গত বার শেষ ম্যাচে হয়েছিল ফয়সালা৷ এ বার দু’ম্যাচ বাকি থাকতেই ভারতসেরা মোহনবাগান৷ পর পর দু’বার আইএসএলের লিগ-শিল্ড জিতল তারা৷ ঘরের মাঠে ওড়িশা এফসিকে হারিয়ে এই রেকর্ড গড়ল মোহনবাগান৷ তারাই একমাত্র ক্লাব যারা পর পর দু’বার লিগ-শিল্ড জিতেছে৷
কোচ মোলিনার পরিকল্পনা মোহনবাগানের কোচ হওয়ার আগে স্পেনের ফুটবল সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন তিনি৷ আগেও ভারতে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর৷ আইএসএল শুরুর পর তৃতীয় মরসুমে আতলেতিকো দি কলকাতাকে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন মোলিনা৷ দ্বিতীয় বার ভারতে এসেও সফল হলেন তিনি৷ বাগানের গত বারের আইএসএল লিগ-শিল্ডজয়ী কোচ আন্তোনিয়ো লোপেজ হাবাসের অভিব্যক্তি অনেক বেশি ছিল৷ তুলনায় মোলিনা অনেক শান্ত৷ গোল করলেও বেশি উচ্ছ্বাস করেন না৷ গোল খেলেও হতাশ হন না৷ ফুটবলারদের ভরসা জুগিয়েছেন৷ নিজের পরিকল্পনার উপর আস্থা রেখেছেন৷ এই রকম কোচকে পেয়ে অনেক ফুরফুরে মেজাজে খেলেছেন ফুটবলারেরা৷ দলের অন্দরের পরিবেশ ভাল রাখতে সফল হয়েছেন মোলিনা৷ তাঁর পরিকল্পনা বাগানের সাফল্যের বড় কারণ৷
মূল দল ধরে রাখা গত মরসুমের দলের বেশির ভাগ ফুটবলারকে ধরে রেখেছে মোহনবাগান৷ শুধু যে যে জায়গায় প্রয়োজন, সেখানেই নতুন ফুটবলার নেওয়া হয়েছে৷ জেসন কামিংস, দিমিত্রি পেত্রাতোস, মনবীর সিংহ, লিস্টন কোলাসো, আশিস রাই, সাহাল আব্দুল সামাদ, আশিক কুরুনিয়ান, শুভাশিস বসুরা আগের মরসুম থেকে একসঙ্গে খেলছেন৷ ফলে তাঁদের বোঝাপড়া ভাল৷ সেই বোঝাপড়ার ফসল তুলেছে বাগান৷ বাকিদের যেখানে দল গোছাতে সময় লেগেছে, সেখানে বাগান কয়েক পা এগিয়ে শুরু করেছে৷
আনোয়ারের অভাব বুঝতে দেননি শুভাশিসেরা গত বার মোহনবাগানের রক্ষণের প্রধান স্তম্ভ ছিলেন আনোয়ার আলি৷ এ বারের মরসুমের আগে তাঁকে নিয়েছে ইস্টবেঙ্গল৷ তা নিয়ে দুই প্রধানের লড়াই অনেক দূর গড়িয়েছিল৷ আনোয়ার চলে গেলেও তাঁর অভাব বুঝতে দেননি শুভাশিস বসু, আশিস রাইরা৷ পাশাপাশি টম অলড্রেড ও আলবার্র্তে রদ্রিগেসের জুটি বাগানের রক্ষণকে স্থিরতা দিয়েছে৷ এই রক্ষণকে ভেঙে গোল করতে সমস্যায় পড়েছে সব দল৷ লিগে সবচেয়ে কম গোল খেয়েছে মোহনবাগান৷ ভাল রক্ষণ ট্রফি জেতাতে কত বড় ভূমিকা নিতে পারে তা দেখিয়েছে বাগান৷ মরসুমে ২১টি ম্যাচের মধ্যে ১৩টি ম্যাচে ক্লিনশিট রেখেছেন তিনি৷ এতেই বোঝা যাচ্ছে, কেন এতটা দাপট দেখাতে পেরেছে মোহনবাগান৷
ফুটবলারদের শৃঙ্খলা মোহনবাগানের ফুটবলারেরা যে শৃঙ্খলা দেখিয়েছেন, তা দলকে জেতাতে সাহায্য করেছে৷ প্রতিযোগিতায় বাগানই একমাত্র দল যার কোনও ফুটবলার লাল কার্ড দেখেননি৷ বাকি প্রতিটি দলের ফুটবলারেরা লাল কার্ড দেখেছেন৷ মরসুমের শুরুর দিকে বাগান ফুটবলারেরা বেশি হলুদ কার্ড দেখছিলেন৷ পরে সেই সংখ্যাও কমেছে৷ কার্ড সমস্যায় বাকি সব দলের তুলনায় কম ফুটবলারকে বাইরে বসতে হয়েছে৷ ফলে নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলাতে সমস্যা হয়নি মোলিনার৷
গোল করার লোক বেশি এই মরসুমে মোহনবাগানের ১০ জন ফুটবলার গোল করেছেন৷ এই পরিসংখ্যান অন্য কোনও দলের নেই৷ দলের তিন স্ট্রাইকার ম্যাকলারেন, কামিংস ও পেত্রাতোস গোল করেছেন৷ তিন মিডফিল্ডার স্টুয়ার্ট, মনবীর সিংহ ও লিস্টন কোলাসো গোল করেছেন৷ তবে চমক দিয়েছেন বাগানের চার ডিফেন্ডার৷ এ বার বাগানের বিরুদ্ধে ১৪টি গোল হয়েছে৷ বাগানের চার ডিফেন্ডার আলবের্র্তে রদ্রিগেস, টম অলড্রেড, শুভাশিস বসু ও দীপেন্দু বিশ্বাস মিলে ১৪টি গোল করেছেন৷ যে দলের ডিফেন্ডারেরা এত গোল করেন সেই দল যে লিগ-শিল্ড জিতবে সেটাই স্বাভাবিক৷
ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগানো ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগিয়েছে মোহনবাগান৷ এ বার যুবভারতীতে ১০টি ম্যাচ খেলেছে তারা৷ একমাত্র মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচটি ড্র হয়েছে৷ বাকি ন’টি হোম ম্যাচ জিতেছে বাগান৷ বড় লিগে ঘরের মাঠকে যে দল দুর্গ বানাতে পারবে সেই দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি৷ সেটাই দেখিয়েছে বাগান৷ সেই কারণেই দু’ম্যাচ বাকি থাকতে লিগ-শিল্ড জিতেছে মোহনবাগান৷