বর্তমানে পরীক্ষা চালাচ্ছেন চিনা প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দল৷ সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত এলেই এই মারণাস্ত্রের ব্যবহার শুরু করবে ড্রাগনের লালফৌজ৷ সূত্রের খবর, এর সাহায্যে শত্রুপক্ষের দূরপাল্লার হাতিয়ারগুলিকে অতি সহজেই নিষ্ক্রিয় করতে পারবেন তাঁরা৷
‘ইউরেশিয়ান টাইম্স’ জানিয়েছে, এইচপিএম অস্ত্রের সাহায্যে একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ শানাতে পারবে চিনের পিপল্স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)৷ গোয়েন্দা সূত্রে খবর, এতে ফেজড অ্যারো ট্রান্সমিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন ড্রাগনল্যান্ডের প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা৷ এর সাহায্যে শত্রুপক্ষের ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্রগুলির বৈদ্যুতিন উপাদানগুলিকে নষ্ট করতে সক্ষম হবে লালফৌজ৷ বিশ্লেষকদের দাবি, এইচপিএম অস্ত্রের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এর অদৃশ্য হয়ে থাকার ক্ষমতা৷ উচ্চ শক্তির লেন্সেও অনেক সময়ে ধরা পড়ে না মাইক্রোওয়েভ৷ ফলে শত্রুর নজর এড়িয়ে অতি সহজেই এর সাহায্যে আক্রমণ শানাতে পারবে ড্রাগন সেনা৷ যদিও একটা সময়ে এই ধরনের হাতিয়ার তৈরি একরকম অসম্ভব বলে মনে করা হয়েছিল৷ সূত্রের খবর, চিনা অস্ত্রটি থেকে যে তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ বেরিয়ে আসবে তার শক্তি এক গিগাওয়াটের বেশি হতে পারে৷ অস্ত্রটির নকশায় ঘূর্ণায়মান তরঙ্গগুলির জন্য রয়েছে অ্যারে-অ্যান্টেনা৷ মোট আটটি চ্যানেল দিয়ে ওই তরঙ্গ বেরিয়ে এসে নিখুঁত নিশানায় হামলা চালাবে বলে জানা গিয়েছে৷ অদৃশ্য এই অস্ত্র নির্মাণে নিরন্তর গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে চিনের ইউনিভার্সিটি অফ ডিফেন্স টেকনোলজি৷ সেখানকার বিজ্ঞানীদের সঙ্গে রয়েছেন নর্থ-ওয়েস্ট ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার টেকনোলজির গবেষক দল৷ হাতিয়ারটির পাওয়ার ডিভাইডারের আকার একটি পেডেস্টাল ফ্যানের মতো বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর৷ চিনা বিশ্লেষকদের দাবি, এইচপিএম অস্ত্রটি যে তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করবে, প্রতি মিটারে তার শক্তি ৮০ হাজার ভোল্টের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ পারমাণবিক বিস্ফোরণেও এই একই ধরনের তড়িচ্চুম্বকীয় পাল্স তৈরি হয়৷ আর তাই ভয়ঙ্কর এই মারণাস্ত্রটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যথেষ্ট কঠিন বলে আগাম সতর্ক করেছেন তাঁরা৷ চিনের মতোই এইচপিএম প্রযুক্তির অস্ত্র তৈরিতে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে আমেরিকা৷ ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় এই ধরনের হাতিয়ার মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে ওয়াশিংটনের৷ সেখানে গত কয়েক বছর ধরেই ক্রমাগত ‘দাদাগিরি’ চালিয়ে যাচ্ছেন ড্রাগনের জলযোদ্ধারা৷