কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন শুধু মোদি সরকারের আমলেই বা বলি কেন স্বাধীনতার পর থেকে অর্র্থৎ সেই গান্ধী নেহেরুর আমল থেকে বর্তমানে মোদির আমল পর্যন্ত এই ৭৫ বছর ধরে দেশীয় শাসনে ভারতের ২৭ কোটি মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ পায় নি---এখন তারা ক্ষুধার শিকার৷ তারা প্রত্যহ রাতে ক্ষুধা নিয়ে ঘুমোতে যায়--- ক্ষুধা নিয়ে জাগে৷
অথচ দেশের সিংহভাগ মুষ্টিমেয় কয়েকজন ধনকুবের দখল করে বসে আছে৷
দেশের বিশাল এক অংশ আজ চরম দারিদ্রের শিকার৷ দেশের অধিকাংশ ছাত্র-যুবা বেকারত্বের জ্বালায় জ্বলে পুড়ে মরছে৷ জীবনকে সুন্দর করে বিকাশের কথা ভাববার অবসর নেই তাদের৷ ---অন্নচিন্তা চমৎকারা !
অথচ স্বাধীনতার আগে এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে শুরু করে প্রতিটি সাধারণ মানুষের স্বপ্ণ ছিল---‘ভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে৷.... ধর্মে মহান হবে, কর্মে মহান হবে.... ’৷ কিন্তু কেন তাদের সে স্বপ্ণ ভঙ্গ হল? এই অন্ধকার থেকে উত্তরণের পথ কী ? কারুর জানা নেই সে পথ৷ সবাই অন্ধকারে কোনো রকম প্রাণে বাঁচার সংগ্রামে দিবারাত্র ব্যস্ত৷
কেন্দ্রের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধিও মন্তব্য করেছিলেন সরকার জনস্বার্থে একটাকা বরাদ্দ করলে তার ষোলো পয়সা মাত্র যথাস্থানে পৌঁছে, বাকি টাকা উধাও হয়ে যায় মাঝপথে৷ মানে সরকারী আমলারা ও জনপ্রতিনিধিরাই খেয়ে নেন৷ কিন্তু এ রোগের কোনো দাওয়াই তিনি দিতে পারেন নি৷ এ সমস্যার উৎস কোথায়, এ সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ কী?--- কারুর তা জানা নেই৷
এইসব সমস্যার প্রকৃত উৎস কোথায়, কী তার সমাধান, তা আমরা পরিষ্কার ভাবে জানতে পারবো একমাত্র পরম শ্রদ্ধেয় মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার প্রবর্তিত সামাজিক-অর্থনৈতিক দর্শন ‘প্রাউট’কে জানলে৷ প্রাউটের সমাজ দর্শনে বলা হচ্ছে,সমাজের আদিম অবস্থায় সবাই ছিল কায়িক শ্রমজীবী৷ সেই পারস্পরিক সংঘর্ষের যুগে যারা সাহসী, শক্তিশালী স্বাভাবিকভাবে তাঁরাই সমাজে আধিপত্য বিস্তার করে৷ তারা হল সর্দার বা ক্ষত্রিয় --- তাই সে যুগ হল ক্ষত্রিয় প্রাধান্যের যুগ বা এক কথায় ক্ষত্রিয় যুগ৷ পরবর্তীকালে এল ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন বিপ্রদের intellectuals) প্রাধান্যের যুগ---যাকে বলব বিপ্র যুগ৷ সর্বশেষে এল সমাজের ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য৷ অর্থের জোরে ব্যবসায়ী বা বৈশ্যরা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাধান্য বিস্তার করল৷ এটা হলো বৈশ্য যুগ৷ এই বৈশ্যরা অর্র্থৎ পুঁজিপতিরা দেশের অর্থনীতি ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করে দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা, আমদানি, রপ্তানি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল মুনাফার পাহাড় বানাচ্ছে ও নিজেদের অর্থভান্ডারকে দ্রুতহারে বাড়িয়ে তুলছে৷ আর সেই অর্থশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক নেতাদেরও মাথা কিনে নিয়েছে৷
ধনতন্ত্রের কেন্দ্রিত অর্থনীতিই পুঁজিপতিদের সম্পদ বৃদ্ধির প্রধান মাধ্যম ৷ বর্তমানে প্রায় সব রাজনৈতিক দল দেশের দারিদ্র্য ও বেকার সমস্যার সমাধানের জন্যে দেশী ও বিদেশী পুঁজিপতিদেরই ভজনা করছে৷ অর্র্থৎ শিয়ালের কাছে মুর্গী বর্র্গ রাখা৷ এই কারণে বর্তমান অর্থনীতিতে পুঁজিপতিরা আরও বড়ো পুঁজিপতি হয়ে যাচ্ছে, ফলে গরিবের অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না, বরং অবনতি হচ্ছে৷ ধনিকশ্রেণী তাদের মুনাফা বৃদ্ধির নেশায় সবসময় বিভোর, দেশের গরিব মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণ বা বেকার সমস্যার সমাধান তাদের উদ্দেশ্য নয়৷ তাই তারা সেই সমস্ত শিল্পে অর্থ বিনিয়োগ করে যাতে যতটা সম্ভব কম কর্মী নিয়োগ করতে হবে৷ তাই পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থায় কোনো দেশেই বেকার সমস্যার সমাধান হয় না৷
প্রাউট সেক্ষেত্রে বিকেন্দ্রিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও ব্লকভিত্তিক পরিকল্পনার পথ দেখাচ্ছে৷ প্রাউট যে অর্থনৈতিক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যার প্রথম কথা হলো প্রতিটি মানুষের নূ্যনতম চাহিদা পূরণের গ্যারান্টি,তাই প্রাউট চায়,প্রতিটি মানুষেরই কর্মসংস্থান৷ সঙ্গে সঙ্গে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য প্রাউটের প্রথম দাওয়াই, স্বয়ংসম্পূর্ণ সামাজিক-অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন৷
প্রাউটের শ্লোগান হল---নোতুন নীতি ও নোতুন নেতা৷ তাই শোষণ মুক্ত সমাজ গড়ার আদর্শকে বাস্তবায়িত করতে প্রাউটে আদর্শ চরিত্রের মানুষ (সদ্বিপ্র) তৈরীরও কর্মসূচী রয়েছে৷
সৎ, নীতিবাদী , সেবাপরায়ণ ও ত্যাগী মানুষ না হলে নোতুন সমাজ গড়বে কারা? তাই প্রাউট এই নোতুন চরিত্রবান মানুষ ‘সদ্বিপ্র’ তৈরীর ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেয় ও বিশেষ প্রশিক্ষণেরও কথা বলে৷ অন্য সমস্ত রাজনৈতিক দল এই দিকটিকে অবহেলা করে৷ তাই সৎ , নীতিবাদী ক্যাডার তারা তৈরী করতে পারে না, তাই সৎ, নীতিবাদী নেতারও সংকট দেখা দেয়৷
- Log in to post comments