জনপ্রতিনিধিরা জনচক্ষুর আড়ালে কেন?

সংবাদদাতা
মনোজ দেব
সময়

মহারাষ্ট্রে গণতন্ত্রের প্রহসন নাটকের অন্তিম পর্বে এসে পৌঁচেছে৷  এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত৷ সুপ্রিম কোর্টের রায় আস্থা ভোটের পক্ষে যাওয়ার পর আর দেরি করেন নি উদ্বব ঠাকরে৷ সপুত্রক রাজ্য পালের কাছে গিয়ে ইস্তফা দিয়ে আসেন৷  নূতন সরকার ঘটন এখন সময়ের অপেক্ষা অর্থ ও রাজশক্তির বলে গণতন্ত্রকে প্রহসনে পরিণত করে ক্ষমতার হাত বদলের আরও একটি অধ্যায় রচিত হলো মহারাষ্ট্রে৷

শিবসেনা নেতা একনাথ সিন্ধে উদ্ববের বিরুদ্ধে তার ক্ষোভের কারণ না জানিয়েই রাজ্য ছেড়ে বহুদূরে অসমের বিলাস বহুল হোটেলে দলবল নিয়ে আশ্রয় নেয়৷ প্রশ্ণ এখানেই?

উদ্ববের বিরুদ্ধে কোন অনৈতিক অভিযোগ থাকলে তা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি সিন্ধে ও তার দলবল জন আদালতে বিচার চাইলেন না কেন? এখানেই সন্দেহ উদ্ববের সরকার ফেলার পেছনে কোন কালো হাতের অনৈতিক ও অর্থনৈতিক খেলা আছে! উদ্বভ ও সিন্ধেরা ভোটের আগে বিজেপি জোটে থাকলেও ক্ষমতা দখলের দ্বন্দ্বে বিজেপি জোট ছেড়ে কংগ্রেস এন.সিপির সঙ্গে হাত মেলান৷  তখনও জনতার রায়কে সম্মান জানাননি উদ্ববের দল, যার দায় সিন্ধেরও ছিল৷

এইভাবে ক্ষমতা দখলের নেশায় দলবদল ও জোট বদলের  খেলায় ভারতীয় রাজনীতির কারবারিরা বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রকে প্রহসনে পরিণত করেছে৷ গণতন্ত্রে অনেক সময় ব্যষ্টির প্রভাবে ভোটে জেতা যায়৷ কিন্তু মূলত দলীয় আদর্শ ও নীতির প্রতিফলনও নির্বাচনের রায়ে পড়ে৷ বিশেষ করে সচেতন ভোটার যাঁরা তাঁরা কিন্তু ব্যষ্টির নৈতিক মূলবোধকে সম্মান করলেও মূলত দলের নীতি ও আদর্শ বিবেচনা করেই বোট দেন৷ কারণ বহুদলীয় গণতন্ত্রে কোন একজন ব্যষ্টি রাষ্ট্রের চালক হয়ে বসেন না৷ সেখানে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল শাসন ক্ষমতা আসে৷ তাই সেখানে ব্যষ্টির নৈতিক মানবিক, রাজনৈতিক মূলবোধ সব সময় কাজে আসে না৷ একথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পদে থাকাকালীন  একবার স্বীকারও করেছিলেন৷ তিনি নিজে বন্ধের সমর্থক ছিলেন না৷ তাই দুঃখ করে বলেছিলেন আমি যে দল করি তারা বন্ধ চায়৷ তাই রাজনীতি সচেতন ব্যষ্টিরা দলের আদর্শ নীতি বিচার করেই বোট দেন৷

তাই কোন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যদি দল ছাড়তে চায়, অন্য দলে যেতে চায় বা তারই সরকারের কোন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে তবে তা নিয়ে জনতার দরবারেই দাঁড়ানো উচিত৷ কৌশলে দল ছেড়ে অন্যদলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়ার খেলায় আর যাই হোক নৈতিক মূলবোধের ছিটে-ফোঁটাও থাকে না৷ ভারতবর্ষের রাজনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ যে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে তার অন্যতম কারণও নেতাদের অনৈতিক দলবদল৷ স্বার্থে ঘা লাগলেই অন্যদলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বা জোট বেঁধে সরকার ফেলে প্রতিশোধ নেওয়া যায়, কিন্তু জনগণের কল্যাণ করার যে দায় জনপ্রতিনিধির সে দায়িত্ব বোধের পরিচয় দেয় না৷ তবে বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের কতজন নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন সে প্রশ্ণও থেকে যায়৷ দায়িত্ব ও কর্তব্য অবহেলার কারণেই জনপ্রতিনিধিরা অনেক সময় জনগণের সামনে দাঁড়াতে ভয় পান৷ তাই মুখ লুকোতে রাজ্য ছেড়ে বহুদূরের বিলাস বহুল হোটেলে আশ্রয় নিতে হয়৷ বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র এই লজ্জার হাত থেকে কবে মুক্ত হবে!