ঝাড়ু হাতে অমিত-মোদী, আর বুলি তাঁদের বিবেক-রবি

লেখক
 কৃষ্ণমোহন দেব

মোদীজী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর হাতে ঝাড়ু নিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করা দেখাচ্ছেন আর বলছেন যে স্বচ্ছ ভারত গড়ে তুলবে হবে৷ সেইসঙ্গে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ ও তাঁর দলের সাঙ্গ-পাঙ্গগণও লেগে গেলেন ঝাড়ু হাতে রাস্তা পরিষ্কারের কাজে৷ উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগী  মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার  পরও ঝাড়ু হাতে রাস্তা পরিষ্কার করা দেখাতে লাগলেন৷ মোদিজীর, অমিতজীর ও আদিত্যনাথজীর  ঝাড়ু হাতে ছবি মিডিয়া ও পত্রিকাগুলিতে  ফলাও করে প্রকাশ  হয়েছে৷ ঝাড়ু হাতে রাস্তা পরিষ্কার করার দ্বারা এঁরা নিজেদের জাহির করতে চেয়েছেন যে---আমাদের দেশ সেবার পরাকাষ্ঠা কতখানি৷ কিন্তু এর আগে অর্থাৎ দেশের প্রধানমন্ত্রী বা বিজেপির সভাপতি হওয়ার আগে ওঁদের এমনটা করতে তো কখনও দেখতে পাইনি৷ এ তাহলে সাধারণ মানুষকে চমক দেখিয়ে জনগণকে আকর্ষণ করা ও ভোট পাবার স্পষ্ট মনোভাব৷ কোলকাতায়  প্লেগ রোগের মহামারীতে স্বামী বিবেকানন্দ ও  সেই সঙ্গে সিস্টার নিবেদিতা ঝাড়ু হাতে  জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন৷  তাঁদের  একটিমাত্র প্রাণের আকুতি ছিল মহামারী থেকে শহরবাসীকে রক্ষা করা৷ একেই বলে সেবাকার্য ৷ সেবাকার্যের দৃষ্টান্ত প্রধানমন্ত্রী হলে, পার্টির সভাপতি  বা মুখ্যমন্ত্রী হলে তবে দেখাতে হবে তা তো নয়৷ বিবেকানন্দের সেবার মানসিকতা ও মোদীজীর সেবার মানসিকতা কি এক?

সেবা কাকে বলে বলে? নিঃস্বার্থভাবে কোন কোন কিছু করে’ মানুষের বা জীবের কষ্ট দূর করাই হলো সেবা৷  মানুষের  কষ্ট দূর করার বিনিময়ে বা প্রতিদানে যদি প্রচ্ছন্নভাবে হোক, পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ্যভাবে জাগতিক কোন কিছু লাভ করার মনোভাব থাকে, তবে তা সেবা নয়--- তাকে বলে ব্যবসা৷ এমন ব্যবসায় অর্র্থৎ ব্যবসায়িক মনোভাব নিয়ে অন্যের কষ্ট দূর করার  ক্রিয়াকলাপ মানুষ মাত্রই করে থাকে৷ ৷ বর্ত্তমানে বিধায়ক বা সংসদ সদস্যগণ ও মন্ত্রিগণ যে মানুষের উপকার করে থাকেন তাদের একটি মাত্র উদ্দেশ্য থাকে---ভোট-প্রাপ্ত হওয়া৷ তাঁরা মুখে  বলে  বা জনগণকে বলে থাকে তাঁরা দেশসেবক  কিন্তু তাঁরাও ব্যবসায়ী৷ তাঁদের ভাতার পরিমাণ লক্ষাধিক টাকা আর উপরি আয় ও যথেষ্ট৷ মানুষকে প্রকৃত সেবা করার একটিমাত্র উদ্দেশ্য যে সেই সেবার দ্বারা তার মন ও হৃদয় পবিত্র হয় ও সে যেন ঈশ্বরের কৃপা বা আর্শীবাদ-ধন্য হয়৷ প্রকৃত সৎ মানুষদের, সাধু-সন্ত-সন্ন্যাসীদের জনকল্যাণের জন্যে নিয়মিত সেবা কার্য করে চলতে হয়৷ দেশের প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী হলে পর ঝাড়ু হাতে কাজ করে মানুষকে আকর্ষণ করার মনোভাব---এটা কিন্তু সেবা নয়---লোক দেখানো ব্যাপার৷

