গত ১৫ই আগষ্ট দেশের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসে বিশিষ্ট প্রাউটতাত্ত্বিক শ্রী প্রভাত খাঁ এক আলোচনা সভায় বলেন---স্বাধীনতাপূর্ব দেশনেতাদের ভুলের মাশুল আজও দেশবাসীকে দিতে হচ্ছে৷ নেহেরু থেকে নরেন্দ্র মোদি সেই ভুলের পথ ধরেই চলেছেন৷ হয়তো চলতে বাধ্য হচ্ছেন৷ রাজনৈতিক নেতারা তো পুতুলমাত্র৷ আড়াল থেকে তাদের নাচায় দেশীয় পুঁজিপতিরা৷
শ্রী খাঁ বলেন--- এই পুতুল নাচের খেলা চলছে স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই৷ তৎকালীন নেতারা দেশীয় পুঁজিপতিদের অঙ্গুলী হেলনেই চলেছেন৷ একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু৷ ব্রিটিশের হাত থেকে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের সঙ্গে সুভাষচন্দ্র চেয়েছিলেন অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের আন্দোলন৷ কিন্তু তৎকালীন জাতীয় কংগ্রেসের গো-বলয়ের নেতারা তা চাননি৷ কারণ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের আন্দোলন শুধুমাত্র ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধেই হতো না, দেশীয় পুঁজিপতিদের শোষণের বিরুদ্ধেও আন্দোলন হতো৷ কিন্তু পুঁজিপতি আশ্রিত দেশীয় নেতারা তা চাননি৷ তারা শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা চেয়েছিলেন৷ এটা ছিল দেশীয় নেতাদের মস্ত বড় ভুল৷ কারণ এতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধারণা হয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরাই সমস্ত ক্ষমতা ভোগ করবে৷ এই ত্রুটির ফাঁক দিয়েই ব্রিটিশ হিন্দু মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদের বিষ ঢুকিয়ে দেশ ভাগ করতে সক্ষম হয়েছিল৷ কারণ মুসলীম নেতারা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করতে পৃথক হোমল্যাণ্ডের দাবী করেছিল৷ তাদের সেই দাবীকে দমাতে পারেনি হিন্দু নেতারা৷
শ্রী খাঁ দুঃখের সঙ্গে বলেন স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও দেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী অনাহারে অর্র্দ্ধহারে অশিক্ষার অন্ধকারে বাস করছে৷ মুষ্টিমেয় কয়েকজন ধনকুবের রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে জনগণের মধ্যে জাত-পাত-সম্প্রদায় প্রাদেশিকতার বিষ ঢুকিয়ে ভাগ করো আর শোষণ করো ব্রিটিশ নীতিতে দেশ চালাচ্ছে৷ নেতারা যদি নিজেদের ভুল বুঝতে না পারেন তবে শুধু অর্থনৈতিক দুরাবস্থা নয়, দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতাও বিপর্যস্ত হতে পারে৷
এক প্রশ্ণের উত্তরে শ্রী প্রভাত খাঁ বলেন---অবিলম্বে রাষ্ট্র নেতাদের উচিত দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও অর্থনৈতিক বুনিয়াদ মজবুত করতে ভাষা ভিত্তিক রাজনৈতিক প্রদেশের অস্তিত্ব মুছে দিয়ে কতকগুলি সর্তের ভিত্তিতে ভারতবর্সকে একাধিক সামাজিক-অর্থনৈতিক অঞ্চলে গড়ে তুলতে হবে৷ মনে রাখতে হবে বহুভাষা, ধর্মমত, আচার ব্যবহারের মিশ্র জনগোষ্ঠীর দেশ ভারতবর্ষ৷ উন্নত অনুন্নত প্রতিটি ভাষাকে সম মর্যাদা দিয়ে প্রতিটি জনগোষ্ঠীর সার্বিক কল্যাণের কথা চিন্তা করে অর্থনৈতিক ভিত্তিতে প্রদেশগুলিকে পুনর্ঘটন করতে হবে৷ প্রদেশগুলি পুনর্ঘটন করতে যেসব বিষয়ে নজর দিতে হবে৷ তাহলো--- সমর্থনৈতিক সমস্যা, সম-অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, জনগোষ্ঠীগত বৈশিষ্ট্য, সাধারণ সাংবেদনিক উত্তরাধিকার ও একই ধরনের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য৷ পাশাপাশি শোষণের অবসানকল্পে ও জনগণের সার্বিক কল্যাণের জন্যে অঞ্চলগুলির লক্ষ্য হবে স্থানীয় জনসাধারণের সার্বিক কর্মসংস্থান, সার্বিক শিল্পবিকাশ, বহির্পণ্যের আমদানি এড়িয়ে চলা৷ স্থানীয়ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করা, যোগাযোগের প্রাথমিক মাধ্যম স্থানীয় ভাষা, স্থানীয় সামাজিক-অর্থনৈতিক দাবীগুলি বিশেষ দৃষ্টিতে দেখা৷
পরিশেষে শ্রী খাঁ জানান-প্রাউটিষ্টরা তাদের এই শোষণ বিরোধী চিন্তাধারা যাঁরা সত্যিকারের জনকল্যাণ চান, দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও অর্থনৈতিক বুনিয়াদ মজবুত করতে চান তাঁরা অবিলম্বে প্রাউটের পতাকা তলে সমবেত হোন ও শোষণ বিরোধী আন্দোলনে সামিল হোন৷ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে প্রতিটি মানুষের হাতে ক্রয়ক্ষমতা তুলে দিতে হবে যাতে জীবন ধারণের নূ্যনতম প্রয়োজন (অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান শিক্ষক চিকিৎসা) মেটাতে পারে৷ আর্থিক ভিত্তি মজবুত হলেই দেশের সংহতি ঐক্য ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা মজবুত হবে৷ তাই আজ প্রয়োজন জাত-পাত সম্প্রদায়ের দলাদলি ভুলে অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন৷