এ আমাদের কোন ভারত?

লেখক
এইচ, এন, মাহাতো

এ কোন স্বাধীন ভারত! যে দেশের মাত্র এক লাখ বা পঞ্চাশ হাজার টাকা ব্যাঙ্ক ঋণের দায়ে বছরে  হাজার হাজার কর্ষক ঋণখেলাপিতে আত্মহত্যা করে । অথচ সেই দেশেই পঞ্চাশটি পরিবারের ব্যাঙ্ক ঋণ ৬৮০০০ কোটি টাকার ওপর। আর তাদের সেই ঋণ কেন্দ্রীয় সরকারের কথায় ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক মকুব করে দেয়। এখানেই শেষ নয়, যাদের ঋণ মকুব করা হয়েছে, তাদের অনেকই হাজার হাজার কোটি  টাকা নিয়ে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার বিদেশে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। এছাড়াও সন্ন্যাসীবেসে যিনি একদিকে মানুষকে নানা রোগ থেকে মুক্তি পেতে নানাপ্রকার আসন ও নিজের কারখানার ঔষধের বিজ্ঞাপন দিয়ে বাজার গরম করে রেখেছেন, তাকেও বিশাল অঙ্কের টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, রোগ মুক্তির আসন দেখিয়ে উপার্জিত বিশাল পরিমান টাকা ও ঔষধ তৈরী ও বিক্রিত টাকার কোনপ্রকার কর বা ট্যাক্স দিতে হয় না। এ কোন ভারত?
ভারতের গরিবী হটানোর নামে ডিজিটাল ইন্ডিয়া করতে ক্যাসলেস ভারতের স্বপ্ন দেখিয়ে আজ তাহা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভারতীয়দের কাছ থেকে কালোটাকা উদ্ধার করতে নোটবন্দি করে সাধারণ মানুষকে অর্থনৈতিক ভাবে পথে বসিয়ে বড় বড় পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষার সুব্যবস্থা করা হলো। জিএসটি করে রাষ্ট্রকে বেশী পাইয়ে দেওয়ার নামে সাধারণ ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান গুলোকে নাজেহাল করে ও তাদের ব্যবসাকে লালবাতি জ্বালিয়ে বিগ বাজার নামক বিত্তশালীকে একনায়কতন্ত্রিক বাজার তৈরী করা হল।
    যে ভারতের মূল মন্ত্র হলো সকলকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলা। আর স্লোগান ছিল  'সবকা সাথ সবকা বিকাশ'!
এ কোন ভারত?
আজ বিশ্বের সবথেকে বৃহৎ সমস্যা করোনা ভাইরাস, তাদের কতজন রোগগ্রস্ত,  মৃত্যুর অথবা ভালো হয়ে বাড়ীতে ফিরে গেছে তা নিয়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের রাজনৈতিক মত বিরোধ। আমরা দেখেছি রাজনৈতিক তরজাটা নাগরিকদের কল্যানের জন্য নয়, তরজাটা রাজনৈতিক ফায়দা কোন পার্টি কতটা তুলতে পারে----এই নিয়েই প্রতিযোগিতা!  মানুষের কষ্টটা রাজনৈতিক নেতাদের প্রধান নয়।
এই মুহূর্তে ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে একমাত্র পথ লকডাউন ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় সাধারণ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার গুলিকে বেঁচে থাকাটা সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। মুক্তি পাওয়ার কোন পথই তাদের কাছে সহজ নয়। একদিকে করোনার মৃত্যু অন্য দিকে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ফলে খাদ্য ভান্ডারে টান পড়েছে, সেখানেও অনাহারে মৃত্যু দরজায় উঁকি মারছে। অথচ ভারতের অনেক মন্দির, মসজিদ, চার্চ বা আনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আছে তাদের কোটি কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ব্যলেন্স তৎসহ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। ঈশ্বরের নামে তাঁর থেকে কিছু অংশ ঈশ্বরের সৃষ্ট সন্তানকে ভাগ করে দিলে ঈশ্বর খুশি হতেন। কিন্তু এই সকল প্রতিষ্ঠানের পরিচালন কমিটিগুলো এখনো পর্যন্ত কোনো উচ্চ-বাচ্চ নেই। আগেতো মানুষ ও তাদের বাঁচার অধিকার। মানুষ বাঁচলে তারপর মন্দিরের  প্রয়োজন।  