বছরের শেষে বিহারে বিধানসভার সাধারণ নির্বাচন৷ কেন্দ্রীয় শাসক দলের জোট শরিকের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার৷ ঘন ঘন দল বদলে তিনি আয়রাম গয়ারামের অনুগামী৷ তাই তাকে খুশী রাখার দায় একটা থাকেই যখন জোট সরকারের বড় শরিকের একক গরিষ্ঠতা থাকে না৷ কিন্তু তৃতীয় মোদি সরকার যে কতটা দুর্বল অর্থমন্ত্রীর বাজেট ঘোষনা থেকে তা স্পষ্ট৷ বিহারী জোট শরিককে সন্তুষ্ট করতে পরনে বিহার থেকে উপহার পাওয়া বিহারী মধুবনী শাড়ী৷ বাজেট ঘোষনার পরতে পরতে বিহার৷ ১৯৬৭ সালে কংগ্রেস ভাঙার পর থেকে অনেকগুলি জোট সরকার দেখেছে ভারতবাসী৷ কিন্তু এমন নির্লজ্জ শরিকি তোষণ কখনও দেখেনি৷ পাশেই যে পশ্চিমবঙ্গ নামের আর একটি রাজ্য আছে সেটা ভুলেই গেলেন মাননীয়া অর্থমন্ত্রী! বাঙলার কবি লিখেছিলেন ---‘‘নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান৷’’ তিনি আজ আর ইহলোক নেই৷ থাকলে হয়তো এমন কবিতা লেখার জন্যে নিজেকে ধিক্কার দিতেন৷
স্বাধীনতা প্রাপ্তির মধ্যরাত থেকেই বাঙলায় ঔপনিবেশিক শোষণের হাতবদল হয়৷ শ্বেত চামড়ার হাত থেকে ঔপনিবেশিক শোষণের যন্ত্র বাদামী চামড়ার স্বদেশী শোষকের হাতে চলে যায়৷ ২০১৪ সালে আচ্ছা দিনের স্বপ্ণ দেখিয়ে দিল্লির সিংহাসন দখল করেন নরেন্দ্র দামোদর মোদি৷ তিনি দেশবাসীকে দেখালেন ‘আচ্ছা দিনের স্বপ্ণ’৷ বাঙালী বিশেষ করে হিন্দু বাঙালীর এক শ্রেণী আনন্দে গদগদ হয়ে গেয়ে উঠলেন---
‘বড় আশা করে এনেছি গো
নমো অঞ্জলি ভরে দাও প্রসাদে৷’
কিন্তু সে দিল্লির ভাঁড়ে মা ভবানি! দিল্লীর ভাঁড়ার ভরতে একটা বৃহৎ অংশও যায় বাঙলা থেকে৷ তাঁর একটা অংশ অবশ্যই বাঙলার প্রাপ্য৷ কিন্তু রাজ্যে কেন্দ্রীয় শাসকের দল ক্ষমতায় না থাকায় তার ন্যায্য প্রাপ্য টুকুও পায় না পশ্চিমবঙ্গ৷ অবশ্য ডবল ইঞ্জিন সরকার থাকার সময় যে পেয়েছে সেকথাও বলা যাবে না৷ মোদিজি যতই মুখে নেহেরু বিদ্বেষ দেখান, বাঙলাকে বঞ্চনায় তিনি নেহেরুর পথই অনুসরণ করছেন৷ শুধু করছেন না বরং নেহেরুর থেকে অনেক বেশীই করছেন৷ নেহেরু যদি ইহলোকে থাকতেন মোদির পিঠ চাপড়ে বলতেন ---সাবাস বেটা! এগিয়ে যাও, তুমি তো আমার থেকেও বাহাদুর৷
হ্যাঁ! বাঙলাকে বঞ্চনায় মোদি নেহেরুর থেকেও বেশী বাহাদুর৷ শুধু বাহাদুর নয় প্রতিহিংসা পরায়ণও৷ নেহেরু কপাল গুনে রাজ্যে ডবলইঞ্জিন সরকার পেয়েছিলেন৷ কিন্তু মোদি সে ভাগ্য এখনও হয়নি৷ কে জানে বছরের শেষের দিকে বিহার বিধান সভার নির্বাচনে দিল্লী থেকে প্রচারে এসে পাটালিপুত্রের বাসিন্দাদের শুনিয়ে যাবেন---মেরা ভারত বিহার হ্যায়!