ডার্বি ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনা ছিল, আছে, থাকবে

সংবাদদাতা
ভবেশ বসাক
সময়

কলকাতা ফুটবল লীগের চ্যাম্পিয়নশীপ দখল করা নিয়ে অথবা শীল্ড জয় করার জন্যে মোহনবাগান, ইষ্টবেঙ্গল, কিংবা মোহনবাগান-মহামেডান অথবা ইষ্টবেঙ্গল মহামেডানের ম্যাচ মানেই উত্তেজনা৷ দিন পাল্টেছে৷ খেলার ধরণ পাল্টেছে, পাল্টেছে মানসিকতা৷ ওদিকে মহামেডান দল আর আগের মত তিন প্রধানের এক প্রধানের মত শক্তিশালী নেই৷ কিন্তু আবেগ---ফুটবল নিয়ে বাঙালীর আবেগের ক্ষেত্রে ভাঁটা পড়েনি৷ একটুকুও৷

আগে যখন সুরজিৎ সেনগুপ্ত, বিদেশ বসু, মানস ভট্টাচার্য্য, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য্য, সুব্রত ভট্টাচার্য্য, মজিদ বাসকার, জেভিয়ার পায়াস, জামশেদ নাসিরি, ভাস্কর গাঙ্গুলী, প্রতাপ ঘোষ, শিবাজী ব্যানার্জীরা খেলতেন তখন ডার্বি মাচের আগে পাড়ায় পাড়ায় সমর্থকদের লড়াই, ফ্ল্যাগ টাঙানো, ইলিশ-চিংড়ির বাজার দর---ইত্যাদি চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিত ফুটবলের উত্তেজনা কাকে বলে৷ দুই দলের ফুটবলারদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকলেও ডার্বির আগে কথা বন্ধ৷ দেখা হলেও মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া---এমন খবরও খবরের কাগজে দেখা যেত৷ এখন দিন পাল্টেছে৷ এখন আর আগের মত গলিতে গলিতে ফ্ল্যাগ টাঙ্গানো, পাড়ার রকে বসে দুই দলের সম্বন্ধে আলোচনা-সমালোচনা--- এই সব খুব একটা চোখে পড়ার মত নেই৷ কিন্তু আবেগ আছে আগের মতই৷ শিলিগুড়িতে যে ডার্বি ম্যাচ মোহনবাগান-ইষ্টবেঙ্গলের মধ্যে হয়ে গেল গত ২৪ তারিখে তাতে এই দুর্গাপূজার সময়ে মানুষের ঢল কাঞ্চনজঙ্ঘা ষ্টেডিয়ামে৷ এখন কলকাতা থেকে দলে দলে সমর্থকদের যাওয়া বেশ কঠিন৷ ট্রেন চলাচল প্রায় নেই, বাস সার্ভিসও তথৈবচ, এর মধ্যে আবার দার্জিলিং নিয়ে নানান রাজনৈতিক ঝামেলা তাই কলকাতার বা কলকাতার আশেপাশের অঞ্চলের অনেক সমর্থকই মাছে পৌঁছতে পারছেন না৷ কিন্তু নেটের মাধ্যমে চলছে একে অপরের মধ্যে তাল ঠোকাঠুকি৷ খবরের কাগজ খুললেই দেখা যাচ্ছে---কোচের বারণ কোনও ফুটবলার হোটেলের বাইরে যেতে পারবে না, অবাঞ্ছিত কেউ যেন ফুটবলারদের সঙ্গে দেখা করতে না পারে---এক কোচ আর এক কোচের সম্বন্ধে নানান কথার মারপ্যাঁচ কষছেন---সব মিলিয়ে ফুটবলের এই যুদ্ধ এখন কয়েকঘণ্টার জন্যেও হলেও শারদোৎসবকে টেক্কা দিয়ে ফেলেছে৷

তবে হ্যাঁ, যা পাল্টে গেছে তা হ’ল বাঙালীর আপন ঘরাণার ফুটবল৷ এখন আর বেশী বাঙালী ফুটবলার কোনও দলেই নেই৷ রয়েছে অন্য রাজ্যের আর বিদেশীদের ও নির্ভর করে ম্যাচ জেতার মানসিকতা৷ এছাড়া উপায়ও যে নেই৷ চেষ্টার অভাবই হোক আর সুযোগের অভাবই হোক, দলে দলে বাঙালী ফুটবলার আর ময়দানে দাপিয়ে খেলছে না৷ যারা আছে তারাও একই দলে ক’বছরই বা খেলেন!

তবে একটা কথা ঠিক, যে আবেগ এখনও আছে তা যদি ধরে রাখা না যায় তবে কিন্তু ভারতীয় ফুটবলের মান বাড়ানো যাবে না৷ আবেগের বশেই খেলোয়াড়রা নিজেদের উজার করে দেয়, আর তখনই বিশ্বমানের ফুটবল খেলা হয় সল্টলেক, কাঞ্চনজঙ্ঘাতে৷ আশা, এই আবেগ থাকবেই---ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির স্বার্থে যা খুবই জরুরী৷