গণতন্ত্রের স্বার্থেই লোকপাল  নিয়োগ আবশ্যিক

লেখক
প্রভাত খাঁ

গত ৭০ বছর আগে  মহান দেশ ভারতবর্ষকে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভাগ  করে নিছক রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেতে সাম্রাজ্যবাদী  শক্তি সাহায্য করায় আমরা রক্তাক্ত দেশ জননীকে পাই৷ এতোদিন ধরে  বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দেশকে শাসন করে আসছে ৷ তারমধ্যে কত যে ঘটনা ঘটে গেছে হিসাব নেই৷  এদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের দলগুলির যে কত রূপ দেখেছি তাও এক  বিস্ময়কর৷ রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের জন্য কতো দল ঢং করে বিরোধী দলে  ঢুকে বন্ধু সেজেছে তাও এক মহাভারত৷  কংগ্রেসের মিলিজুলি সরকার গত ২০১৩ সালে শেষের মূহূর্তে লোকপাল ও লোকায়ুক্ত আইন পাশ করে  কিন্তু  এখনও  পর্য্যন্ত লোকপাল গঠন হয় নি৷ গত ২০১৭তে উল্টে মোদি সরকার  বিজেপি শাসিত এই আইন সংশোধনের জন্যে বিল আনেন৷ কিন্তু সেই বিল তিলমাত্র এগোতেই পারেনি৷ শীর্ষ আদালত  সুর্প্রিম কোর্ট লোকপাল নিয়োগ এতে কেন দেরি হচ্ছে তার কারণ জানতে চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে  তথ্য পেশের  নির্দেশ দেন৷  কেন্দ্রীয় সরকার জানায় যে আগামী ১লা মার্চ বৈঠকে বসবে সরকার৷ ২০১৩ সালে বিল পাশ হয়েছে  কিন্তু ৫ বছর কেটে গেছে লোকপালকে জনগণ দেখতে পেল না৷

গণতন্ত্রের দৈন্য দশা দেশে বেড়েই চলেছে৷ নতুন সরকার লোকসভাকে বাদ দিয়ে  অর্থাৎ পাশ কাটিয়ে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে সই করিয়ে  ২০১৬ সালের নবেম্বরে সমস্যা সংকুল ভারতে জরুরী ভিত্তিতে  বড় নোট বাতিলের জরুরী আইন জারি করে হতভাগ্য জনগণকে  চরম আর্থিক সংকটে ফেলে দেয়৷ যা সরকারের পক্ষে শ্লাঘার হয়নি৷  গণতন্ত্রে কাজটি অতি জঘন্য হয়েছে৷  গণতন্ত্রের স্বার্থেই লোকপাল নিয়োগ প্রয়োজন  কারণ যেভাবে দেশ শাসিত হচ্ছে সেটা এক ধরনের  স্বৈরাচারিতার  নামান্তর বিশেষ৷ একে সংযত করতে না পারলে  গণতন্ত্র অবশ্যই ধবসে যাবে৷

মনে পড়ে ইন্দিরাগান্ধী লোকসভাকে অন্ধকারে রেখে  রাষ্ট্রপতি ফকিরউদ্দিনকে দিয়ে জোর করে অভ্যন্তরীণ জরুরী অবস্থা জারী করে বিভিন্ন সংঘটনকে নিষিদ্ধ করে যেমন আনন্দমার্গের মতো সেবামূলক  সংঘঠনকে নিষিদ্ধ করে সর্বক্ষণের কর্মী ও গৃহী মার্গীদের কারারুদ্ধ করে দীর্ঘ প্রায় ২ বছর  আটক করে  রেখেছিল৷  এই ধরণের স্বেচ্ছাচারিতার  কারণে কংগ্রেস নির্র্বচনে জনসমর্থন হারিয়ে  বসে৷ দেশে এক রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে৷ তাই গণতন্ত্রে শাসকগণ জনগণকে মান্য করার মানসিকতা ত্যাগ করে৷ সেবার মানসিকতার অগ্রাধিকার দেওয়াকে  প্রাধান্য দেওটাই সুশাসনের অঙ্গ৷  জনগণ সবই দেখেন  ও সঠিক  সময়ে  তার প্রতিকারও করে থাকেন ৷ সরকারকে  লক্ষ রাখতে হবে ও সাবধান হতে হবে যাতে শাসনের ফাঁক দিয়ে দেশে সীমাহীন লোভ ও নীতিহীনতা মাথা চাড়া দিয়ে না ওঠে৷

মনে পড়ে ইন্দিরা গান্ধি একটি আইন করেন তাহলে সরকারের  অনুমতি ছাড়া কোন নাগরিক  কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রধান শাসকদের বিরুদ্ধে কোন মামলা রুজু করতে পারবে না৷  এই আইন পাশ করা  হয় তখন যখন  খোদ ইন্দিরা গান্ধী রাজনারায়ণের কাছে মামলায় হারেন তাই গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা ফেরাতেও শাসক গণকে  সচেতন  ও সজাগ করতেই  এই লোকপালও লোকআয়ুধ বিল পাশ করা হয় কিন্তু গত ৫ বছর ধরে লোকপাল  নিয়োগ হয়নি৷

এই লোকপাল  বিধি নিয়োগ কমিটির সদস্যরা  যাঁরা আছেন  তাঁরা  হলেন প্রধানমন্ত্রী ও সুপ্রিমকোর্টের  প্রধান বিচারপতি ৷ সরকারের পক্ষ থেকে বর্ত্তমান সরকারের প্রতিনিধি মকুল রোহতগিই  প্রধান বিচারপতির মুখোমুখি হন৷  সুর্প্রিমকোট জানিয়েছেন  যে বিরোধী দলনেতার  পদটি  খুবই  গুরুত্বপূর্ণ৷ তবে  বিরোধী দল নেতার পদ বাদ দিয়ে লোকপাল  আইন পাশ করা যাবে৷

ভারতের  মতো বিরাট দেশে  আইনের ঊধের্ব যাতে কেউই  থাকতে না পারেন  সেই  কারণেই  মনে হয় লোকপাল  নিয়োগ প্রয়োজন৷ গণতন্ত্রকে রক্ষার  স্বার্থেই এই মহান আইন  জরুরী৷ বর্তমানে  বিরাট দেশ ভারতে গণতন্ত্রের নামে  শাসকগণ যা ইচ্ছা তাই করে চলেছে, কি কেন্দ্র ও কি রাজ্যে৷

অত্যন্ত দুঃখের  কথা তা হলো  শাসকগণতো বিরোধী দলকে নির্মূল করতে  এমন সব কান্ড করছে যেটা গণতন্ত্র বিরোধী৷ গণতন্ত্রে যদি  বিরোধী দল না থাকে তাহলে সেটাতো একদলীয় স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম হবে দেশে৷ সেটাকে  তো কোন অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না৷

মোদ্দাকথা হলো লোকপাল নিয়োগ যে প্রয়োজন  সেটাকে  অবশ্যই মান্যতা দিতে হবে৷  আমরা আশাকরি, ভারত তাঁর নীতিবাদ ও আধ্যাত্মিকতার কারণে  বিশ্বে শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করবে৷ কিন্তু দুর্নীতির তালিকায়  ভারতের  স্থান ৮১তে৷ দুর্নীতিগ্রস্ত সেই সব নেতাদের উপযুক্ত শান্তি বিধান করতে হবে৷ ভারতকে  তার হৃতগৌরব  ফিরে  পেতেই হবে৷ ভারতের ন্যায় সত্য ও মানবিকতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সকল বাধা ও দুর্নীতিকে পায়ে দলে৷