ধর্মের চারটি অঙ্গ--- ১) বিস্তার, ২) রস, ৩) সেবা, ৪) তদ্স্থিতি৷ বিস্তার মানে মনে  সদা ভাবনা রাখতে হবে---সবই ঈশ্বরের বিকাশ আর আত্মপর ও গোষ্ঠী-সম্প্রদায় নির্বিশেষে শিবজ্ঞানে বা নারায়ণ জ্ঞানে  যে কোনো জীবের সেবা করে  চলতে হয় ধার্মিকদের৷ এতে ধর্ম পথে  চলা মানুষটির মন সংকীর্ণতা-মুক্ত হয়, মন উদার  তথা নির্মল হয়৷ এই সেবাকার্যে ঈশ্বর খুশী হন ফলে সে মানুষটি ঈশ্বরের প্রসাদ লাভ করেন৷ তাই মানুষ মাত্রেরই  সেবাব্রতে ব্রতী হতে হয়৷

আবার, মোদিজী যে বলছেন স্বচ্ছ ভারতের কথা আর তা নাকি  তৈরী  হবে ঝাড়ু দিয়ে রাস্তাঘাট পরিষ্কার  ও পরিচ্ছন্ন করার দ্বারা৷ কিন্তু দেশ বলতে মুখ্যভাবে বুঝি দেশের জনগণ, স্থানটা তো গৌণ৷ যদি জনগণের মনগুলি নোংরাতে ভরে থাকে আর রাস্তাঘাট ঝকঝকে ও চক্চকে হয়ে গেল  তাতে কি স্বচ্ছভারত হয়ে গেল? মানুষের মনের ময়লা বা নোংরাগুলি হলো তার কু-চিন্তাগুলি৷ আর এগুলির পেছনে রয়েছে মানুষের মনের ষড়রিপু ও অষ্টপাশ মানুষ যত কু-কর্ম, অপরকে শোষণ, সমাজবিরোধী কাজ করে, এর কারণ তারমধ্যে ওই ষড়রিপু ও অক্টপাশগুলি৷ আজ ভারতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে  অনৈতিকতা ছেয়ে গেছে৷ আর তা পঞ্চায়েত স্তর থেকে পার্র্লমেন্ট পর্যন্ত---নিম্নতম কার্র্যলয়গুলি থেকে সর্র্বেচ্চ কার্র্যলয়গুলি পর্যন্ত৷ মানুষ যত জডবাদী মানসিকতার হবে তাতে ওই ষড়রিপু ও অক্টপাশের প্রকোপ তার মধ্যে তত বেশী হবে৷  সে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে কু-কর্ম বা অসামাজিক ক্রিয়াকলাপে লিপ্ত হবে৷ আজ উৎকোচ দেওয়া ছাড়া অফিসে অফিসে কোনও সরকারী পরিষেবা সহজে প্রাপ্ত হওয়া যায় না৷  নারীর অবমাননা, বধূ নির্র্যতন যেমন ঘটছে তেমনি মেয়েরাও মিথ্যার আশ্রয়  নিয়ে স্বামী নির্র্যতন, স্বামী হত্যা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী নির্র্যতন  করার ঘটনা ঘটাচ্ছে৷ ভাই ভাইকে হত্যা করে পুরো  সম্পত্তির মালিক হওয়ার ঘটনা ঘটছে৷ বৃদ্ধ মা-বাবাকে সেবাযত্নের বদলে তাদের বাড়ী থেকে বের করে দিচ্ছে বা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে৷ ডাকাতি, রাহাজানি,চোরা কারবারী , মেয়েদের ওপর বলাৎকার, হত্যাকাণ্ড নিত্যই ঘটে চলেছে৷ এই সব অনৈতিক, অমানবিক ও  সমাজ বিরোধী কার্যকলাপগুলির  প্রতিকার বা নিবারণ কীভাবে হবে সে ব্যাপারে কোনও উপযুক্ত ব্যবস্থা  গ্রহণ না করে কেবল ঝাড়ু মেরে স্বচ্ছভারত গড়তে চান আমাদের