লামডিং, অসম ঃ ১৯৬৪ সালের ২৮শে মার্চ আনন্দমার্গের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী ধর্মমহাচক্র উপলক্ষ্যে আমবাগানে ও লাউখোয়া অভয়ারণ্যে (রূপহি ব্লক) এসেছিলেন ও এখানে এক আশ্চর্যজনক ঘটনাও ঘটেছিল–মার্গগুরুদেব এক গণ্ডারকে আশীর্বাদ করেছিলেন৷ গণ্ডারটিরও দু’চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল৷ এই ঘটনাকে স্মরণ করে প্রতি বছরই লাউখোয়াতে অসমের বিভিন্ন জায়গা থেকে আনন্দমার্গীরা এসে এই দিনটিকে উদ্যাপন করেন৷ এ বছরও গত ২৮শে মার্চ এক বিশাল ভক্ত সমাবেশে মহাসমারোহে এই শুভদিনটিকে উদ্যাপন করা হয়৷ এই উপলক্ষ্যে এখানে ‘বাবা নাম কেবলম্’ মহামন্ত্রের অখণ্ড কীর্ত্তনের আয়োজন করা হয়৷ তেজপুর থেকে গরাজান পর্যন্ত এলাকা থেকে মার্গী ভাই–বোনেরা এখানে সকাল থেকে ভক্তিমূলক প্রভাতসঙ্গীত পরিবেশন করেন ও ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অখণ্ড কীর্ত্তন অনুষ্ঠান করেন৷ সমস্ত মার্গী বোনেরাও একই রঙের শাড়ী পড়ে কীর্ত্তনের যোগ দেন৷ অখণ্ড কীর্ত্তন পরিচালনা করেন শ্রীমতী শুক্লা রায় ও প্রদীপ রায়৷
অখণ্ড কীর্ত্তনের পর মিলিত সাধনা অনুষ্ঠিত হয়৷ এরপর ১৯৬৪ সালের ২৮শে মার্চের সেই স্মরণীয় ঘটনাটির প্রত্যক্ষদর্শী শ্রীইন্দ্রমোহন তালুকদার (৯০) ওই ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন৷৷ ওই সময় ‘বাবা’র গাড়ীতে তিনি ভলাণ্ঢিয়ার রূপে উপস্থিত ছিলেন৷ তিনি সেই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে বলেন, বাবা সেই সময় আমবাগানে ধর্মমহাচক্র করতে এসেছিলেন৷
১৯৬৪ সালের ২৮শে মার্চ লাউখোয়া অভয়ারণ্যে বেড়াতে গিয়ে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি গণ্ডারের গায়ে হাত বুলিয়ে দুর্বোধ্য ভাষায় কিছু বললেন....যা অন্যান্য মার্গীরা কেউ বুঝতে পারল না৷ বাবা যখন ওখান থেকে ফিরছেন গণ্ডারটির চোখ দিয়ে তখন জল গড়িয়ে পড়ছে৷
এখানে যে ক’দিনই তিনি ছিলেন প্রতিদিনই গাড়ীতে করে বাইরে বেড়াতে যেতেন ও একজায়গায় গাড়ী রেখে হেঁটে বেড়াতেন৷ সেদিনও যথারীতি বাবা বেড়াতে বেরিয়ে বললেন, ‘চল, আজ লাউখোয়া অভয়ারণ্যে যাব৷ বাবা নিজেই রাস্তার নির্দেশ দিয়ে চললেন৷ গাড়ী যখন অভয়ারণ্যের পাশে পৌঁছল তখন প্রায় সন্ধ্যা৷ বাবা বললেন, অভয়ারণ্যের ভেতরে চল৷ বাবার নির্দেশ মত চালক অভয়ারণ্যের ভেতরে গাড়ী