করোনা সংক্রমণের বিদায় দ্রুত হবে না - আর্থিক সংকট ভয়াল রূপ নেবে

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

ভারতের অর্থনীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের পূর্বাভাষ মোটেই সুখকর নয়৷ সম্প্রীতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও বিশ্ব ব্যাঙ্ক যে আশঙ্কার পূর্বভাষ দিয়েছিল, আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের পূর্বাভাষ সেই আশঙ্কা কয়েকগুন বাড়িয়ে দিল৷ আন্তর্জাতিক  অর্থভাণ্ডারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে--- এই অর্থবর্ষে ভারতে আর্থিক সঙ্কোচন ১০.৩ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা, যদিও বিশ্বব্যাঙ্কের  পূর্বাভাষ ছিল ৯.৬৷ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাষও বিশ্বব্যাঙ্কের কাছাকাছি ---৯.৫৷ ভারত সরকারের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কে.ভি. সুরহ্মনণ্যের মতও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতই৷ দেশের অর্থনীতিবিদদের ধারণা---সঙ্কোচনের হার কমবেশী যাই হোক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে৷

আর্ন্তজাতিক অর্থভাণ্ডারের গত জুনের পূর্বাভাষ ছিল চলতি অর্থবছরে ভারতের আর্থিক সঙ্কোচন ৪.৫ শতাংশ হতে পারে৷ কিন্তু আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসেই সঙ্কোচন আশঙ্কা ছাপিয়ে ২৪ শতাংশের কাছাকাছি চলে যায়৷ তাই তারা জুনের পূর্বাভাষ থেকে সরে  এসে সঙ্কোচনের হার অনেকটা বাড়িয়ে দিয়ে ১০.৩ শতাংশ করেছে৷ এরজন্যে অবশ্য তারা করোনা সংক্রমণকেই দায়ী করেছে৷ বিশ্বব্যাঙ্কেরও মত  করোনা সংক্রমণ রুখতে দীর্ঘ লক্ডাউনই ভারতের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করেছে৷ সংক্রমণ বৃদ্ধি ও তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে যে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার কারণেই ভারতে আর্থিক বিপর্যয় ঘনিয়ে এসেছে৷ আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের মুখ্য অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথন বলেন---দেশ ভয়াল মন্দার কবলে পড়বে৷ করোনা সঙ্কট থেকে দেশ দ্রুত মুক্ত হবে না৷ দুঃখের দিন দীর্ঘ হতে পারে৷

বিশিষ্ট প্রাউটিষ্ট নেতা প্রভাত খাঁ অবশ্য আর্থিক বিপর্যয়ের জন্যে শুধুমাত্র  করোনাকে দায়ী করতে রাজী নন৷ তিনি বলেন করোনা তো কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে৷  অপরিকল্পিতভাবে নোট বাতিল ও জি.এস.টি চালু করে অর্থনীতিতে ক্ষত সৃষ্টি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ ধনকুবেরদের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ঋণমুকুব করে দিয়েছে৷ বেশ কয়েকজন পুঁজিপতি কয়েক লক্ষ কোটি টাকা নিয়ে দেশ ছেড়েছে৷ অর্থনীতির ক্ষত করোনা আসার আগেই হয়েছে৷ করোনা সংক্রমিত হয়ে সেই ক্ষতে নুনের ছিটে দিয়েছে৷ তিনি বলেন সমস্যা সমাধানের উপায় আছে৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের সেই পথে চলার সাহস নেই৷ কারণ সমস্যা সমাধানের পথে চললে পুঁজিবাদের কোপে পড়ে সরকার ও দল দুটোরই গণেশ উল্টোবে৷

আর্থিক সঙ্কোচন নিয়ে প্রশ্ণ করায় শ্রী খাঁ বলেন ---আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর রেখে লাভ কি৷ যে দেশের  সিংহভাগ সম্পদ মুষ্টিমেয় কয়েকজন পুঁজিপতি কুক্ষিগত করে রেখেছে সেখানে আর্থিক সঙ্কোচ বিকাশে সাধারণ মানুষের কি যায় আসে৷ তাদের এসব বিষয়ে কোন চেতনাই নেই৷ তারা যে তিমিরে আছে সেই তিমিরেই থাকবে৷ বড় জোর  ক্ষুধার জ্বালা একটু বাড়বে কমবে ৷

তিনি বলেন মানুষ এখনও সচেতন নয়৷ সামনে ভয়ঙ্কর দুঃখের  দিন আসছে৷ তার থেকে বাঁচার একমাত্র পথ প্রাউটের বিকেন্দ্রিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে রূপ দেওয়া৷ প্রথমেই প্রয়োজন মানুষের সর্বনিম্ন চাহিদার পূর্ত্তি৷ এর জন্যে প্রয়োজন বিকেন্দ্রিত পথে সমবায়ের মাধ্যমে  ব্লকভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা৷ কিন্তু বর্তমান পুঁজিবাদী কাঠামোয় এটা সম্ভব নয়৷ অথচ মানুষকে অর্থনৈতিক জীবনে মুক্তি দিতে হলে অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের  বিকল্প পথ নেই৷ তাই মানুষ যতক্ষণ না সচেতন হচ্ছে চিন্তাশীল মানুষ যতদিন না এগিয়ে আসবে, ততদিন মানুষের দুঃখের রাতের অবসান হবে না৷