পূর্ব প্রকাশিতের পর
আগেই বলেছি যে একটা ফুলবাগানকে সুষ্ঠুভাবে পরিচর্র্য করতে গেলে যেমন তার চতুর্দিকে শক্ত প্রাচীর Strong wall) তৈরী করতে হয়, ঠিক তেমনি কামময় কোষকে নিয়ন্ত্রন করার জন্যে সুষ্ঠু অনুশাসনের প্রয়োজন৷ এই অনুশাসনেরই অপর নাম ‘যম-নিয়ম’৷ আনন্দমার্গের ‘চর্র্যচর্য (২য়খন্ড) -তে এই যম নিয়মাবলীকে বলা হয় ‘নীতিবাদ’৷ ‘নীতি কী? যা মনকে কল্যাণমুখী করে তোলে, তাই নীতি পদবাচ্য------ ‘‘ক্ষেমার্থে নয়নং ইত্যর্থে নীতি’’৷ নীতিহীন জীবন ধবংসাত্মক৷ নীতিবিবর্জিত জীবনধারায় মনে পাপের বাসা তৈরী হয় চেতনা হারিয়ে মন পশুত্বে নেমে আসে ক্রমান্বয়ে সভ্যতাকে অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে যায়৷ প্রসঙ্গত বলি বর্তমান সভ্যতায় সুষ্ঠু আদর্শবাদ ও নেতৃত্ববর্গের নীতিহীন জীবনচর্র্যই সমাজ অবক্ষয়ের বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে৷ অন্যদিকে নীতির অনুশীলন ব্যষ্টিজীবনে ও সমাজ জীবনে পবিত্রতা বজায় রাখে.... সামগ্রিক বিকাশের ধারাকে বজায় রাখে ৷ যাইহোক, ‘যম-নিয়ম’ বা নীতিবাদের অঙ্গ মোট ১০টি --- যমের ৫টি আর নিয়মের ৫টি অঙ্গ সম্পর্কে নিম্নে আলোচিত হল:
‘যম নিয়ম’ অভ্যাসযোগ ঃ---
যম (৫টি অঙ্গ)ঃ
১. অহিংসা ঃ মনবাক্য ও কাজের দ্বারা জগতের কাউকে পীড়ন না করা৷
২. সত্য ঃ অপরের কল্যাণের জন্যে মন ও বাক্যের যথার্থভাব৷
৩.অস্তেয় : চুরি না করা ও চুুরির মানসিকতা ত্যাগ করা৷
৪.ব্রহ্মচর্য: মনকে সদা ‘ব্রহ্মে’ স্থিত রাখা৷
৫.অপরিগ্রহ: অস্তিত্বের প্রয়োজনে যতটুকু গ্রহণযোগ্য তার চেয়ে বেশী গ্রহন না করা৷
নিয়ম (৫টি অঙ্গ)
১. শৌচ: শারীরিক , মানসিক শুচিতা বা পরিচ্ছন্নতা, মানসিক পরিচ্ছন্নতা, দয়া-দান পরোপকার ও নিজ কর্তব্য করে চলা৷
২.সন্তোষ : অযাচিতভাবে যা পাওয়া যায় তাতেই সন্তুষ্ট থাকা৷
৩.তপ: উদ্দেশ্য পূরণের জন্যে শারীরিক কৃচ্ছসাধনাই তপ:৷ উপবাস, প্রভৃতি তপের অঙ্গ৷
৪. স্বাধ্যায়: সঠিক অর্থ বুঝে সদগ্রন্থ অধ্যয়ন করা৷
৫.ঈশ্বর প্রণিধান: জীবনের সর্র্ববস্থায় ঈশ্বরে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা৷ তাঁর অভীষ্ট পূরণে সর্বদা কাজ করা তাঁরই ইচ্ছা তরঙ্গে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া, নিজেকে যন্ত্রী মনে না করে সর্বদা তাঁরই ব্যবহৃত যন্ত্র মনে করে সর্বদা চলা৷
মনোময় কোষ বা সূক্ষ্মমন Subtle Mind) ঃ কামময় কোষ কে পুষ্ট করার পর সেই আস্তরণকে সরিয়ে মন যখন মনোময় কোষে বিরাজ করে, মনের গভীরতা তখন বেড়ে যায়৷ এই স্তরটি নিয়ন্ত্রণে এলে মন সূক্ষ্মচিন্তা Subtle Thinking) করতে পারে ও তাদের কে সহজেই স্মরণে রাখতে পারে To memorise)৷ মনোময় কোষ স্মৃতিশক্তি’র আধারস্থল৷ বিজ্ঞানী, আধ্যাত্মিক তপস্বী, সাহিত্যিক, দার্শনিক,সাংবাদিক প্রমুখদের মনোময় কোষ উন্নত থাকার কারণেই প্রবল স্মৃতিশক্তির অধিকারী হয়ে থাকে৷ আমরা যে স্বপ্ণ দেখি তা মূলতঃ এই স্তরেই হয় অর্র্থৎ স্বপ্ণ দেখানো মনোময়কোষের অন্যতম কাজ৷ নিদ্রিত অবস্থায় কামময় কোষ (স্থূল মন) বিশ্রাম নেওয়ায় স্নায়ুকোষও স্নায়ুতন্ত্রতে যে বিক্ষিপ্ত চিন্তার ছাপ থেকে যায় তা নিয়ে মনোময় কোষ স্বপ্ণের জাল বুনতে থাকে৷ মনোময় কোষকে অধিক উন্নত করতে পারলে মানুষ ‘সম্মোহনী ক্ষমতা’ Power of Hypnotism) অর্জন করতে পারেন,Magician -রা এই সম্মোহন ক্ষমতা প্রয়োগ করেই মানুষকে বিনোদন দেখায়৷ সাধারণ মানুষ সম্মোহিত হয়েMagician কর্তৃক প্রদর্শিত জিনিসকেই সত্যি বলে মনে করে থাকে না৷ তবে ‘সম্মোহন ক্ষমতার’ কিছু ভাল দিকও আছে৷ বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অনেক মনোবিদ এই সম্মোহন ক্ষমতাকে দুর্বল রোগীর উপর প্রয়োগ করে তাদের রোগের নিরাময় করেন৷ মনোময় কোষ নিয়ন্ত্রিত হলে ‘মন’ অনেক উচ্চস্তরীয় অনুভূতি লাভ করতে পারে৷ তবে মানুষের লক্ষ্য যদি নির্গুণ চৈতন্য (ব্রহ্ম) না হয় তবে সে কোনদিনই বন্ধনমুক্ত হতে পারে না৷ যে কোন মুহূর্তেই মাঝ দরিয়ায় জীবনতরী ডুবে যেতে পারে৷ তাই সাধনা লদ্ধ অনুভূতিকে (সিদ্ধিকে) সর্বদাই জগতের কল্যাণে নিয়োজিত করা উচিত ---আত্মপ্রচারে নয়৷ (ক্রমশঃ)
- Log in to post comments