প্রতিটি কোষের ভিতরে, প্রতিটি নিউক্লিয়াসের কোটরে, লুকিয়ে রয়েছে মানুষের ‘প্রাণভোমরা’৷ ক্রমাগত প্রোটিন ও ডিএনএ-র কর্মকাণ্ড চলছে সেখানে৷ একটা সামান্য ভুলচুক হলেই তা ডেকে আনবে ক্যানসার৷ ‘ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো’ এই নিয়ে একটি গবেষণা করেছিল, যা অজানা এক দিগন্ত খুলে দিয়েছে৷ সম্প্রতি ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি৷ গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চুয়ান হ৷ তাঁর দলের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করেছেন সান অ্যান্টোনিয়োর ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস হেল্থ সায়েন্স সেন্টার-এর অধ্যাপক মিংজিয়াং শু৷ গবেষণায় তাঁরা দেখেছেন, একটি কোষের ভিতরে ডিএনএ কী ভাবে ‘প্যাকেজড’ রয়েছে ও সংরক্ষিত রয়েছে, তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে আরএনএ-র৷ বিষয়টা এমন, কোষের মধ্যে তুলনায় দীর্ঘাকার ডিএনএ-র অতিক্ষুদ্র স্থানের মধ্যে সঙ্কুচিত হয়ে থাকার (একে বলে ডিএনএ প্যাকেজিং) ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নেয় প্রোটিন সংশ্লেষে যুক্ত আরএনএ৷ এ ক্ষেত্রে যে জিনটি ডিএনএ প্যাকেজিং-এ আরএনএ-কে সাহায্য করে তার নাম টেট-২৷ বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই গবেষণা দীর্ঘদিনের একটি ধাঁধাঁর উত্তর দিয়েছে কেন বহু সময়ে ক্যানসার বা অন্যান্য ডিসর্ডারের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে টেট২-সম্পর্কিত মিউটেশনের নাম কাঠগড়ায় উঠে আসে, তা জানা গিয়েছে৷ টিইটি মিথাইল াইটোসিন ডাইক্সিজেনেস ২ বা টেট-২-এর মানব দেহে কী প্রভাব রয়েছে, তা নিয়ে এত দিন বিজ্ঞানীদের কাছে স্পষ্ট ধারণা ছিল না৷ গবেষকদের আশা, ‘অপরাধীকে’ যখন চিহ্ণিত করা গিয়েছে, তখন সমাধানও মিলবে৷ চিকিৎসার নয়া দিগন্ত খুলে যাবে৷ তবে চুয়ান জানান, এটি ‘কনসেপচুয়াল ব্রেকথ্রু’৷ একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনের ‘পরিচয়’ স্পষ্ট হয়েছে৷ চুয়ান ও তাঁর সঙ্গীরা জিন-এক্সপ্রেশন নিয়ে একাধিক উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন৷ ২০১১ সালে তাঁরা গবেষণায় দেখান, ডিএনএ ও প্রোটিনের মতো, আরএনএ-র বদল ঘটলে তাতে জিনের হাবভাব বদলে যায়৷ সেই থেকেই তাঁরা আরএনএ ও জিন এক্সপ্রেশন নিয়ে কাজ করছেন৷ এ ভাবে কাজ করতে করতেই তাঁরা টেট-২ জিনটিতে নজর দেন৷ বিজ্ঞানীরা জানতেন, টেট-২ বা টেট-২ সম্পর্কিত জিনের মিউটেশন ঘটলে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয় মানবদেহে৷ টেট-২ জিনের ডিএনএ নিউক্লিওটাইডের সজ্জাক্রমের ১০-৬০ শতাংশ পরিবর্তন বা মিউটেশন ঘটলে লিউকিমিয়া বা অস্থিমজ্জার ক্যানসার দেখা দেয়৷ এ ছাড়া ওই জিনের মিউটেশেনের ফলে অন্যান্য ধরনের ক্যানসারও সৃষ্টি হয়৷ চুয়ান জানান, টেট পরিবারের অন্য সদস্যেরা ডিএনএ-র উপর প্রভাব ফেলে৷ তাই বহু বছর ধরে গবেষকেরা শুধু টেট-২-র ডিএনএ-র উপর প্রভাব পরীক্ষা করে দেখছিল৷ কিন্তু সেটা ভুল৷ টেট-২ আসলে আরএনএ-র উপর প্রভাব ফেলে৷ হাওয়ার্ড হিউজ মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের রসায়ন বিভাগ এবং বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক জন টি উইলসন বলেন, ‘‘এই গবেষণা চিকিৎসাক্ষেত্রে নতুন পথ দেখাবে৷ আশা করছি গোটা বিশ্বে এই গবেষণা উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে৷’’
সংবাদদাতা
পি.এন.এ.
সময়