মাননীয় প্রধানমনন্ত্রী মোদিজী ও  বিজেপি পার্টি৷ দিল্লীতে অভয়া ধর্ষণকান্ডের  পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত্ত প্রতিবাদ ও প্রতিকার আন্দোলন দেখা দিয়েছিল৷ আর উচ্চ আদালত এই জঘন্য কাজের জন্যে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান (রুলিং) দিয়েছিলেন৷  তা সত্ত্বেও ওই ধরণের কাণ্ড দিল্লীতে আবার ঘটেছিল৷ মানুষ যদি  পশুস্তরে নেমে যায় সেখানে আইনের বিধান কোনো কাজ করে না৷  যেমন গোরুদের জন্যে আইন করা হল যে, তারা মাঠে চরবে , কিন্তু সব্জী ক্ষেতে চরলে তাদের সাজা হবে৷ গোরুরা এই আইন থাকল কী  থাকল না এসব না ভেবে সব্জী ক্ষেতে গিয়ে সব্জি খাবেই৷ তেমনি আজকের যে সব মানুষ এমন পশুস্তরে নেমে গেছে তাদের শুধু আইন করে কী তাদের কু-কর্ম বন্ধ করা যাবে? দেশের মানুষের নৈতিক মান কীভাবে বৃদ্ধি পাবে সে চেষ্টাই শাসকদের করতে হবে৷ আগে রাজতন্ত্রেও এটাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য৷ এই নৈতিক জাগরণের মাধ্যমেই স্বচ্ছ-ভারত গড়ে উঠবে৷ দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে  অনৈতিক কার্যকলাপ দূর করার জন্যে মোদীর স্বচ্ছভারতের ভাবনার থেকে  আন্না হাজারের প্রচেষ্টা বরং প্রশংসনীয়৷

স্বামী বিবেকানন্দেরক শিকাগো বত্তৃণতার ১২৫ বছর পূর্ত্তি উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লীর বিজ্ঞানভবনে তরুণদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদীজী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ও বাংলার ইতিহাস আর ভারতের উন্নতিতে এই রাজ্যের অবদানের কথা তুলে ধরেছেন৷ মোদিজী বলেছেন ---‘‘স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো বত্তৃণতা ও রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার লাভ--- এই দুই ঘটনা পরাধীন ভারতে নোতুন চেতনা ও শক্তি সঞ্চার করেছিল৷ মোদিজী বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে যা বলতে চাইছেন, তা বহু আগেই ভারতের ও ভারতের বাহিরে সংকীর্ণতামুক্ত বিদগ্দজনেরা উদাত্ত কণ্ঠে বিবেকানন্দের সমন্বয়মুখী ও রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী ভাবধারাকে স্বীকার করে গেছেন৷ প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আর.