কিছুটা এগিয়ে নিয়ে গেল৷ কিছুটা এগোনোর পর দেখা গেল রাস্তার ওপর একটি গণ্ডার দাঁড়িয়ে আছে, সঙ্গে তার বাচ্চাও৷ গণ্ডার একেই ভয়ঙ্কর হয়, সঙ্গে বাচ্ছা থাকলে তো আরও ভয়ঙ্কর হয়৷ গাড়ীর অন্যান্যরা এই গণ্ডার দেখে বেশ হকচকিয়ে যায়৷ বাবা কিন্তু শান্তভাবে গাড়ী থামাতে বললেন৷ গাড়ী থামলে বাবা গাড়ী থেকে নেমে ওই গণ্ডারটির দিকে এগিয়ে চললেন৷ অন্যান্য মার্গীরা ভয় পেলেও ‘বাবা’ যখন যাচ্ছেন, তখন তারাও সঙ্গে চলল৷ গণ্ডারটিও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে৷ বাবা গণ্ডারটির কাছে গিয়ে গণ্ডারের গায়ে হাত বুলোলেন ও দুবোর্ধ্য ভাষায় কী যেন বললেন৷ স্বাভাবিভাবে বাবার ভাষা অন্য মার্গীরা কেউ বুঝতে পারল না৷ এরপর ‘বাবা’ বললেন, চলো আমরা ফিরে যাই৷ এই বলে বাবা ওখান থেকে ফিরতে শুরু করলেন৷ মার্গীরাও ‘বাবা’র সঙ্গে সঙ্গে ফিরতে শুরু করলেন৷ কিছুটা এসে ইন্দ্রমোহনবাবু ও অন্যান্য মার্গীরা পেছন ফিরে অবাক হয়ে দেখলেন, গণ্ডারের দু’চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে৷ বাবা গাড়ীতে ওঠার পর চালক বাবার নির্দেশ পেয়ে গাড়ী ঘুরিয়ে নিয়ে চললেন৷ মার্গীরা ওই গণ্ডারটির বিষয়ে প্রশ্ণ করেছিলেন, বাবা প্রথমে কিছুই উত্তর দেন নি৷ হয়তো আগের জন্মে ও কোনো সাধক ছিল, কোনো কর্মফল ভুগতে এ জন্মে ওকে গণ্ডার হতে হয়েছিল৷ বাবার স্পর্শ পেয়ে এবার হয়তো ওর মুক্তি হয়৷
এই ঘটনা বলে, ইন্দ্রমোহন দাদা জানান, এই ঘটনার পর থেকে আনন্দমার্গীরা প্রতি বছর এই দিনটিতে যেখানে গণ্ডারটি দাঁড়িয়েছিল সেখানেই সমবেত হয়ে কীর্ত্তন–সাধন–ভজ করেন৷ এখন ওইখানে একটি উঁচু ঢিপি রয়েছে৷ ওখানে মার্গীরা ঘর বানাতে চেয়েছিলেন কিন্তু যেহেতু এটা অভয়ারণ্যের এলাকা, তাই সরকার এখানে কোনো ঘর বানাতে দেয়নি৷ তাই এখানে ঢিপি তৈরী করে চিহ্ণিত করে রাখা হয়েছে ও প্রতি বছর এখানে এই দিনে বিশেষ উৎসব হয়৷ ইন্দ্রমোহনজীর স্মৃতিচারণের পর সমবেত ভক্তদের সামনে আচার্য গুরুদত্তানন্দ অবধূত আনন্দমার্গের আধ্যাত্মিক দর্শন ও সাধনা সম্পর্কে আলোচনা করেন৷
অনুষ্ঠানের পর নারায়ণ সেবার ব্যবস্থা করা হয়৷ স্থানীয় বিশিষ্ট আনন্দমার্গী শ্রী নীলকান্ত বিশ্বাস, শ্রীসুশীল সরকার, শ্রীসুনীল সরকার, শ্রীনিরঞ্জন সরকার, শ্রী গৌরাঙ্গ সাহা, শ্রীকৃষ্ণ দাস প্রমুখের উদ্যোগে ও অক্লান্ত পরিশ্রমে অনুষ্ঠানটি সাফল্যমণ্ডিত হয়৷