কারণ ঃ শারীরিক কৃশতার কারণ নানাবিধ ঃ
১) দুর্বল বা অসুবস্থ পুং বা স্ত্রীবীজ থেকে যে সকল শিশুর দেহ সৃষ্টি হয়েছে, তারা স্বভাবতই শক্তিহীন ও কৃশকায় হয়ে থাকে৷
২) শিশু যদি যথেষ্ট পরিমাণে মাতৃস্তন্য না পায় সেক্ষেত্রেও সে সাধারণতঃ কৃশকায় হয়ে থাকে৷
৩) দারিদ্র্য নিবন্ধন যে সকল পিতা–মাতা সন্তান–সন্ততিদের জন্যে যথেষ্ট পরিমাণে দুগ্ধের ব্যবস্থা করতে পারেন না ও অল্প বয়স থেকে তদের জন্যে ভাত, ডাল বা সাবু–বার্লি দেওয়া হয়, তাদের যকৃৎ ও পরিপাক যন্ত্রগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা কৃশকায় হয়ে পড়ে৷
৪) যে সকল পিতা–মাতা সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত দরদ দেখাতে গিয়ে শিশুকাল থেকেই তাদের জন্যে ঘৃত, মাখন, মাছ, মাংস, ডিমের ব্যবস্থা দেন অথবা দারিদ্র্যের জন্যে বা সংস্কারের বশে যাঁরা শিশুকে দুগ্ধ, ফল–মূল প্রভৃতি শিশুর পক্ষে হিতকর খাদ্যের পরিবর্ত্তে আমিষ খাদ্য বা মশলাযুক্ত তরিতরকারীর ব্যবস্থা করেন সেই সকল শিশুও যকৃৎ পাকযন্ত্র প্রভৃতির অতিক্রিয়তার ফলে যন্ত্রগুলির সবলতা হারিয়ে ফেলে ও কৃশকায় হয়ে যায়৷
প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে কৃশতা সাধারণতঃ নিম্নলিখিত কারণগুলির ফলে সৃষ্ট হয় ঃ–
১) অতিরিক্ত মানসিক পরিশ্রম,
২) যৌনগ্রন্থির দুর্বলতা,
৩) কোষ্ঠবদ্ধতা,
৪) অম্লরোগ,
৫) কোন দীর্ঘস্থায়ী রস–রক্তক্ষয়ী ব্যাধি,
৬) পুরুষ ব্যাধি বা স্ত্রীব্যাধি৷
চিকিৎসা ঃ অল্পবয়স্কদের কৃশতায়–
প্রত্যুষে ঃ কর্মাসন, ভুজঙ্গাসন, শলভাসন, গরুড়মুদ্রা ও আগ্ণেয়ীমুদ্রা৷
সন্ধ্যায় ঃ সমকোণ আসন, চক্রাসন, গ্রন্থিমুক্তাসন৷
বয়স্কদের যে মূল ব্যাধির ফলে কৃশতা দেখা দিয়েছে সেই ব্যাধিটির যথাযথ চিকিৎসা করলে প্রয়োজন মত মেদ–মাংসাদির সঞ্চয় হবে৷ রোগীর পক্ষে অবশ্যই যথেষ্ট পরিমাণে (আন্দাজ ৪/৫ সের, কিন্তু এক সঙ্গে অধিক নয়) জলপান ও আতপ স্নান বিধেয়৷ রোগীর পক্ষে যথেষ্ট পরিমাণে উন্মুক্ত স্থানে প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকা বাঞ্ছনীয়৷ কৃশ শিশুদের খেলাধূলাতেও উৎসাহ দেওয়া উচিত৷
পথ্য ঃ পাঁচ বৎসরের কমবয়স্ক বালক–বালিকার প্রধান খাদ্য দুগ্ধ ও ফল–মূল৷ শ্বেতসার, শর্করা ও স্নেহজাতীয় খাদ্য যত কম দেওয়া যায় ততই মঙ্গল কারণ ওই সকল খাদ্য শিশুর অপরিণত যকৃৎ ও পরিপাক যন্ত্রগুলিকে দুর্বল করে দেয়৷ পাঁচ বৎসর বয়সের পূর্ব পর্যন্ত কোন অবস্থাতেই শিশুকে আমিষ খাদ্য দেওয়া উচিত নয়৷ পাঁচ বছর বয়সের পর থেকে ধীরে ধীরে শ্বেতসার, শর্করা ও স্নেহজাতীয় খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে৷ ফল–মূল প্রভৃতি ক্ষারধর্মী খাদ্যই শিশুর পক্ষে সব চেয়ে হিতকর৷ দারিদ্র্য নিবন্ধন অনেকে শিশুদের জন্যে যথেষ্ট পরিমাণ দুগ্ধের ব্যবস্থা দিতে পারে না অথচ শিশুদের জন্যে প্রয়োজন দৈনিক অন্ততঃ পক্ষে তিন পোয়া/এক সের দুধ৷
বিধি–নিষেধ ঃ ফল–মূল, শাক–সব্জীর ঝোল ও দুগ্ধ যথেষ্ট পরিমাণে খেতে পেলে শিশুদের কৃশতা দূর হয়ে যায় কিন্তু দুঃখের বিষয়, অতিলোভী আমিষভোজী অভিভাবকগণ আর্থিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সন্তান–সন্ততিকে তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য থেকে বঞ্চিত করে মাছ, ডিম, ঘি, মাখন প্রভৃতি খেতে দেন৷ এ ধরণের স্বভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর৷
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সাধারণতঃ কৃশতার মূলীভূত কারণ যে ব্যাধিতে নিহিত সেই ব্যাধিটি দূর হবার সঙ্গে সঙ্গে কৃশতাও আর থাকে না৷ নিজের যকৃৎ ও পাকযন্ত্রের অবস্থা বুঝে প্রাপ্তবয়স্ক কৃশকায় ব্যষ্টিরা যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করলে, যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম করলে, বিধিমত জলপান ও স্নানান্তে সিক্তমর্দনের ব্যবস্থা করলে অল্প দিনের মধ্যে হূষ্টপুষ্ট হয়ে উঠতে পারেন৷
(‘যৌগিক চিকিৎসা দ্রব্যগুণ)