২০২১ শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী শততম জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সাড়ম্বরে আন্তর্জাতিক ধর্ম মহাসম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়েছিল আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘ৷ এই সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল মার্গের কেন্দ্রীয় সদরদপ্তর আনন্দনগরে৷ কিন্তু বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে বিশাল জমায়েত করে সেই সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি৷ গত ১১,১২,১৩ই জুন আনন্দমার্গের কলিকাতায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জাগৃতিভবনে কোভিডবিধি মেনে সীমিত সংখ্যক মার্গীদের উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক ধর্ম মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ এই অনুষ্ঠান বিশ্বের প্রতিটি দেশে অনলাইনে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ তিন দিনের এই সম্মেলনে পুরোধা প্রমুখ আচার্য কিংশুকরঞ্জন সরকার মার্গগুরুদেবের প্রতিনিধি হয়ে আধ্যাত্মিক প্রবচন দেন৷
তাঁর প্রবচনের মূল বিষয় ছিল---আনন্দমার্গ দর্শন ভিত্তিক বিশ্বের সর্ব অস্তিত্বের সার্বিক কল্যাণ ও প্রগতি৷ তিনি বলেন প্রকৃত প্রগতি তখনই সম্ভব যখন ভৌতিক তথা জাগতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক তিনস্তরে সার্বিক বিকাশ হবে৷
তিনি বলেন জাগতিক বিকাশের মূল লক্ষ্য হবে সমাজ থেকে সবরকমের পাপাচার ও দুর্নীতি দুর করে সদবিপ্র সমাজ তৈরী করা৷ মানসিক স্তরেও আজ নানা ধরনের অশ্লীল সংস্কৃতির প্রবাহ চলছে৷ শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি সর্বস্তরেই দানবীয় শক্তির প্রভাব মানুষের মন জগৎ মলিনতায় ঢেকে দিয়েছে৷ আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেও নানা উপধর্ম তথা ধর্মমতের প্রভাবে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার মানুষকে গ্রাস করেছে৷ এসবের কারণেই সমাজে আজ চরম বিপর্যয় নেবে এসেছে৷ এই বিপর্যয় থেকে মানব সমাজকে রক্ষা করতে হলে সদ্বিপ্রদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে৷ সদ্বিপ্রদের কাজ হবে সমাজকে ভৌতিক, মানসিক,আধ্যাত্মিক তিনস্তরেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া৷
তিনি আরও বলেন এই যাওয়া সহজ হবে না৷ বাধা আসবে, বাধার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এগোতে হবে৷ বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সবরকম বাধার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে৷ আনন্দমার্গ দর্শনের প্রণেতা সদ্বিপ্র সম্পর্কে বলেছেন---‘‘যাঁরা আধ্যাত্মিক নীতিবাদ তথা যম-নিয়ম পালন করেন, যাঁরা পরম চৈতন্যসত্তার প্রতি অনুরক্ত তাঁরাই হলেন সদ্বিপ্র৷’’ এই সদ্বিপ্ররা সমাজকে যথাযথ প্রগতির পথে নিয়ে যেতে পারবে৷ তবে সদ্বিপ্রদের আগে ব্যষ্টি জীবনে যথাযথ সাধনা পদ্ধতি অনুশীলন করতে হবে, সঠিক জীবনাদর্শ অনুসরন করতে হবে৷ এরজন্য দৃঢ়ভাবে অষ্টাঙ্গিক যোগসাধনা অনুশীলন করতে হবে৷ এইভাবেই সদ্বিপ্ররা মানবসমাজকে প্রগতির পথে নিয়ে যাবে ও নিজেরাও জীবনের পরমলক্ষ্যের পানে এগিয়ে যাবে৷
আচার্য কিংশুকরঞ্জন আনন্দমার্গ দর্শনভিত্তিক অষ্টাঙ্গিক যোগসাধনা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন ও সৃষ্টিরহস্যের আর মানবজীবনের চলার পথ সম্পর্কে বিজ্ঞান ও যুক্তিযুক্ত বিশ্লেষণ করেন৷ পরিশেষে তিনি বলেন---সবরকম মলিনতা মুক্ত আদর্শ সমাজ সংরচনা ও মানুষের তাঁর পরম লক্ষ্যের পানে এগিয়ে যেতে হলে প্রতিটি মানুষকে এই যোগসাধনা অনুশীলন করতেই হবে৷