একজন কবি তাঁর কলমে লিখেছেন---- এক ভিখিরি মন্দিরের সামনে দুই দিন থেকে অভুক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে দেবতার দর্শণ করতে চাইছে ও কিছু প্রসাদের অপেক্ষা করছে। মন্দিরের ব্রাহ্মণ বা তাদের কর্মকর্তা গণ সেই ভিখিরিকে নিচুজাতের নামে সরিয়ে দিচ্ছে। ভিখিরি মনে মনে ঈশ্বরকে ডাকছেন আর ভাবছেন হে ঈশ্বর তুমি কী শুধু মাত্র উচ্চ বর্ণের! তবে আমাদেরকে কেন সৃষ্টি করলে? সেই সময় ভিখিরি বেসে ঈশ্বর মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে অভুক্ত ভিখিরিকে বলছেন---- দেখ বাপু তুমিতো মাত্র দুই দিন অপেক্ষা করছো, আমি এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হওয়ার ৭০ বছর ধরে মন্দিরে প্রবেশ করতে পারিনি। বলতে পার  এ  কোন ভারত!
রাজনৈতিক ভাবে আমরা ভারতীয়রা কতো বড় দেউলিয়া। একেকটা নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা খরচ করে  শুধু মাত্র গদীটা পাওয়ায় জন্য, আবার এম এল এ বা এম পি সংখ্যা কম হলে কোটি কোটি টাকায় ছাগল, গোরু বা ঘোড়া কেনার মত সাংসদ বা বিধায়ক বাজার থেকে কিনে গদী দখল করে। উদ্দেশ্য জনতার কল্যান নয়, তাদের বা পার্টির লাভ কতটা হলো। অথচ কোরোনা বিপর্যযয়ে দরিদ্র মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের পাসে না দাঁড়িয়ে সেই অভুক্ত মানুষের রিলিফের চাল গম বা অন্য সামগ্রী নিজেদের কুক্ষিগত করা। এই ধরনের জনপ্রতিনিধিগন শুধু ভোগ করতে শিখেছে  কিন্তু ত্যাগ করতে শিখেনি, কারন তারা  নৈতিকতা বা মানবিক মূল্যবোধের ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ কোন ভারত?
 আগামীতে জনসাধারণকে বাঁচাতে তাদেরকেই সাংসদ বা বিধায়ক করে আনা উচিৎ, যারা সমাজিক মনস্তাত্ত্বিক ভাবে একের দুঃখে নিজের দুঃখ বলে ভাবে, একের আনন্দে সকলে আনন্দিত হবে। হে ঈশ্বর তোমার দেওয়া বিপুল সম্পদ পৃথিবীর সকলকেই নিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী ভাগ করে খাবো। বর্তমান অবস্থায় তাদেরকেই এগিয়ে আসা দরকার যাদের মধ্যে মানবতার, নৈতিকতা ও মানব ধর্মকে বাঁচাবার আগ্রহ আছে। ভারত শব্দের মানে হলো অন্যকে তার ভরন-পোশনের সাথে সাথে ব্যাষ্টি ও সমষ্টির শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশ ঘটানো। আমরা যারা ভারতের নাগরিক তাঁরা এখন থেকেই সামাজিক অর্থনৈতিক ব্যাবস্থাকে মজবুত করতে হলে সকলকেই আধ্যাত্মিক অন্তর্নিহিত সাধনার সাধক হতে হবে ও ব্যাষ্টগত ভাবে শৃঙ্খলা পরায়ণ হতে হবে। ভারতের শাস্ত্রীয় মার্গের চাবিকাঠি যম ও নিয়মে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। আমরা আবার ভারতকে বিশ্বের দরবারে উচ্চ আসনে বসাতে পারবো।
  বল বল বল সবে, শতবীণা বেণু রবে,
  ভারত আবার জগৎ সভায়, শ্রেষ্ঠ আসন লবে।