ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাঙলা দখল করতেই হবে

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ ২০১৪ সালে নরেন্দ্রমোদি কেন্দ্রে সরকার গড়ার পর ষোড়শ লোকসভার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর ভাষণে নবগঠিত বিজেপি সরকারের আর্থিক নীতি তুলে ধরেন৷ রাষ্ট্রপতির ভাষণে স্পষ্ট হয়ে যায় নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার দেশী বিদেশী পুঁজিপতিদের অবাধ ব্যবসার  সুযোগ করে দেবে৷ এমনকি রেল ও প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বিদেশী বিনিয়োগের দরজা খুলে দেবে৷

কেন্দ্রে মোদি সরকার প্রতিষ্ঠায় দেশীয় পুঁজিপতিদের একটি অংশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে৷ তাই ২০১৯ শে দ্বিতীয়বার বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন আর্থিক বাজেটে স্পষ্ট করে দেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারী সংস্থা (ব্যাঙ্ক, বীমা, রেল,প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদন, কয়লা, সেল, ইন্ডিয়ান অয়েল প্রভৃতি) ধীরে ধীরে বেসরকারী হাতে তুলে দেবে৷ মোদি সরকার সেইকাজ শুরুও করে দিয়েছে৷

মোদি সরকারের এই কাজে সব থেকে বড় প্রতিবন্ধক পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার ও বাঙালী মানসিকতা৷ তাই একদিকে বাঙালী মানসিকতাকে অধঃপতে নিয়ে যাওয়ার কাজ দেশীয় পুঁজিপতিরা স্বাধীনতার পর থেকেই কংগ্রেসের হাত ধরে শুরু করে নিম্নমানের হিন্দী অসংসৃকতির প্রচার ও প্রসার করে৷ বাকি কাজটুকু শেষ করতে চায় মোদি সরকারের হাত ধরে৷ ২০১৪ সালে বিজেপি সরকার আসার পরেই এন.আর.সি রূপায়ণে জোর দেয়, যার প্রথম লক্ষ্য উত্তর পূর্র্বঞ্চলের বাঙালী জনগোষ্ঠী৷ এরপর লোকসভায় সংখ্যাধিক্যের জোরে সিটিজেন এ্যামেণ্ডমেন্ট বিল পাশ করিয়ে আইনে পরিণত করা হয়৷ এই আইনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়, বিশেষ করে পূর্ব ও উত্তরপূর্বাঞ্চলে৷ কিন্তু পূর্ব ও উত্তরপূর্বাঞ্চলে এই আইন রূপায়ণে মস্ত বাধা হয়ে দাঁড়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার৷ তাই এবার সর্বশক্তি নিয়ে রাজ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আমলা প্রশাসন বাঙলা দখলে৷ এবার বিজেপি বাঙলা দখল করতে না পারলে দেশীয় পুঁজিপতিদের কাছে মান-সম্মান থাকবে না৷ তাছাড়া আগামী বছর আটটি রাজ্যে নির্বাচন৷ পশ্চিমবঙ্গের ফলের প্রভাব সেখানেও পড়বে৷ এই পরিস্থিতিতে যেন তেন প্রকারে বাঙলা দখলে মরিয়া বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অনুগত নির্বাচন কমিশনার, পুলিশ আমলা দিয়ে দীর্ঘ ৮ দফার ভোট রাজ্যকে বিপাকে ফেলে৷ করোনা পরিস্থিতিতেও শেষ তিন দফার ভোট এক দফায় করার মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ অগ্রাহ্য করে অনড় নির্বাচন কমিশন আটদফায় বোটে৷ দিল্লীর শাসককে সন্তুষ্ট রাখতে নির্বাচন কমিশন ক্ষমতার অপব্যবহার করে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে এক তরফাভাবে৷

গত সাত বছরে মুষ্টিমেয় কয়েকজন পুঁজিপতি যেভাবে ফুলে ফেঁপে উঠছে ও কেন্দ্রীয় সরকার একের পর এক সরকারী সংস্থা পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দিচ্ছে তাতে পরিষ্কার এই সরকার সাধারণ দেশবাসীর কাছে নয়, দায়বদ্ধ দেশী বিদেশী পুঁজিপতিদের কাছে৷ সাধারণ দেশবাসী দেশপ্রেম ও গো-মলে পেট ভরাবে৷ অপর দিকে  আর্থিক শক্তি ও দেশের সম্পদ পুঁজিপতিরা কুক্ষিগত করবে৷ ক্রমে শাসন ক্ষমতার দখল নিয়ে দেশে ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠা করবে৷ এই লক্ষ্যে মোদি সরকার অনেকটাই এগিয়ে গেছে৷ বাঙলা দখল করতে পারলে ষোলকলা পূর্ণ হবে৷