খাদ্য সাথী প্রকল্পে অত্যন্ত নিম্নমানের চাল দেওয়া নিয়ে জঙ্গলমহল ক্ষুদ্ধ৷ সামনে পঞ্চায়েত ভোট থাকায় এই খবরে রাজ্যসরকার ভীষণ চিন্তায় আছে৷ মানুষ রেশন ডিলারদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে৷ খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, খাদ্যসাথী প্রকল্পের চাল রাজ্যসরকার নিজের পয়সা দিয়ে কেনে৷ সুতরাং সেই চালের গুণগত মান নিয়ে কোনও প্রশ্ণ থাকার কথা নয়৷ কিন্তু রেশন ডিলাররা বলছে, তাদের কাছে সরকারের থেকেই নিম্নমানের চাল আসছে৷ ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুরে রেশন দোকানের সামনে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে৷ নদীয়াতেও একই বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে৷ সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের আগে সেদিন নিজেরাই মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল৷ দেখা যাচ্ছে যে রাজার জামা বদলেছে কিন্তু রাজার শোষণ সমান তালে চলছে৷
এরকমই এক ঘটনা ঘটেছে রাঁচীতে, সারা দেশের মানুষ যেখানে রেশনে চাল গম দেওয়ার পরিবর্তে আধার সংযুক্ত ব্যাঙ্কের খাতায় টাকা জমা করার বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন সেখানে রাঁচী জেলার নাগরি ব্লকে ঝাড়খন্ড সরকার ঠিক এই কাজটিই করেছে৷
২০১৭ সালের অক্টোবর মাস থেকে ১৩টি গ্রামের ২৪৪টি পরিবার রেশন পাচ্ছেন না বরং তাদের ব্যাঙ্কে যেতে বলা হয়েছে আর সেখানেও তারা টাকা তুলতে পারছেন না৷ এই পরিবর্ত্তনের কোন খবরই রেশনকার্ডে র মালিকদের জানানো হয়নি৷ রেশন থেকে আগে ১টাকা কেজি দরে চাল কেনা সম্ভব হতো কিন্তু নতুন নিয়মে ব্যাঙ্কের থেকে টাকা তুলে রেশন থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে চাল কিনতে হবে৷ জেলা আধিকারিকের তরফে কার্ড মালিকদের ধমক দিয়ে বলা হয়েছে যে, ব্যাঙ্কের থেকে টাকা না তোলা হলে তাদের রেশন কার্ড ও ভর্তুকি অর্থ দুটোই বাতিল করা হবে৷ আর এই টাকা দিয়ে রেশন দোকান থেকে মাল কেনা না হলে গরীব মানুষদের কাছ থেকেই টাকা আদায় করা হবে৷ এই ঘটনা শুধু যে ঝাড়খন্ডে হচ্ছে তা নয়৷ সারা দেশেই পরিকল্পিতভাবে রেশন ব্যবস্থাকে ধবংস করার জন্যে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে৷ আধারকার্ড ছাড়া স্কুলে দুপুরের খাবার বন্ধ করা হয়েছে৷ রেশন কার্ড থাকলেও রেশন দেওয়া হচ্ছে না৷ এই ঘটনায় সব থেকে বিপদে পড়েছেন বিধবা ও যারা একাকী থাকেন তারা৷ এই মানুষদের রেশন তোলা হচেছ কিছু কর্মচারীর দ্বারা ও তা খোলা বাজারে বেচে দেওয়া হচ্ছে৷
উপরের দুটি রাজ্যের দুটি খবর আমাদের ভাবতে বাধ্য করে৷ এর পিছনের আসল কারণ কি তা জানতে হবে৷ সারা ভারত জুড়েই এমন ঘটনা ঘটে চলেছে অহরহ৷ একটু সচেতন ভাবে অনুসন্ধান করলে আমরা বুঝতে পারবো ঠিক কোন অবস্থায় রয়েছে আমাদের রেশন ব্যবস্থা৷
ভারত সরকার উদারনীতি নেওয়ার পরই ঠিক করে নেয় কী করে সাধারণের টাকায় বানানো দেশের সম্পদ কর্পোরেটের হাতে তুলে দিতে হবে৷ এটা সহজ কাজ নয়, কারণ দেশের মানুষের সম্পদ বিনা প্রতিবাদে দালাল পুঁজির মালিকদের হাতে তুলে দেওয়া দেশ মেনে নেবে না৷ প্রথমে প্রচার শুরু হলো সরকারী সংস্থাগুলি লাভজনক নয় ফলে তাদের কমদামে বেচে দেওয়া শুরু হলো৷ এবার দেশ জোড়া রেশন ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার জন্যে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা মানুষের আধারকার্ড