দাদাঠাকুরের চিঠি

লেখক
সাধনা

ছোট্ট ভাইবোনেরা, তোমরা সবাই ছাত্র–ছাত্রা, প্রতিদিন তোমাদের বিদ্যালয়ের পাঠ শিখতে পড়তে হয়৷ তোমরা কোন একটা পাঠ বার বার পড়, আবার কিছুক্ষণ পরে ভুলে যাও, তাই না? বিদ্যালয়ের পড়া সহজে তোমাদের মনে থাকতে চায় না৷ অথচ যখন টেলিবিসনে কোনও কাহিনী দেখ বা কোনও গল্প শোন বা পড় তখন সেটা তোমাদের অনেকদিন মনে থাকে৷ কেন এমন হয় বলতে পার কি? না, এর কারণ হলো তোমার মনের একাগ্রতা৷ যখন তুমি কোন কিছু মনোযোগের সঙ্গে পড়ো বা শোনো বা দেখো তখন সেটা তোমার মনে থাকে৷ কিন্তু যখন চঞ্চল মনে কোন কিছু পড়ো, দেখো বা শোনো তখন তা আর মনে থাকে না৷

আমাদের মনটা অত্যন্ত চঞ্চল৷ তোমরা সবাই বানর দেখেছ? বানর খুবই চঞ্চল প্রাণী, এক মুহূর্তও স্থির থাকতে পারে না৷ এখন এই বানরকে যদি আকণ্ঠ মদ পান করানো হয় তাহলে কী হবে? সে আরও চঞ্চল হয়ে উঠবে৷  এই অবস্থায় তাকে যদি কয়েক হাজার ভীমরুল কাটতে থাকে তখন তার অবস্থা কেমন হবে? সে এত চঞ্চল হয়ে উঠবে যা কল্পনাই করা যায় না৷ মুনি ঋষিরা বলেন, মানুষের মন তেমনি চঞ্চল৷ মনের এই চঞ্চলতার জন্যেই আমাদের কোন কিছু মনে থাকতে চায় না৷ এখন কোন ভাবে যদি এই চঞ্চল মনটাকে স্থির করা যায় তাহলে মনের একাগ্রতা বেড়ে যাবে, আমাদের স্মৃতি শক্তি বেড়ে যাবে আর আমরা যা পড়বো, শুনবো বা দেখবো তা আমাদের মনে থাকবে৷

 তোমারা সূর্যের আলোতে তাপ আছে জানো? এক টুকরো কাগজকে রৌদ্রে রাখলে সূর্যের তাপ তাকে জ্বালাতে পারে কি? না, পারে না৷ কারণ সূর্যের তাপ চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে৷ এখন এই ছড়ানো সূর্যের তাপকে আতসী কাচের মাধ্যমে যদি এক বিন্দুতে আনা যায় তাহলে এই সূর্যের তাপ এক সেকেণ্ডের মধ্যে কাগজকে জ্বালিয়ে দিতে পারে৷ ঠিক তেমনি আমাদের চঞ্চল মনকে যদি কোন ভাবে একাগ্র করা যায় তাহলে মনের মধ্যে একটা প্রচণ্ড শক্তি জাগে৷ আর এই মানসিক শক্তির দ্বারা আমরা বড় বড় কাজ করতে পারি৷ এই মানসিক একাগ্রতা থাকলে তোমরা যা পড়বে তাই মনে থাকবে৷ এখন অতসি কাচের মাধ্যমে যেমন সূর্যের তাপকে একবিন্দুতে কেন্দ্রীভূত করা যায় তেমনি সাধনার মাধ্যমে আমাদের চঞ্চল মনকে একাগ্র করা যায়৷ এর জন্যে নিয়মিত যোগসাধনা অভ্যাস করতে হবে৷ কেউ যদি নিয়মিত ব্যায়াম করে তাহলে যেমন সে শরীরিক শক্তি অর্জন করতে পারে৷ কিন্তু একদিন  মাত্র খুব করে ব্যায়াম করলে হবে কি? নিয়মিত অভ্যাস করতে হবে৷ তেমনি নিয়মিত মানসিক ব্যায়াম বা যোগ সাধনা অভ্যাসের দ্বারা মনকে শক্তিশালী করা যায়, একাগ্র করা যায়৷ আর এই একাগ্র মনে যদি ঈশ্বরের ভাবনা নাও তাহলে সহজেই তাঁকে উপলব্ধি করতে পারবে৷ আর মন একাগ্র না হলে ঈশ্বরের উপলব্ধিও সম্ভব নয়৷ তোমরা যদি প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় মানসিক একাগ্রতা অর্জনের জন্যে যোগ সাধনা করো তাহলে তোমরাও জীবনে অনেক বড় বড় কাজ করতে পারবে৷ তোমরা স্বামী বিবেকানন্দের নাম শুনেছ, ঋষি অরবিন্দের নাম শুণেছ, নেতাজী সুভাষের নাম শুনেছ, এঁরা সবাই নিয়মিত যোগ সাধনা করতেন৷ পৃথিবীতে যত মহাপুরুষ এসেছেন তাঁরা সবাই নিয়মিত যোগ সাধনা করতেন৷ এই যোগ সাধনার দ্বারাই তাঁরা ঈশ্বরীয় শক্তি অর্জন করেছেন, বড় বড় কাজ করেছেন৷ আমাদের সবার পূজনীয় বরণীয়, স্মরণীয় হয়েছেন৷ তাই তোমরাও যদি নিয়মিত এই যোগ সাধনা করো তাহলে তোমরাও তাদের মত পূজনীয়, বরণীয়,স্মরণীয় হতে পারবে৷ আর ব্যষ্টিগত জীবনে ঈশ্বরকে উপলব্ধি করে পরমানন্দ  লাভ করবে৷