আর একটা রেল দুর্ঘটনা, মোদি জমানায় গত দশ বছরে প্রায় ২৫টি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ ১৭ জুন এন.জে.পি ছেড়ে শিয়ালদহগামী কাঞ্চজঙ্ঘা এক্সপ্রেস রাঙাপানি পেরোতেই পিছন থেকে একটি মালগাড়ী এসে ধাক্কা মারে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে৷ ১১ জনের মৃত্যু পঞ্চাশজনের বেশী আহত৷ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকার্য, নেতা মন্ত্রীদের দুঃখ প্রকাশ দুর্ঘটনার পর যা যা বিধিসম্মত সবই হলো৷ তারপর আর একটি দুর্ঘটনার অপেক্ষায়৷ কিন্তু সেই ছোট্ট মেয়েটি যে তার জন্মদিনের উৎসবে বাবার অপেক্ষায় ছিল--- তার বাবা আর কোন দিন আসবে না, কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্ঘটনা চিরদিনের জন্যে তার বাবাকে তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে৷ আজীবন এক মর্মান্তিক স্মৃতি নিয়ে চলতে হবে মেয়েটিকে৷ যারা ঘরে ফিরলো, তারাও কি আর নিশ্চিন্তে রেল ভ্রমণ করতে পারবে কোনদিন৷ প্রতিটি দুর্ঘটনার বেদনাদায়ক ফলশ্রুতি ভোগ করতেই হয় কিছু মানুষকে কিছু পরিবারকে৷
কিন্তু সব দুর্ঘটনাই নিছক দুর্ঘটনা নয়৷ থাকে গাফিলতি কর্তব্যে অবহেলা, দায়িত্ব পালনে অসতর্কতা৷ রেলের মত বিশাল পরিবহন ব্যবস্থায় নিয়মিত নজরদারিতে ত্রুটি, প্রযুক্তিগত ব্যবস্থায় ত্রুটি---একটি দুর্ঘটনার পিছনে এরকম অনেক কারণ থাকতে পারে৷ যা তদন্ত সাপেক্ষ৷ কিন্তু তদন্তের আগেই তড়িঘড়ি রেলদপ্তরের এক পদস্থ অফিসার দুর্ঘটনায় নিহত মালগাড়ীর চালকের ঘাড়ে দুর্ঘটনার দায় চাপিয়ে দিলেন৷ যত সন্দেহ এখানেই৷ কেন এত দ্রুত মৃত চালককে দায়ী করা হয়৷ তবে কি প্রকৃত দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা! সাধারণ মানুষ প্রযুক্তিগত ব্যাপারও জানে না, ট্রেন চলাচলের নিয়মারীতিও বোঝে না৷ তারা চায় নিশ্চিন্তে নিরাপদে ভ্রমণ করতে৷ তার দায়িত্ব নিতে হবে রেল দপ্তরকেই৷ কাদের কর্তব্যের গাফিলতিতে এই দুঘর্টনা, অথবা কোথাও কোন যান্ত্রিক ত্রুটিতে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকুক দোষ কার খুঁজে বার করার দায়িত্ব রেল কর্তৃপক্ষের৷ তাঁরা এই কাজটা নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে করুন৷ রেল দপ্তরের অধিকারী দুর্ঘটনায় নিহত মালগাড়ীর চালককে এর ঘাড়ে দায় চাপানোয় সাধারণ মানুষের মনে অনেক সন্দেহ দানা বাঁধে৷ সন্দেহ দুর করার দায় দাযিত্ব রেলকর্ত্তৃপক্ষকেই নিতে হবে৷
যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা বিজ্ঞাপনের বহরে আবদ্ধ না থাকে, ঘোষকের সৌজন্যমূলক আবেদনেই যেন রেলযাত্রীদের নিরাপত্তার দায় সারা না হয়৷ বিশ্বের বৃহত্তম এই পরিবহন ব্যবস্থার ত্রুটি বিচ্যুতি দূর করা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায় রেলকর্ত্তৃপক্ষেরই