সাত দফায় অনুষ্ঠিতব্য সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন পর্ব প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে৷ গত ১৪ই মে কলকাতায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের রোড শো-কে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটল৷ এর আগে শান্তিপূর্ণ মতদানের নামে মারপিট, গুণ্ডামী, হুমকী, বুথ দখলের মত ঘটনাও ঘটেছে৷ এদিন যা হ’ল তা গণতন্ত্রের কলঙ্ক ছাড়া আর কী বলা যাবে! বিজেপির রোড শো-তে রাজনৈতিক আবেদনের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছিল রোড-শো-এর নামে ভরত নাট্যম, ভাংড়া, মাদ্রি নাচ, অসমিয়া নাচ থেকে শুরু করে সাঁওতালি নাচ আর মহিলা ঢাকিদের ঢাকের বাদ্য---কী ছিল না এই মিছিলে? রাজনৈতিক মিছিলে তো নিজেদের মতাদর্শ ও কার্যাবলী তুলে ধরে এগুলো সমর্থনের জন্যে পার্টির আবেদন থাকবে৷ তা নয়, এতো যেমন করে হোক নাচ-গান-হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যে মানুষকে আকৃষ্ট করা৷ আজকাল নির্বাচনে প্রার্থী করার ক্ষেত্রেও প্রস্তাবিত প্রার্থী জনপ্রতিনিধি হিসেবে কতটা সাধারণ মানুষের স্বার্থে দেশের জন্যে উপযুক্ত আইন তৈরী করবেন ও সরকারী নীতিকে পরিচালনা করবেন, সে ব্যাপারে একেবারেই নজর দেওয়া হয় না৷ কেবল জনপ্রিয় সিনেমা আর্টিষ্টস্, খেলোয়াড় প্রভৃতিকে প্রার্থী করে যুব সমাজকে যেন-তেন-প্রকারেণ কাছে টানার কৌশল করা হয়৷ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্যটাই হারিয়ে গেছে৷ গণতান্ত্রিক আদর্শের আজ কিছুই অবশিষ্ট নেই৷ সবাই মিলেমিশে আলোচনা করে জনসেবা করার উদ্যম বা উদ্যোগ কোনটাই লক্ষ্যে পড়ে না৷ যেমন করেই হোক ক্ষমতা দখল করাটাই মূল লক্ষ্য৷ ক্ষমতাকে কব্জা করার জন্যে পুঁজিপতিদের হাতে রাখাটা বর্তমান গণতান্ত্রিক নির্বাচনে একটা প্রধান অঙ্গ৷ গত মঙ্গলবারের রোড শো উপলক্ষ্যে দুই ছাত্র দলের মধ্যে চরম সংঘর্ষ বাঁধে৷ বিদ্যাসাগরের মত মনীষীর মূর্ত্তিও ভাঙ্গা হ’ল৷ এটা কত বড় লজ্জার ঘটনা, তা ভাবাই যায় না! এই কী রাজনীতির মাধ্যমে জনসেবার নমুনা? তা তো নয়৷ প্রচলিত গণতন্ত্র আজ তার মহিমা সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেছে৷ আসলে দেশের অধিকাংশ মানুষ যখন সুশিক্ষিত, নীতিবাদী ও সামাজিক-অর্থনৈতিক বিষয়ে সচেতন, তার সঙ্গে তাদের জীবনের নূ্যনতম চাহিদা মিটেছে ---দেশের অবস্থা এমন হলে তবে সেখানে গণতন্ত্র সফল হবার সম্ভাবনা৷ প্রার্থীদেরও অবশ্যই যোগ্য হতে হবে৷ এসবের অভাবেই বর্তমানে গণতন্ত্রে চলছে লুঠেরাদের তাণ্ডব৷
সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়