এন. পি. আর এন. আর. সি. বিতর্ক - আইন ও মন্ত্রীর কথায় বিস্তর ফারাক

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

একের পর এক রাজ্য হাতছাড়া হতেই বেসামাল অবস্থা বিজেপির৷ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বেসুরো কথাতেই তা পরিষ্কার৷ এমনটাই মনে করছেন বিরোধী দলের নেতারা৷ সংসদে ও সংসদের বাইরে এন.আর.সি.-র সমর্থনে বারবার গলা ফাটিয়েছেন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা৷ গলা উঁচু করে সারা দেশে এন.আর.সি.-র কথা বলেছেন৷ এই দলে বিজেপির প্রাক্তন ও বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও আছেন৷

কিন্তু ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনে পরাজিত হতেই সুর পাল্টান প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং৷ প্রকাশ্য সভায় তিনি বলে বসেন---এন.আর.সি. নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রীর এই কথায় বিরোধী দল তো বটেই বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরাও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন৷ যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢোক্ গিলে প্রধানমন্ত্রীর সুরে সুর মেলাতে বাধ্য হয়েছেন৷ বিরোধী নেতারা এমনই বলছেন৷

এখন দেশ জুড়ে এন.পি.আর.-এর কাজ চলছে৷ পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল সরকার এন.পি.আর.-এর কাজ বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছেন৷ এতে এন.পি.আর. ও এন.আর.সি. নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ অবস্থা সামাল দিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মুখ খুলতে হয়েছে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা পশ্চিমবাঙলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছেন৷ তিনি বলেছেন--- এন.পি.আর.-এর সঙ্গে এন.আর.সি.-র কোন সম্পর্ক নেই৷ কিন্তু এতে জনগণের স্বস্তি মিলছে না৷ বিরোধী নেতাদের বক্তব্য মুখের কথায় বিশ্বাস কী করে করা যাবে৷ কারণ আইনের সঙ্গে মন্ত্রীদের মুখের কথায় বিস্তর ফারাক৷

প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দুজনেই জনগণকে ভরসা দিতে বলেছেন---জাতীয় জনসংখ্যা রেজিষ্টার (এন.পি.আর.)-এর সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এন.আর.সি.)-র কোন সম্পর্ক নেই৷ রাজনৈতিক মহলের মত একের পর এক রাজ্য হাতছাড়া হতেই চাপে পড়ে মন্ত্রীরা বিভ্রান্তমূলক বুলি আওড়াচ্ছেন৷ জনগণকে মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছেন৷ এক বিরোধী নেতার কথায় মুখের কথায় কী মূল্য আছে? আগে সরকার আইন সংশোধন করুন৷ প্রথম মোদী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং সংসদে দাঁড়িয়েই বলেছেন এন.পি.আর.-এর ভিত্তিতে এন.আর.সি. হবে৷ আইনেও সেই কথাই লেখা আছে৷ ২০০৩ সালে বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করেন৷ সেই সংশোধনের ধারায় স্পষ্ট বলা আছে এন.পি.আর. হ’ল এন.আর.সি.-র প্রথম ধাপ৷ সংশোধিত ধারায় আরও বলা আছে ভারত সরকার প্রথমে এন.পি.আর. তৈরী করে জনগণের নাম নথিভুক্ত করবে৷ এন.পি.আর-এর বাইরে যারা থাকবে সরকার যাচাই করে দেখবে তাদের কাছে নাগরিকত্বের উপযুক্ত তথ্য আছে কি না৷ যদি না থাকে তাদের সন্দেহজনক নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে৷ সঠিক তথ্য অনুযায়ী এন.পি.আর.-এ যাদের নাম থাকবে তাদের নামই এন.আর.সি.-তে উঠবে৷

বিরোধী নেতাদের বক্তব্য এই আইনের তো পরিবর্তন হয়নি৷ দেশ আইনের পথে চলবে না মন্ত্রীদের মুখের কথায় চলবে৷ মন্ত্রী তো কাল নাও থাকতে পারে৷ আইন কি রোজ রোজ বদলাবে? এরপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের বক্তব্য বিতর্ক আরও বাড়ায়৷ তিনি দাবী করেন এন.পি.আর.-এর তথ্য দেওয়া না দেওয়া জনগণের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে৷ কেউ চাইলে তথ্য নাও দিতে পারে৷ কিন্তু আইন বলছে এন.পি.আর.-এর তথ্য দেখে সন্দেহ হলে যে কোন ব্যষ্টিকে সন্দেহজনক নাগরিকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে৷

বিরোধী নেতারা অভিযোগ করেন জাভড়েকর জেনে বুঝে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন৷ এন.পি.আর.-এ তথ্য না থাকলে যে কোন ব্যষ্টিকে সন্দেহজনক নাগরিক হিসেবে গণ্য করা যাবে৷ তাহলে উনি তথ্য না দেবার কথা বলেন কি করে? আসলে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা আইনের পথে চলতে শেখেননি৷ অথচ আইন করে অন্যকে বাঁধতে চান৷ দেশের বর্তমান বিশৃঙ্খলার জন্যে এই নেতা-মন্ত্রীরাই দায়ী৷