এ আইয়ের জন্যে দু’হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাসের রহস্য উন্মোচিত

সংবাদদাতা
পি.এন.এ.
সময়

নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না নিকোলার্ডি৷ এও কী সম্ভব! এআইয়ের কল্যাণে দু’হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাসের রহস্য আজ উন্মোচিত৷

ইটালির নেপল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ‘প্যাপিরোলজিস্ট’ ফেডেরিকা নিকোলার্ডি৷ প্যাপিরাসে প্রাচীন লিখনের পাঠোদ্ধার তাঁর কাজ৷ সেই সূত্রে জানতে পারেন ‘ভিসুভিয়াস চ্যালেঞ্জ’-এর কথা৷ ৭৯ খ্রিস্টাব্দের প্রাচীন একটি গোটানো প্যাপিরাসের টুকরো৷ মাউন্ট ভিসুভিয়াসের অগ্ণ্যুৎপাতে পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া, প্রায় ভঙ্গুর টুকরোটি অষ্টাদশ শতাব্দীতে উদ্ধার হয় ইটালির পম্পেই থেকে৷ বছরের পর বছর চেষ্টা চলেছে৷ কিন্তু সেটির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি৷ শেষমেশ এআইয়ের শরণাপন্ন হওয়া৷ তাতেই কেল্লা ফতে৷ ‘কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি’, ত্রিমাত্রিক ম্যাপিং আর এআই-নির্ভর ‘মেশিন লার্নিং’-এর দৌলতে গোটা প্যাপিরাসের লেখা এখন পাঠযোগ্য৷ পাঁচ কলামে ছড়ানো আগাগোড়া গ্রিক অক্ষরে লেখা লাইনগুলি পড়তে পড়তে উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারছিলেন না নিকোলার্ডি‘‘অবিশ্বাস্য৷ দু’হাজার বছর আগের ইতিহাস হাতের নাগালে৷ প্যাপিরোলজির জগতে এ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত৷’’

শুধু কি তাই! প্রাচীন গ্রিক ও লাতিন লিখন, ষাঁড়ের হাড় বা কচ্ছপের খোলসে খোদিত চিনের ‘অরাকল বোন স্ক্রিপ্ঢ’, সব কিছুর পাঠোদ্ধারে এআই নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে৷ উদ্ধার হওয়া প্রাচীন নানা শিলালিপির অর্থ বুঝতে, হারিয়ে যাওয়া লিপি বা ভাষার হদিস দিতে আশা জাগাচ্ছে৷ কী ভাবে হচ্ছে কাজ? ‘ডিজিটাইজ’ করে প্রাচীন লিখনের তথ্য বিশ্লেষণ আগেই করেছে কম্পিউটার৷ তবে ‘নিউরাল নেটওয়ার্ক’-এর মাধ্যমে বিরাট তফাৎ গড়েছে এআই৷ মানুষের মস্তিষ্ক যে ভাবে কাজ করে, অনেকটা সেই পথে এই পদ্ধতিতে এআই কম্পিউটারকে তথ্য বিশ্লেষণ করতে নির্দেশ দেয়৷ উদ্ধার হওয়া প্রাচীন লিখন, শিলালিপির তথ্য ‘ডিজিটাইজ’ করে, তার ভিত্তিতে অজানা লিখন বা লিপির অচেনা, না থাকা ‘ক্যারেকটার’ সম্পর্কে ধারণা মিলছে৷ একটি উদাহরণে বিষয়টি বোঝা যাক৷ ধরুন, প্রকৃতি বিষয়ক একশোটি কবিতা আপনাকে পড়তে দেওয়া হল৷ সেগুলির তথ্য মাথায় রেখে একই ধরনের অচেনা কোনও কবিতার অনুপস্থিত শব্দগুলি সম্পর্কে অনুমান করা যায়৷ সেই কাজই করছে এআই-নির্ভর প্রযুক্তি৷ সম্প্রতি ‘নিউরাল নেটওয়ার্ক’-নির্ভর ‘পিথিয়া’ নামের একটি মডেল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে লন্ডনে৷ খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দী ও পঞ্চম খ্রিস্টাব্দের মধ্যে লেখা দশ হাজার গ্রিক শিলালিপির তথ্য মডেল নেটওয়ার্কে দেওয়া হয়েছিল৷ দেখা গিয়েছে, তা থেকে অজানা শিলালিপি, যার একাধিক অক্ষর বা প্রতীক অনুপস্থিত, সফল ভাবে তার ধারণা দিতে পারছে প্রযুক্তি৷ প্রযুক্তির বড় সুবিধা হল, তা জটিল, বিপুল পরিমাণ তথ্য নিয়ে কাজ করতে পারে৷ তা সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণেও দড়৷ কোনও মানুষের পক্ষে তা সম্ভব নয়, জানাচ্ছিলেন নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস গবেষক থিয়া সমারসিল্ড৷ থিয়ার কথায়, ‘‘২০২২-র পরে নতুন যে ‘ইথাকা’ মডেল নিয়ে আমরা কাজ করছি, তা অজানা লিপির লেখার সময় ও জায়গা সম্পর্কেও ধারণা দিচ্ছে৷ তা ছাড়া, এখন মেশিন লার্নিংয়ের ট্রান্সফর্মার মডেলও এসেছে৷ প্রাচীন লিখনের জটিল ভাষাগত ধরন অনুধাবনের পথও তাতে খুলবে বলে আশা করা যায়৷’’