গত ১২ই ফেব্রুয়ারী কলকাতায় আনন্দমার্গের কেন্দ্রীয় আশ্রম সহ বিশ্বের সর্বত্র  মহাসমারোহে ‘নীলকন্ঠ দিবস’ পালিত হয়৷ 

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

এই উপলক্ষ্যে এদিন কলকাতা ও পাশ্ববর্তী এলাকার  আনন্দমার্গীরা কেন্দ্রীয় আশ্রমে মিলিত হয়ে বিকেল ৩টে থেকে ৬টা পর্যন্ত অখণ্ড কীর্ত্তন করেন৷ এর পর মিলিত সাধনা  ও স্বাধ্যায়ের  পর  আচার্য সর্বেশ্বরানন্দ অবধূত কীভাবে মার্গগুরু  শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজীকে বারে  বারে হত্যা করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল তার বিস্তারিত ইতিহাস বর্ণনা করেন৷  শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী যে সমাজের সমস্ত প্রকার অন্যায় ও শোষণের অবসান ঘটিয়ে সমাজে ন্যায়, সত্য ও ধর্মের প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী, তা জানতে পেরে কায়েমী স্বার্থবাদীরা বারে বারে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে৷ ১৯৬৭ সালে আনন্দনগরে,১৯৭০ সালে কোচবিহারেও তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছিল৷ এতে ব্যর্থ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে  সিবি আই-এর মাধ্যমে মিথ্যা অভিযোগ  এনে তাঁকে গ্রেফতার  করা হয় ও পটনা বাঁকিপুর  সেন্ট্রাল জেলে আটক করে রাখা হয়৷ এখানে তাঁর সঙ্গে আনন্দমার্গের অন্য যে সব কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের অন্য জেলে  স্থানান্তরিত করে প্রথমে  মার্গগুরুকে ওখানে একাকী করে  দেওয়া হয়, তারপর ১৯৭৩ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারী ওষুধের নাম করে জেলের ডাক্তারের মাধ্যমে তাঁর ওপর বিষ প্রয়োগ করা  হয়৷ এই বিষের তীব্র প্রতিক্রিয়ায় তাঁর চোখ মুখ ফুলে যায়, চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়তে থাকে৷ পরে শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী তাঁর  ঐশী শক্তির সাহায্যে এই বিষের ক্রিয়াকে নষ্ট করে দেন৷ তিনি তাঁর ওপর ওষুধের  নাম করে  বিষ প্রয়োগের বিচার বিভাগীয়  তদন্ত দাবী করেন৷ সরকার এই দাবী মানে নি৷  পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন আইন মন্ত্রী অমর প্রসাদ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে এক বেসরকারী তদন্ত কমিশন গঠিত হয়৷ এই কমিশন যথারীতি সাক্ষীসাবুদ নেয় ও শেষে রায় দেয়, যথার্থই শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজীর ওপর  বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল৷ এরপর আন্তর্জাতিক পর্যায় মার্গগুরুর ওপর বিষ প্রয়োগের তদন্ত হয়৷ রাণী এলিজাবেথের উপদেষ্টা এইচ.জি.ওয়েলস নিরপেক্ষ তদন্ত করে রায় দেন শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজীর ওপর বাঁকীপুর সেন্ট্রাল জেলে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল৷ শ্রীশ্রী আনন্দমূত্তিজী এই বিষপ্রয়োগের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবীতে ১৯৭৩ সালের ১লাএপ্রিল থেকে ৫ বছর ৪মাস ১দিন অনশন করেন৷ অবশেষে উচ্চআদালতের রায় তিনি সম্পূর্ণ নির্র্দেষ প্রমাণিত হয়ে ১৯৭৮ সালের ২রা আগষ্ট মুক্তি লাভ করেন৷

আচার্য সর্বেশ্বরানন্দ অবধূত আরও বলেন, জনৈক সিবিআই ডাইরেক্টর অবসর গ্রহণ করার পর তাঁর ঘনিষ্ঠ  এক আনন্দমার্গীকে জানিয়ে ছিলেন, জেলে বিষপ্রয়োগে হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর  সরকারী নির্দ্দেশে সিবিআই-এর পক্ষ থেকে  শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজীকে জেলের ভেতরে আবার হত্যা করার জন্য  ওই জেলের একজন সাজাপ্রাপ্ত খুনীকেও লাগানো হয়েছিল৷ ওই খুনী প্রথমবার পুলিশ পরিবৃত হয়ে শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজীর সেলে গিয়ে দেখে  ওই সেলে  কেউই নেই৷ সে ফিরে আসে৷ দ্বিতীয়বার সিবিআই থেকে আবার তাকে পাঠানো  হয়৷ দ্বিতীয়বার গিয়ে দেখে ঘরের মধ্যে এত তীব্র জ্যোতি যে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না৷ সেবারে ও ফিরে আসে৷ তৃতীয়বার আবার তাকে জোর করে পাঠানো হয়, এবার সে দেখে সেলের মধ্যে অনেক আনন্দমূর্ত্তিজী  বসে আছেন৷ শেষ পর্যন্ত  সে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ করে ও তাঁর এই কাজের জন্যে ক্ষমা চায়৷ সিবিআই এই ভাবে বারে বারে  শ্রীশ্রী আনন্দমূত্তিজীকে হত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়৷

এই ‘নীলকন্ঠ দিবস’ স্মরণ করিয়ে দেয় অন্যায় ও অসত্যের সঙ্গে সংগ্রামে ন্যায়, সত্য ও ধর্মের চিরকালীন জয় হয়৷

কৃষ্ণনগরে ঃ এই দিন কৃষ্ণনগর ঘূর্ণী স্যাকরাপাড়া আনন্দমার্গ স্কুলে মহাসমারোহে নীলকণ্ঠ দিবস পালিত হয়৷ সকাল থেকেই কৃষ্ণনগর ইয়ূনিটের সমস্ত মার্গী ভাইবোনেরা স্কুলে চলে আসেন৷ সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অখণ্ড কীর্ত্তন অনুষ্ঠিত হয়৷ কীর্ত্তন পরিচালনা করেন অবধূতিকা আনন্দ বিভূকণা আচার্যা ও শ্রী কৌষিক সরকার৷ কীর্ত্তন ও সাধনা শেষে এই দিনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত৷ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন স্যাকরাপাড়া আনন্দমার্গ স্কুলের অধ্যক্ষা ব্রহ্মচারিণী সমর্পিতা আচার্যা ও স্থানীয় মার্গী ভাই-বোনেরা৷

হাওড়া ঃ হাওড়ায় বাগনানের বাক্সী গ্রামে ডাঃ চাঁদমোহন পালের বাড়ীতে হাওড়া জেলার মার্গীদের উপস্থিতিতে সমারোহের সঙ্গে ভজন, কীর্ত্তন ও নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে নীলকণ্ঠ দিবস পালিত হয়৷

পাপশক্তির বিরুদ্ধে আনন্দমার্গের ও আনন্দমূর্ত্তিজীর সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন বকুল চন্দ্র রায়৷