মোদীরবোট-রাজনীতি মোরবীতে সেতু ভেঙ্গে মৃত্যু ১৪১

সংবাদদাতা
পি.এন.এ.
সময়

গত ২৬শে অক্টোবর গুজরাতের মোরবীতে  নদীর ওপর ঝুলন্ত সেতু ভেঙ্গে ১৪১ জনের  সলিল সমাধি হয়েছে৷ আহতের সংখ্যা একশোর বেশী৷ খবরে প্রকাশ সেতুটি  সাত মাস বন্ধ ছিল৷ কোনরকমে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করে ফিটনেস সার্টিফিকেট না নিয়েই তড়িঘড়ি সেতুটা জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল৷ আরও জানা যায় সেতু মেরামতি সংক্রান্ত কাজে কোন অভিজ্ঞতা না থাকাও রেভা নামক সংস্থাকে এই কাজের  টেন্ডার দেওয়া হয়৷ দুর্ঘটনার অন্ত-তদন্তে অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি বেরিয়ে আসছে৷ ব্রিটিশ আমলের সেতুটি দেড়শো বছরের পুরোনো মরচে ধরা কেবল গুলি পাল্টানোই হয় নি৷ তার ওপর রঙ করে দায় সারা হয়েছে৷ বার্ধক্যগ্রস্ত সেতুর  মেঝেতে ৪ স্তর অ্যালুমিনিয়ামের যে চাদর বিছানো হয়েছিল তার ওজন অনেক বেশি ছিল৷ এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল নিয়ন্ত্রণহীন প্রায় ৫০০ জন পর্যটকের ভীড়৷ এই সমবেত ওজনের চাপ সেতুটি নিতে পারেনি৷ তার ওপর কিছু  যুবক  বিনোদনের জন্য ৫০০ জনের ওজন সহ ঝুলন্ত সেতুটি দোলাচ্ছিল৷ ফলে সেতুটি ভেঙ্গে পড়ে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়৷

প্রশ্ণ উঠেছে ফিটনেস সার্টিফিকেট না থাকা সত্ত্বেও তবে কি গুজরাতে আসন্ন বিধানসভার নির্র্বচনের কথা ভেবে কোনরকম সুরক্ষার তোয়াক্কা না করেই তড়িঘড়ি করে সেতুটি  জনসাধারণের জন্য খুলে দিতে প্রশাসনের চাপ ছিল? এর মধ্যেই অভিযোগ টেন্ডার না ডেকেই বরাত দেওয়া হয়েছিল ওরেভা গ্রুপকে৷ সেই সন্দেহ ক্রমশ দৃঢ় হচ্ছে৷ সেতু মেরামতির দায়িত্ব প্রাপ্ত ওরেভা গ্রুপের কর্র্ত্তরা বেপাত্তা তাদের আমেদাবাদের অফিসে তালা ঝুলছে৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদী নিজের রাজ্যে বোট প্রচার সত্ত্বেও  দুর্ঘটনার হওয়ার দু’দিন পেরিয়ে যাবার পর কেন দুর্ঘটনাস্থলে গেলেন?

সেতু দুর্ঘটনার ঘটনা গুজরাতে বিজেপিকে ভাল রকমের অস্বস্তিতে ফেলেছে৷ সেতু মেরামতকারী সংস্থার সঙ্গে বিজেপি নেতাদের ঘনিষ্ঠতা সেই অস্বস্তি আরো বাড়িয়েছে৷ দুর্ঘটনার ৪৮ ঘন্টা পর আহতদের দেখতে মোদী স্থানীয় হাসপাতালে যান৷ কর্র্পেরেট রাজ্য গুজরাতের মোরবীতে সেই জরাজীর্ণ হাসপাতালের ভোলপাল্টাতে সারারাত ধরে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামতী ও রঙের পোঁচ পড়েছে৷ রাতারাতি কেনা হয়েছে চারটি ওয়াটার কুলার৷ সেগুলির আবার কোন বিদ্যুৎ ও জলের সংযোগ ছিল না৷ মোদির  হাসপাতাল সফর, তদন্ত, দোষীদের গ্রেপ্তার ইত্যাদিতে প্রত্যাশিত ড্যামেজ কন্ট্রোল সম্ভব নয় বুঝেই বিজেপি গত মঙ্গলবার ‘নাগরিকত্বের ‘তাস’ প্রকাশ্যে খেলেছে সেতু বিপর্যয়ের অস্বস্তির মাঝে হঠাৎ গুজরাতের দুইজেলা---‘আনন্দ’ ও মেহসানা জেলায় বসবাসকারী ‘বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আগত অমুসলিম শরণার্থীদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার উদ্যোগ  কি নিছক কাকতালীয়? রাজনৈতিক মহল কিন্তু  মানতে নারাজ৷

শর্তহীনভাবে নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়ার এই উদ্যোগকে বিরোধী শিবির পুরোদস্তুর বোট মুখী পদক্ষেপ তথা বোট-রাজনীতি হিসাবেই দেখছে৷ আসলে মোরবী থেকে নজর ঘুরিয়ে নাগরিকত্বের ললিপপ দেখিয়ে বোট বৈতরণী পার হওয়াই মোদী সরকারের লক্ষ্য৷