দিল্লীর বঞ্চনা, অবদমন নিপীড়ণের বিরুদ্ধে চাই ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

প্রবীন প্রাউটিষ্ট নেতা শ্রী প্রভাত খাঁ শ্রীরামপুরে এক সাক্ষাৎকারে বলেন---বর্তমান রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্র ও কাজকর্ম দেখে আমার মতো প্রবীনরা হতাশ৷ তিনি বলেন---স্বাধীনতার পূর্বে ভারতবর্ষের রাজনীতি বাঙলা থেকেই নিয়ন্ত্রিত হতো৷ বাঙলাই ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ প্রদর্শক৷ দেশের স্বাধীনতার জন্যে আত্মত্যাগে ও আত্মবলিদানে বাঙলা ছিল সবার আগে৷ কিন্তু স্বাধীনতার আগেই দেশীয় পুঁজিপতিরা রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে সামনে রেখে৷ তাই সেদিন সুভাষচন্দ্রকে বিদায় নিতে হয়েছিল ভারতীয় রাজনীতি থেকে৷ সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত ভারতের ছোট বড় সবদলেরই নেতারা পুঁজিপতিদের হাতের পুতুল হয়ে গেছে৷ এমনকি যে বামপন্থিরা এক সময় শ্লোগান দিত পুঁজিবাদের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও পরবর্তীকালে বাঙলায় ৩৪ বছরের শাসনে কৃষকের পেটে লাথি মেরে পুঁজিপতির হাতে জমি তুলে দিতে চেয়েছিল৷ ক্ষমতায় আসার আগে যারা বাঙলার প্রতি দিল্লীর বৈমাতৃক সুলভ আচরণের বিরুদ্ধে সরব ছিল, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর সে কথা তারা ভুলে গিয়েছিল৷

শ্রী খাঁ বলেন স্বাধীনতার পর মুহূর্ত থেকেই বাঙলার প্রতি স্বাধীন সরকারের বঞ্চনা শুরু হয়৷ উদ্বাস্তু পুনঃর্বাসন থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য-শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি সবদিক থেকেই বাঙলা ধবংস করার এক নূতন পরিকল্পনা শুরু হয়৷ দেশ যখন স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট তখনও দ্বিখণ্ডিত-ক্ষুদ্রপশ্চিমবঙ্গ ভারতের সবথেকে অগ্রসরমান রাজ্য ছিল৷ তখনও বাঙলার অর্থনীতিতে অনেক বাঙালী শিল্পপতি ছিল৷ কিন্তু চতুর পশ্চিমি বণিক ও দিল্লীর শাসকের যৌথ ষড়যন্ত্রে বাঙলার অর্থনীতি থেকে বাঙালীকে উৎখাত করে৷ বিকৃত রুচির সাহিত্য চলচিত্র, সঙ্গীতের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে একদিকে যেমন বাঙলার উন্নত সাহিত্য সংস্কংৃতিকে ধবংস করেছে তেমনি বাঙলার যুবসমাজের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে

শ্রী খাঁ দুঃখ করে বলেন---স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙলার রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে দিল্লীর পদলেহন করে গেছে বাঙলার কথা ভাবেনি৷ বাঙলা যে তিলে তিলে ধবংসের দিকে যাচ্ছে সে দিকে দৃষ্টি দেয়নি৷ ৭৫ বছর ধরে শুধু দল ভেঙেছে, দল গড়েছে আর দলাদলি করেছে৷ আজ তো বাঙলার শোচনীয় অবস্থা৷ একদিকে যেমন দিল্লীর বঞ্চনা অত্যাচার দমন-পীড়ন বেড়েছে তেমনি নেতারা আত্মঘাতী ভাতৃহত্যার রাজনীতিতে মত্ত৷ আর বাঙলার যুবসমাজ বহিরাগত হীনরুচির সিনেমা-গানে মত্ত৷ অবাঙালী বণিক সম্প্রদায় দিল্লীর বাঙালী বিদ্বেষী শাসক সম্প্রদায় এন.আর.সি, সি.এ.এ-র মাধ্যমে বাঙালীকে ভারতছাড়া করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত৷ এই অবস্থায় বাঙালী জাতির পরিত্রাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত কোন রাজনৈতিক দল ও নেতার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ তাই বাঙালী জাতির পরিত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে আমরা বাঙালী সংঘটন৷ নামে প্রাদেশিকতার গন্ধ থাকলেও এ কোন প্রাদেশিক আন্দোলন নয়৷ সারা বিশ্বের প্রতিটি শোষিত জনগোষ্ঠীর মুক্তির প্রথম সোপান আমরা বাঙালী ও বাঙালীস্তান ঘটনের আন্দোলন৷ আমরা বাঙালীর পাথেয় মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের আধ্যাত্মিক ও নব্যমানবতাবাদের আধারে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক অর্থনৈতিক তত্ত্ব প্রাউট তথা প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব৷ একমাত্র প্রাউটের বাস্তবায়নের মাধ্যমেই বিশ্বের প্রতিটি শোষিত জনগোষ্ঠী ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট শোষণের হাত থেকে মুক্তি পাবে৷

পরিশেষে শ্রী খাঁ বাঙলার তরুণ ছাত্র-যুব সমাজকে আহ্বান জানিয়ে বলেন-ভাতৃহত্যার রাজনীতি ছেড়ে হীন যৌন আবেদন মার্র্ক নিম্নরুচির গান চলচিত্রের মোহ ছেড়ে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনে সামিল হোন৷ দিল্লীর বঞ্চনা অত্যাচার শোষণ সীমা ছাড়িয়েছে৷ এই শোষণ বঞ্চনা ও অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তির একমাত্র পথ ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন৷