ড়ি প্রধান বলেছেন যে যদি জাতির জনক কাউকে বলতে হয়, তবে স্বামী বিবেকানন্দকেই  বলা উচিত কারণ জাতীয়তাবাদী ভাবধারার মূলে ছিল বিবেকানন্দের অবদান আর তাঁর ওই শিকাগোর ভাষণ৷ মহান জ্ঞানী ও দার্শনিক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন বিবেকানন্দের সমন্বয়মুখী ভাবধারাকে বারে বারে তুলে ধরেছেন৷ মনীষী রোমারোলা স্বামী বিবেকানন্দকে উচ্চস্তরের মহামানব হিসেবে দেখেছেন৷ ব্রিটিশের কাছে ভারত ছিল সভ্যতা ও ধর্মের দিক দিয়ে  পিছিয়ে পড়া দেশ৷ ব্রিটিশরা বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছিল যে ভারতে তারা সভ্যতার বিকাশ ঘটাচ্ছে৷ তাতে পাশ্চাত্ত্য দেশগুলির এমন ধারণাই হয়েছিল৷ কিন্তু  বিবেকানন্দের শিকাগো ভাষণ ও রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরষ্কার জয় পাশ্চাত্ত্য দেশগুলি সহ আমাদের দেশের যুবগোষ্ঠীর ভ্রান্তধারণা দূর করে দিয়েছিল৷  যে দেশে ধর্ম এমন উদার  ও যে দেশ এমন পরধর্ম সহিষ্ণু আর দেশের মানুষের  অর্র্থৎ রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সৃষ্টি অতিমানবিক তথা মানসাতীত, সে দেশ যে উন্নত দেশ---এই ধারণা পাশ্চাত্ত্য দেশগুলির মধ্যে জেগেছিল-স্বামী বিবেকানন্দ ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের অবদানের ফলে৷ আবার ভারতের যে যুগগোষ্ঠী নিজেদের সভ্য বলে পরিচয় দেওয়ার জন্যে ইংরাজীয়ানা ও খ্রীষ্টানধর্ম নেওয়ার জন্যে লাইন দিচ্ছিল তাদের ভ্রম দূর হয়েছিল৷ এর পেছনে ছিল বিবেকানন্দের অবদান৷ ভারতের ধর্ম ও ঐতিহ্য রক্ষার যে তাগিদ  যুব সমাজের মনে জেগেছিল তাই ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলভিত্তি৷ তাই ঐতিহাসিক আর ডি-প্রধান যথার্থ বলেছেন জাতির জনক যদি বলতে হয় তো বিবেকানন্দজীকে বলা উচিত৷

স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগোতে ভারতের অদ্বৈত মতবাদকে বিশ্বধর্মসভায়  তুলে ধরেছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন, সৃষ্টির সব কিছু এক অদ্বৈত সত্তা থেকে এসেছে৷ তাই আমাদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই, সবাই একই সত্তায় গড়া৷ এই সমন্বয়ের বাণী তিনি সেখানে উদঘোষিত করেছিলেন৷ মোদিজী ও মোদি পার্টি বিজেপি হিন্দুধর্ম বলতে ‘রাম জন্মভূমি’র রামমন্দির ও অস্ত্র হাতে রাম নবমীর মিছিল, কু-সংস্কার  ও ভাব জড়তাশ্রয়ী ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে ধর্ম মনে করে’ মানুষের মধ্যে ভাবাবেগ জাগিয়ে জনগণকে আকৃষ্ট করে ভোট  পাওয়ার জন্যে বিবেকানন্দের প্রশস্তি গেয়েছেন৷ এটা আসলে সুবিধাবাদী ও কপট মানসিকতার পরিচয়৷  আমাদের মনে রাখতে হবে, মানুষের প্রকৃত ধর্ম একটাই, সে ধর্ম হ’ল মনের ব্যাপ্তি ঘটানো৷ বৃহদেষনা প্রণিধানঞ্চধর্ম৷ প্রতিটি মানব মন ব্যাপ্তি চকায় ও ব্যাপ্তিতেই  মানব মন স্বস্তি লাভ করে৷ বিভেদ ও সংকীর্ণ ভাব তা কোন সম্প্রদায়গত হোক বা গোষ্ঠীগত হোক তা মানব মনের বন্ধনের কারণ৷ তা প্রকৃত ধর্মের সারকথা হতে পারে না৷

