‘‘সাম্রাজ্যবাদী শোষকরা তাদের শোষণকে যুক্তি ও তথ্যের ওপর দাঁড় করানোর জন্যে প্রথমেই তারা জাতীয় সমর্থন আদায় করতে সচেষ্ট হয়৷ এর জন্য তারা একটা তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করে৷ সেই তত্ত্ব হলো জাতীয়তাবাদের তত্ত্ব৷ জাতীয়তাবাদের সেন্টিমেন্ট দিয়ে তারা তাদের শোষণকে যুক্তিসিদ্ধ ও নিয়মতান্ত্রিক বলে প্রতিষ্ঠা করতে চায়৷’’
সাম্রাজ্যবাদী শোষণের পরিপূরক হলো রাজনৈতিক শোষণ৷ ব্রিটিশদের রাজনৈতিক শোষণ শুরু হয় বাঙলার বৃহত্তম সীমাকে টুকরো বিচ্ছিন্ন করে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলির সঙ্গে মিলিয়ে দিয়ে বাঙালী জনগোষ্ঠীর মূল সংখ্যাকে কমিয়ে ফেলার মধ্যে দিয়ে৷ যে অঞ্চলগুলি বিচ্ছিন্ন করে সংলগ্ণ রাজ্যগুলির সঙ্গে যুক্ত করা হলো সেই সব অঞ্চলের জাতীয় সম্পদের অধিকার থেকেও বাঙলার জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করা হলো৷’’
‘‘সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ফ্যাসিস্ট শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শোষিত জনগোষ্ঠীর ওপর মানসিক সাংস্কৃতিক শোষণের জাল বিস্তৃত হয়৷ প্রধানতঃ অর্থনৈতিক শোষণকে বাধাহীন ও চিরন্তন করার প্রয়োজনেই মানসিক শোষন শুরু হয়, তাই একে এক কথায় মানসিক-অর্থনৈতিক শোষণ বলা চলে৷
‘‘ফ্যাসিস্টদের ক্রুর দৃষ্টি যে জনগোষ্ঠীর ওপর নিবদ্ধ হবে সেই জনগোষ্ঠীকে তারা প্রথমেই চেষ্টা করবে তাদের নিজস্ব সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ থেকে উৎখাত করতে৷ এই প্রয়োজনে ফ্যাসিস্ট শক্তি সর্বদাই ওই জনগোষ্ঠীর ওপর অন্যতর এক ভাষা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ কে চাপিয়ে দিতে চায়, যার ফলে ওই জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ব্যষ্টি মানস সহজে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না, তার মধ্যে এক ধরনের পরাজিত মনোভাব গড়ে উঠতে থাকে৷ ওই পরাজিত মনোভাব তার তেজকে সংগ্রামশীলতাকে ধবংস করে তার মানসিকতাকে সম্পূর্ণ বিনষ্ট করে ফেলে৷’’
‘প্রাউটের অর্থনীতি’ ---শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার
আজ যখন পেট্রোল ডিজেল গ্যাসের দাম দিন দিন মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে৷ তখন রাম মন্দির, অমৃত মহোৎসব সাম্রাজ্যবাদী শোষণের জাতীয়তাবাদী রূপরেখা নয় কী? পাশাপাশি বাঙলার দিকে তাকিয়ে দেখুন,৭৪ বছর আগেও যে জনগোষ্ঠী শিল্প-সাহিত্যে সংস্কৃতিতে, কৃষি শিল্প সম্পদে ভারতবর্ষে সবার আগে ছিল, আজ তার এই দশা কেন? বাঙলার ওপর বাংলার চেয়েও নিম্নমানের হিন্দি ভাষা সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে না কি? বাঙলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল অসম,মনিপুর, মেঘালয়, বিহার, উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে সেই ব্রিটিশের রাজনৈতিক শোষণ আজো কি বাঙলার ওপর চলছে না?
বাঙলা আজ তীব্রভাবে সাম্রাজ্যবাদী, ফ্যাসিস্ট ও রাজনৈতিক শোষণের শিকার৷ একদিকে তার খনিজ কৃষিজ প্রভৃতি অর্থনৈতিক সম্পদের অবাধ লুন্ঠন হচ্ছে, অন্যদিকে নিম্নমানের হিন্দি ভাষা সংস্কৃতি চাপিয়ে বাঙালী যুব সমাজের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হচ্ছে৷ বাঙালী আজ হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের মানস-অর্থনৈতিক শোষণের শিকার হয়ে বিলুপ্তির পথে৷ রাজনৈতিক দলগুলো আত্মকলহে মত্ত, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অঙ্গুলিহেলনে চলে৷ এই পরিস্থিতিতে প্রাউটের সমাজ আন্দোলনই বাঙালীর শোষন মুক্তির একমাত্র পথ৷ এই সত্য বাঙালী জনগোষ্ঠী যেদিন বুঝবে সেদিনই তার দুয়ারে নব প্রভাতের অরুণ আলো ছড়িয়ে পড়বে৷