মনের উদারতা

আমরা সবাই পরমপুরুষের সন্তান, সবাই ভাইবোন৷ এই বিশ্বভ্রাতৃত্বের ভাবনা নিয়ে সবার সঙ্গে উচিত ব্যবহার করাই মনের উদারতা৷ তাঁর দৃষ্টিতে সবাই সমান৷ যাঁর মন উদার সবাই তাঁকে ভালবাসেন, তিনিও সবাইকে ভালবাসেন৷ তাঁর কাছে কেউ হিন্দু বা মুসলমান নয়, বৌদ্ধ বা খ্রীষ্টান নয়, ব্রাহ্মণ বা শূদ্র নয়৷ ধনী বা গরীব নয়, সবাই মানুষ, সবাই আপন৷ আর সবাই যখন আপন হয়ে যায়, তখন আর কেউপর থাকে না৷ মনের এই উদারতা না থাকলে মানুষ ঈশ্বরকে ভালবাসতে পারে না৷ আর ঈশ্বরের ভালবাসাও সে পায় না৷ কোন জীবকে বা কোন মানুষকে ঘৃণা করলে তো ঈশ্বরকেইঘৃণা করা হলো৷ কেননা প্রতিটি জীবের মধ্যেই তো ঈশ্বর রয়েছেন৷ সব জীবই তো তার সন্তান৷ তাই যে ঈশ্বরকে তুমি ঘৃণা করো, ভালবাসো না, তাঁকে তুমি পেতেও পারো না৷ ঈশ্বরকে পেতে হলে তাঁকে ভালবাসতে হবে, আর তাঁকে ভালবাসলে তাঁর সৃষ্ট জীবকেও ভালবাসতে হবে৷ সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখতে হবে৷ সবাইকে আপন ভেবে তাদের উপকার করতে হবে৷ এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনা বলি৷ এক নিঃস্তব্ধ গভীর রাত, অন্ধকার ঘরে একটি সাধারণ বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন হাজী মোহম্মদ মহসীন৷ হঠাৎ কিসের একটা শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়, চটপট মাথার নিকটের বাতিটা জ্বাললেন৷ অবাক কাণ্ড, দেখলেন, একটি লোক তাঁর বাক্স খুলে টাকা–পয়সা একটি কাপড়ে বেঁধে নিয়ে পালাবার চেষ্টা করছে৷ উপস্থিত বুদ্ধির দ্বারা লোকটিকে হাতে–নাতে ধরে ফেললেন তিনি৷ নিরুপায় হয়ে বেচারা চোর তাঁর পায়ে লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে লাগল৷ চোখের জল মুছতে মুছতে চোরটি তার সংসারের হত দারিদ্র্যের কাহিনী শোণাতে লাগল৷ সে জানাল, অভাবের দায়ে পড়ে এই পাপ কাজে যুক্ত হয়েছে৷ বলতে লাগল, ‘এবার ছেড়ে দিন হুজুর, আমাকে দয়া করে ছেড়ে দিন৷ এমন কাজ আর জীবনে করব না৷ বৌ–ছেলেমেয়ে না খেয়ে মরছে, তা দেখতে না পেরে এমন পাপ কাজ করেছি৷ এবারকার মত ক্ষমা করুন৷ আর কখনও এমন কাজ করব না৷’

মহসীন চোরের এরূপ কাতর প্রার্থনা শুণে কিছু সময় চিন্তা করলেন৷ পরে তাকে বললেন, ‘চল তোমার বাড়ী যাব৷’ চুরি করা টাকা–পয়সা তুলে নিয়ে চললেন চোরের সঙ্গে সঙ্গে৷ চোর তো ভয়ে পাথর৷ সে ভাবল তাকে নিশ্চয়ই পুলিশে দেওয়া হবে৷ লজ্জা আর ভয়ে নিরুপায় হয়ে চোরটি অবশেষে তাঁকে বাড়ীর পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল৷

মহসীন চোরের বাড়ীতে পৌঁছে হতবাক৷ বুঝলেন তার কথা বিন্দু মাত্র মিথ্যা নয়৷ দারিদ্র্য আর অনাহারের যন্ত্রণায় পরিবারের সকলেই মৃতপ্রায়৷ তাদের দুর্দশা দেখে উদার হৃদয়, মহসীনের দয়ালু মন কেঁদে উঠল৷ তিনি অপহূত সমস্ত টাকা চোরকে দিয়ে দিলেন৷ তিনি তাকে কিছু সংসারের প্রয়োজনে ব্যয় করতে আর বাকী টাকা নিয়ে সৎপথে উপার্জন করতে পরামর্শ দিলেন৷ তাকে চুরি করতে নিষেধ করলেন বরং প্রয়োজনে মহসীনের নিকট সাহায্যের জন্যে আসতে বললেন৷ মহসীনের এইউদার ব্যবহারে চোর ভীষণ ভাবে অবাক হ’ল৷