রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বার বার পরাজিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রতি কেন্দ্রের বৈষম্যমূলক আচরণ কোন সুস্থ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের লক্ষণ নয়৷ বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ভারতের মতো যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রে ও রাজ্যে ভিন্ন দলের শাসন থাকতেই পারে৷ কিন্তু কখনই কেন্দ্র ভিন্ন দল শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারে না৷ কেন্দ্রীয় শাসক দলের এই আচরণ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে দুর্বল করবে৷ বঞ্চিত নাগরিকদের মনে বিচ্ছিন্নতার প্রবণতা দেখা দিতে পারে৷
পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বঞ্চনা স্বাধীনতার পরমুহূর্ত থেকেই প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর হাত ধরে৷ মোদি আমলে সেই বঞ্চনা চরম আকার ধারণ করেছে৷ রাজ্যের প্রতি দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রাপ্য কয়েক লক্ষ কোটি টাকা কেন্দ্র দিচ্ছে না৷ বিশেষ করে কেন্দ্রের সমীক্ষায় যখন ১০০ দিনের কাজে পশ্চিমবঙ্গ বার বার প্রথম হওয়া সত্বেও একাধিকবার কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি এসে তদন্তে উল্লেখযোগ্য কোন অনিয়মের অভিযোগ না করলেও মোদি সরকার মিথ্যা অছিলায় গত তিন বছর ১০০ দিনের কাজে রাজ্যের প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে৷ প্রশ্ণ করলেই সেই দুর্নীতির অজুহাত৷
কিন্তু বাঙলাকে বঞ্চনা করতে মোদি সরকার যে কত বড় মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে তা প্রকাশিত হয়েছে মোদি সরকারেরই গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এক প্রতিবেদনে৷ এই প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে দুর্নীতি অজুহাত মাত্র, আসলে রাজ্যের এক মহিলা মুখ্যমন্ত্রী ও একটি আঞ্চলিক দলের নেত্রীর কাছে বিজেপির মতো সর্বভারতীয় দল যে কি না, রাষ্ট্রের ক্ষমতায় আছে, নিজেদের বিশ্বের বৃহত্তম দল বলে প্রচার করে---তৃণমূল অপেক্ষা ধনে বলে বহুগুন বেশী, বার বার পরাজিত হওয়ার জ্বালায় রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ আটকে রেখেছে মিথ্যা অজুহাতে৷
দুর্নীতিই যদি প্রাপ্য অর্থ না দেওয়ার মাপকাঠি হয় তবে ডবল ইঞ্জিন চালিত রাজ্যগুলির অর্থ আগেই আটকান উচিত ছিল৷ অন্যায় অজুহাতে রাজ্যের প্রাপ্য বরাদ্দ অর্থ থেকে বঞ্চিত করছে মোদি সরকার৷ কেন্দ্রীয় গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রকের সোশ্যাল অডিট অ্যাকশন টেকন রিপোর্টে ১০০ দিনের কাজে আর্থিক দুর্নীতির যে তথ্য সামনে এসেছে তাতে বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্য রয়েছে৷ তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর গুজরাট, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের মধ্যপ্রদেশ যোগী আদিত্যনাথেরং উত্তরপ্রদেশ, এছাড়া হরিয়ানা, রাজস্থান, অসম, ওড়িশার মত একাধিক বিজেপি শাসিত রাজ্য ১০০ দিনের কাজে আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িত৷ তাহলে এই সব রাজ্যের বরাদ্দ অর্থ কেন বন্ধ করা হয়নি৷ স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অর্থমন্ত্রীর কাছে এর কি কোন জবাব আছে৷ শুধু পশ্চিমবঙ্গের প্রতি এই বৈষম্যমূলক আচরণ কি রাজনৈতিক যুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বার বার পরাজয়ের জ্বালা জুড়াতেই৷ কারণ যাই হোক কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রতিহিংসা পরায়ণ আচরণ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সংহতির পরিপূরক নয় এমনটাই মনে করেন আমরা বাঙালী কেন্দ্রীয় সচিব জ্যোতিবিকাশ সিন্হা৷