অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিন সামগ্রী উৎপাদনের জন্য বিশ্ব-দরবারে চিনই প্রধান ঘাঁটি। কিন্তু সাম্প্রতিক চিনের থেকে মুখ ফেরাচ্ছে অ্যাপল, গুগলের মতো একাধিক সংস্থা। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন স্মার্টফোন বাজারে আনতে চলেছে ওই দুই সংস্থা। জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকটি সংস্থার স্মার্টফোন আর চিনে উৎপাদন করা হবে না। বিভিন্ন সংস্থার এ হেন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। চিনের বদলে বিকল্প দেশ হিসাবে সংস্থাগুলির তালিকায় রয়েছে ভারত।
বেজিংয়ের থেকে মুখ ফেরাতেই সংস্থাগুলি সে দেশে আর বরাত দিতে চাইছে না বলে মনে করা হচ্ছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে চিনের বদলে ভারতকে বেছে নিচ্ছে কয়েকটি সংস্থা। অ্যাপলের নতুন আইফোন বাজারে আসা নিয়ে জোর চর্চা চলছে। জানা গিয়েছে, নতুন আইফোনের আংশিক উৎপাদন হবে ভারতে। গুগলের নতুন পিক্সেল ফোনের উৎপাদনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে ভিয়েতনামকে।
অতিমারির সময় থেকেই বাণিজ্য ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেজিংয়ের সংঘাত তুঙ্গে। বর্তমানে এই সংঘাত আরও চড়েছে। সম্প্রতি তাইওয়ান নিয়ে দু’দেশের মধ্যে তিক্ততা কয়েক গুণ বেড়েছে। সে কারণেই চিনের সঙ্গে ব্যবসায় আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না আমেরিকার সংস্থাগুলি।
বস্তুত, অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিন সামগ্রী উৎপাদনের জন্য বিশ্ব দরবারে চিনই প্রধান ঘাঁটি। কিন্তু সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে চিন থেকে উৎপাদন কমাতে শুরু করেছে একাধিক সংস্থা। শুধু যে স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিই চিন থেকে পাততাড়ি গোটাচ্ছে,তেমন নয়। অন্য সংস্থাগুলিও ধীরে ধীরে তাদের সামগ্রীর উৎপাদনের জন্য বিকল্প স্থান বেছে নিচ্ছে। উত্তর ভিয়েতনামে আইপ্যাড বানাচ্ছে অ্যাপল। ‘ফায়ার টিভি ডিভাইস’ ভারতের চেন্নাইয়ে তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যামাজন। প্রসঙ্গত, কয়েক বছর আগেও এই সামগ্রীগুলি তৈরি করা হত চিনে।
সে দেশে যে এ ধরনের উৎপাদন ধাক্কা খাচ্ছে, সে কথা বুধবারই এক সমীক্ষায় জানতে পেরেছে বেজিং। চিনের উৎপাদন অগস্ট মাসে সঙ্কুচিত হয়েছে বলে ওই সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে। ‘এক্লিপেস ভেঞ্চার ক্যাপিটাল’-এর প্রতিষ্ঠাতা লিওর সুসান বলেছেন, ‘‘চিনে উৎপাদনের সাম্রাজ্যের ভিত নড়ে গিয়েছে। বহু সংস্থাই তাদের সামগ্রীর উৎপাদনের জন্য চিনের বিকল্প খুঁজছেন।’’ অতিমারির সময় কারখানার ঝাঁপ বন্ধ করে দেওয়ায় চিনে ব্যবসায় ধাক্কা খেয়েছিল অ্যাপল। তার পরই তাদের সামগ্রী উৎপাদনের জন্য বিকল্প স্থানের কথা ভাবতে শুরু করেন আইফোন নির্মাতারা। এই প্রথম অ্যাপলের নতুন ‘আইফোন ১৪’-এর উৎপাদন করার কথা ভারতে। শোনা যাচ্ছে, আগামী দিনে অ্যাপলের আইফোনের পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়াই ভারত থেকে করার ভাবনা রয়েছে।
বস্তুত, বিশ্বব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, চিনকে টপকে বিশ্বের দ্রুততম আর্থিক বৃদ্ধির শিরোপা ভারত পেতে চলেছে। আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ) বিভিন্ন দেশের গড় জাতীয় উৎপাদনের পরিসংখ্যান-সহ যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সেই তালিকায় ব্রিটেনকে টপকে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে ভারত। এই প্রেক্ষাপটে চিনের বিকল্প হিসাবে আইফোন তৈরির জন্য ভারতের কথা ভাবা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।