মরু শহরে সম্প্রতি শেষ হয়ে গেল এশিয় ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশীপ৷ খাতায় কলমে শক্তিধর হিসেবে ভারতের চ্যাম্পিয়ন হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা৷ চ্যাম্পিয়ন ভারতই হয়েছে৷ কিন্তু ব্যাটিং ও বোলিং বিভাগে কতটা শক্তিধর দল হিসেবে আগামী বছরে ভারত ইংল্যাণ্ডে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে যাবে তার আভাস পাওয়া গেল না৷ জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না যে ভারত প্রকৃত অর্থেই দারুণ ব্যালান্সড দল গড়ে ফেলেছে ইতিমধ্যেই৷ যদিও বিশ্বকাপ এখনও অনেক দেরী, তবুও নিজেদের তৈরী করার পর্বটা কিন্তু অংশগ্রহণকারী সব দেশই ঘর গোছানো শুরু করেছে, আর এটাই স্বাভাবিক৷
যাইহোক অন্য দেশগুলোর আলোচনা এখানে আলোচ্য বিষয় নয়, ভারতের সিনিয়র ক্রিকেট দল এই এশিয় কাপে কেমন খেলল? উত্তর আসবে---মোটামুটি৷ খুব ভাল বলা যাবে না৷ কারণ ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগেই মাঝে-মধ্যে ছন্দপতন হয়েছে৷ রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের দিন তো বাঙলাদেশ প্রায় ম্যাচ বের করেই নিয়েছিল৷
এটা ঠিক যে সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে ভারত মাঠে নামেনি এশিয়া কাপে৷ দলের প্রধান স্তম্ভ ফর্মে থাকে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি এই চ্যাম্পিয়নশীপে খেলেননি৷ সুযোগ দেওয়া হয়েছিল আম্বাতি রায়ডুকে৷ আম্বাতি ভাল ব্যাটসম্যান হলেও প্রয়োজনীয় মুহূর্ত্তে তিনি জ্বলে উঠতে পারেননি৷ দীনেশ কার্তিক ব্যাটিংয়ে নিজের জায়গা পাকা রাখতে একরকম ব্যর্থই বলা যায়৷ মনে রাখতে হবে অনেক ভাল ভাল উঠতি ক্রিকেটার কিন্তু ভারতীয় দলে জায়গা করে নেওয়ার দাবীদার হয়ে রয়েছেন৷ এশিয়া কাপের আম্বাতি, দীনেশ, জাদেজাদের পারফরমেন্স কিন্তু টীম ম্যানেজমেণ্টকে চিন্তায় ফেলবে৷ আর মহেন্দ্র সিং ধোনীও ফাইনালে তার সেই ঠাণ্ডা মাথায় জিতে মাঠ ছাড়ার মানসিকতা ধরে রাখতে পারেননি৷
তবে একথা ঠিক যে মাত্র কয়েকদিন আগেই ইংলণ্ডের বিরুদ্ধে সফর শেষ করে ভারত দেশে ফিরেছে৷ সেখানে টেস্টে ভারত ১-৪ ব্যবধানে পরাজিত৷ বিরাট কোহলি ছাড়া ধারাবাহিকভাবে কোনও ব্যাটসম্যানই সাফল্য পান নি৷ মনোবলের দিকে থেকে কিছুটা হলেও ভারত চিন্তায় ছিল৷
এশিয়া কাপে ভারতের মূল লড়াই ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে৷ কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ভারতকে বেগ পেতে হ’ল বাঙলাদেশের বিরুদ্ধে ফাইনাল ম্যাচে৷ এছাড়া আফগানিস্তানের মত অনামী দল ভারতের বিরুদ্ধে যথেষ্ট লড়াই করেছে৷ এই টুর্ণামেণ্টে প্রধানতঃ তিনটি বিষয় ভারতের শক্তিকে দুর্বল করেছিল---(১) দলে বিরাটের অনুপস্থিতি, (২) হার্দিক পাণ্ডিয়ার অসুস্থ হয়ে দল থেকে বাদ যাওয়া, (৩) আবহাওয়াজনিত সমস্যা৷ তবুও ভারত জিতেছে, চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, সহজে পাকিস্তানকে দুবারই হারিয়েছে৷ রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই ভাল ব্যাট করে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের তেমন কঠিন পরিস্থিতির সামনে রেখে আসেন নি৷ ব্যাটিংয়ে বিরাটের অনুপস্থিতি তেমন একটা চোখে পড়েনি৷ তবে হার্দিক পাণ্ডিয়া, ও কেদার যাদবের পেশীতে টান ধরা ভারতকে সমস্যায় ফেলেছে৷ প্রচণ্ড গরমে ক্রিকেটারদের চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ নজরে পড়েছে৷
একজন ভারতীয় সমর্থক হিসেবে ভাল লেগেছে এটাই যে বিপক্ষ আফগানিস্থান ও ফাইনালের বাঙলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যখন সেট হয়ে গিয়েছেন ক্রীজে তখন ভারতীয় বোলাররা ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে খেলার রাশ নিজেদের অনুকুলে আনতে সমর্থ হয়েছে৷ মোট কথা বিপরীত পরিস্থিতিতে দুর্দান্তভাবে ফিরে এসেছে ভারতীয় বোলিং ও ফিল্ডিং৷ শুধু মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যানেরা প্রয়োজনীয় মুহূর্ত্তে দলকে নিশ্চয়তা দেবার পারফরম্যান্স রাখতে পারলেন না এই এশিয়া কাপে৷ যদিও ভুবনেশ্বর কুমার, কেদার যাদবরা রুবেল হোসেনদের বিরুদ্ধে শেষ বলে শেষের হাসিটা হাসতে পেরেছেন৷