বাধ্যতামূলক করার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ খেয়াল করে দেখুন রেশন ব্যবস্থার সঙ্গেই জুড়ে আছে ফুড কর্পোরেশন, অফ ইন্ডিয়ার অস্তিত্ব, অর্থাৎ রেশন ব্যবস্থা না থাকলে দেশের কর্ষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে সরকারের ফসল কেনার দরকার পড়বে না৷ সবটাই বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া হবে৷ এই বাজার মানে একদল চোর, ফড়ে ও মাফিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে৷ সম্প্রতি জঁ দ্রেজ ও ঋতিকা খেরা একটি অনুসন্ধান করেন৷ বিষয় ছিল দেশের মানুষ কি সত্যিই রেশন ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার পক্ষে? আশ্চর্য হলেও সত্যি, দেশের মানুষ রেশন ব্যবস্থার পক্ষে কিন্তু আধার মারফত টাকা পাওয়া তাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না৷ বহু সামাজিক কর্মী মনে করেন রেশন ব্যবস্থার যদি সংস্কার করা যায় তবে অতি দরিদ্র মানুষের কাছে খাদ্যশস্য পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে৷
অনুসন্ধান কর্মীরা অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার ,ছত্তিশগড়, হিমাচল প্রদেশ, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা, রাজস্থান ,তামিলনাড়ু ও উত্তরপ্রদেশে সমীবা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন৷
দিল্লীতে ‘রোজি রোটি অভিযান’ নামের সংস্থার বস্তি এলাকায় সমীবা (৪৫০০টি পরিবার) চালিয়ে জানতে পেরেছেন দিল্লী সরকার রেশন ব্যবস্থার বিপরীতে স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করার ব্যবস্থা করেছে৷ ৯০ শতাংশ মানুষ ব্যাঙ্কে টাকা দেওয়ার পরিবর্ত্তে রেশন ব্যবস্থার দ্বারা খাদ্য সংগ্রহ করাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন৷ আধার কার্ড যার হাত দিয়ে শুরু হয়েছিল, সেই নন্দন নিলেকানি অবশ্য রেশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ তুলে দেওয়ার পক্ষে৷ সে শুধুমাত্র দারিদ্র সীমার নীচে থাকা মানুষদের জন্যে তাদের ব্যাঙ্ক খাতায় কেরোসিন ও চাল-ডালের টাকা পাঠানোর পক্ষে৷
প্রশ্ণ হলো, যখন দেশের মানুষ হাজার সমস্যা সত্ত্বেও রেশন ব্যবস্থার পক্ষে তখন ভারত সরকার রেশন ব্যবস্থা তুলে দিতে চায় কেন? আসলে ভারতের বিশাল খাদ্যের বাজার দখল করার জন্যে বিদেশী কোম্পানীরা দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে চলেছে৷ কিন্তু আফ্রিকার মতো এখানে বিদেশ থেকে খাবার কেনার দরকার পড়ে না, ফলে এদেশের খাদ্য উৎপাদন ও বিলি ব্যবস্থাটাকেই নষ্ট করতে হবে, নইলে বিদেশী ফসল এখানে বিক্রি করা সম্ভব নয়৷
এরকম এক দূর অভিসন্ধিমূলক কর্মকান্ডকে এখনই প্রতিহত করার জন্য বিদেশীদের হাতে দেশের মানুষের খাদ্য সরবরাহ করার দায়িত্ব তুলে দেওয়া ও খাদ্যশস্য নিয়ে কালোবাজারী বন্ধ করতে আমাদের এখুনি জোট বেঁধে তীব্র গণআন্দোলন সংঘটিত করতে সকলে এগিয়ে আসতে হবে৷
‘‘টাকা না রেশন’’ (অনুসন্ধান রিপোর্ট)
রাজ্য |
রেশনের পক্ষে |
টাকার পক্ষে |
অন্ধ্রপ্রদেশ |
৯১.% |
৫.% |
|
|
|
বিহার |
২০.% |
৫৪.% |
|
|
|
ছত্তিশগড় |
৯০.% |
২.% |
|
|
|
হিমাচল প্রদেশ |
৮১.% |
৯.% |
|
|
|
ঝাড়খণ্ড |
৬৬.% |
২২.% |
|
|
|
ওড়িশা |
৮৮.% |
৫.% |
|
|
|
রাজস্থান |
৫৯.% |
১৪.% |
|
|
|
তামিলনাড়ু |
৭০.% |
১০.% |
|
|
|
উত্তরপ্রদেশ |
৪১.% |
৩৪.% |
|
|
|
মোট |
৬৭.% |
১৭.% |
- Log in to post comments