বহুমুখী প্রতিভাবান রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তিতে বাংলা ভাষা বিশ্বের দরবারে সুউচ্চস্থান করে নিয়েছিল৷  এই বাংলা ভাষার শরৎ সাহিত্য, বঙ্কিম সাহিত্য ও রবীন্দ্র সাহিত্য থেকে হিন্দি ভাষার সাহিত্যও সমৃদ্ধ হয়েছে৷ আজ পশ্চিমবঙ্গে এই বাংলা ভাষার করুণ অবস্থা৷  কেন্দ্রীয় সরকারের ষড়যন্ত্রে হিন্দিভাষার আগ্রাসনে সেই বাংলাভাষা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গে হিন্দিমাধ্যমের সুকলের সংখ্যা বাড়ছে আর বাংলা মাধ্যম সুকল বন্ধ হচ্ছে৷ পরাধীন ভারতে বিহার ও বর্তমান ঝাড়খণ্ডে যে বাংলা মাধ্যমের সুকলগুলি ছিল সেই সব সুকলগুলিকে হিন্দিমাধ্যম করে দেওয়া হয়েছে৷ মোদিজী দিল্লীতে বিজ্ঞানভবনে দেশের উন্নতির ক্ষেত্রে বাংলার অবদানের কথা বলে  পশ্চিমবাংলার মানুষের মন জয় করতে চাইছেন আগামী লোকসভায়  নির্র্বচনের দিকে লক্ষ্য রেখে৷ কিন্তু এদিকে বাঙালীর পরিচিতি তথা জাতিসত্তা যে বিনষ্ট হতে বসেছে দিল্লীর বিমাতৃসুলভ আচরণে ও হিন্দি সাম্রাজ্যবাদিতার জন্যে সে দিকে তো মোদিজীর সচেতনতা দেখছি না৷ উল্টে এই বিবেকানন্দের, ববি ঠাকুরের, চৈতন্য মহাপ্রভুর বাংলার অঙ্গচ্ছেদ করতে বিজেপি আসকারা দিচ্ছে৷ বিজেপির আলুওয়ালিয়া সাংসদ হয়েছেন তাঁর ইস্তাহারে এই বলে যে গোর্র্খল্যান্ডের কথা বিবেচনা  করা হবে৷ বিজেপির নেতারা বলেছেন, ছোট রাজ্য হলে মানুষের নাকি উন্নতি হবে৷ আবার মুখে বাইরে  বলছেন আমরা বাংলা ভাগ চাই না৷ গুরুং পাহাড় জ্বালাচ্ছে-এর পিছনে  বিজেপির পরোক্ষ মদত সুস্পষ্ট৷ এটাই মোদি ও মোদির পার্টির  বঙ্গপ্রীতি? গোর্র্খরা  বাহিরাগত৷ গুরুংয়ের সঙ্গে চীনের যোগসাজসও সন্দেহাতীত৷ বাঙলার স্বার্থে নয় ভারতের নিরাপত্তার স্বার্থে মোদি ও মোদির  পার্টির নেতারা গোর্র্খল্যাণ্ড আন্দোলনের প্রতিবাদ করছেন না কেন? ১৯৫০ সালের ভারত ও নেপাল চুক্তিতে শুধু রুজি রোজগারের জন্যে নেপালীদের ভারতে আসার অনুমতি রয়েছে কিন্তু ভারতের অঙ্গরাজ্য ভেঙ্গে গোর্র্খল্যান্ড করার জন্যে নেপাল থেকে আসার অনুমতি দেওয়া হয়নি৷  এই সহজ সত্য কথাটা ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজী দেশাই গোর্খাল্যাণ্ড আন্দোলনকারীদের শুণিয়ে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদিজী কেন এই স্পষ্ট কথাগুলি বলতে পারছেন না? তাহলে কীসের বঙ্গপ্রীতি? কীসের বিবেকানন্দ-প্রীতি বা কীসের রবীন্দ্র-প্রীতি! বাংলার মানুষ মোদিজীর কেবল চমকদারী কথাতে ভুলবে না৷ মোদিজী তো আসলে চমক দেওয়ার মাষ্টার৷ নোটবাতিলের চমক, ‘‘আচ্ছে-দিনের’’ চমক, বিদেশ থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে আনার চমক---মোদিজী চমকের পর চমক দিয়ে চলেছেন৷ স্বামীজি-প্রীতি, রবীন্দ্র-প্রীতি এসব মোদিজীর চমক ছাড়া কিছুই নয়৷