অসমে নাগরিকপঞ্জীর তৈরীর নামে প্রায় ৪০ লক্ষ বাঙালীর নাগরিকত্ব হরণের প্রতিবাদ গত ৩০শে আগষ্ট আমরা বাঙালীর তরফ থেকে নিউকোচবিহার রেলষ্টেশনে অসমগামী রেল অবরোধ আন্দোলনের কর্মসূচী নেওয়া হয়৷ এই অনুসারে এদিন সকালে কোচবিহার থেকে ২ হাজারের বেশি ‘আমরা বাঙালী’র কর্মী নিউ কোচবিহার ষ্টেশনে এসে পৌঁছে যায়৷ এখানে আমরা বাঙালীর আন্দোলন রুখতে ১ হাজারের বেশি রেল পুলিশ মোতায়েন ছিল৷ তাদের সঙ্গে আমরা বাঙালীর কর্মী ও সমর্থকদের দফায় দফায় বাত-বিতণ্ডা ও ধবস্তাধস্তি চলতে থাকে৷ আন্দোলনকারীরা বাঙালী বিদ্বেষী অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সেনওয়ালের কুশপুত্তলিকাও দাহ করে৷
আমরা বাঙালীর সমর্থকদের একটি দল ঘুরপথে গিয়ে একটু দূরে রেল লাইন অবরোধ করে বসে পড়ে৷ তখন রেল পুলিশের ও একটা বড় অংশ সেখানে গিয়ে রেললাইন অবরোধকারীদের রেললাইন থেকে হটানোর চেষ্টা করে৷ এইভাবে দিনভর দফায় দফায় রেলপুলিশের সঙ্গে আমরা বাঙালী সমর্থকদের লুকোচুরি খোলা চলতে থাকে৷ ঘন্টাখানেক এইভাবে চলার পর জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান৷
তিনি আন্দোলনকারীদের গ্রেফতারের পর আবাার বিনা শর্তে মুক্তি দেন৷
আমরা বাঙালীর এই আন্দোলনের সঙ্গে মানব সুরক্ষা ও জাগরণ সংঘটনের নেতা রাজু ঘোষ ও সর্বভারতীয় নমঃশূদ্র কমিটির সম্পাদক মুকুল বৈরাগ্য ও তাঁর লোকজনও সামিল হয়েছিলেন৷ এছাড়া অসমের গুয়াহাটির বিশিষ্ট আইনজীবী নজরুল ইসলাম প্রমুখ এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন৷
এছাড়া অসম থেকে আগত বহু বাঙালী এই বাঙালী এই আন্দোলনে যোগ দেন৷ তাঁরা সাংবাদিকদের কাছে নথিপত্র দেখিয়ে বলেন, তাঁরা যে অসমের বৈধ নাগরিক তার স্বপক্ষে তাঁরা ১৯৭১ সালের আগেরও অনেক নথিপত্র সরকারের কাছে জমা দিয়েছেন, তা সত্ত্বেও নাগরিকপঞ্জীর থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে৷ ফলে তাদের জীবনে অনিশ্চিততা নেমে আসছে৷ এ থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে যে, অসম থেকে বাঙালীদের তাড়ানোর এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র চলছে৷
এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বাঙালীর সচিব বকুলচন্দ্র রায় বলেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তে আগেকার বাঙলার বহু অংশ যেমন গোয়ালপাড়া, লামডিং কাছাড় প্রভৃতি অসমের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে৷ তাছাড়া ওপর বাঙলা থেকে আগত বাঙালীরাও স্বাধীনতার পর কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে ভারতের বৈধ নাগরিক৷ অতএব৷ অসমের একটি বাঙালী ও বিদেশী নয়, প্রত্যেকেই ভারতের নাগরিক৷
স্থানীয় জনসাধারণও আমরা বাঙালীর এই আন্দোলনকে সমর্থন জানায়৷ তাঁদের সামনে আমরা বাঙালী সচিব বকুলচন্দ্র রায় ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সাংঘটনিক সচিব খুশী রঞ্জন মন্ডল, উত্তরবঙ্গের সাংঘটনিক সচিব দলেন রায়, কেন্দ্রীয় পঞ্চশাখা সচিব সুবোধ বর্মন, জেলা সচিব সন্তোষ মোদক৷ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীমতী প্রতিমা রায়, নীরদ অধিকারী, রাঢ়ের সাংঘটনিক সচিব বিভূতি দত্ত, শ্যামসুন্দর দাস প্রমুখ৷
এলাকার সবাই আমরা বাঙালীর আন্দোলনকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্থন জানায়৷