গত ৮ই নভেম্বর কেন্দ্রের মোদি-সরকার নোটবন্দী ঘোষণা করেছিল ৷ এবছর ৮ই নভেম্বর তার একবছর পূর্ণ হ’ল ৷ এখন পেছনের দিকে তাকানোর পালা৷ মোদি সরকার হঠাৎ ৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল ঘোষণা করে চমক সৃষ্টি করেছিল, বলেছিল এরফলে দেশের কালো টাকা অর্থনীতির অবসান হবে, সমস্ত জাল নোট বাতিল হবে, আর জাল নোট নিয়েই যত সন্ত্রাসবাদীদের রমরমা৷ তাই সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপও বন্ধ হয়ে যাবে৷
এখন কারও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, সরকার যে এসব চমকপ্রদ ঘোষণা করছে কীসের জন্যে৷ দেশকে কালো টাকা থেকে উদ্ধারের জন্যে নয়৷ আসলে, নিজেদের ব্যর্থতা ঢেকে মানুষের দৃষ্টিকে অন্যপথে ঘোরানোর জন্যে৷
মানুষের মনে প্রশ্ণ জেগেছে, দেশকে কালো টাকার কবল থেকে মুক্ত করাটা যখন বড় কথা, তখন কালো টাকার রাঘববোয়ালদের গ্রেফতার করা হ’লনা কেন৷ ২-৪টা চুনোপুটিকে গ্রেফতার করে সরকার নিজেদের ভাবমূর্ত্তি তৈরী করতে চাইল শুধু৷
সরকার এই যে হঠাৎ ৫০০ /১০০০ টাকার নোট বাতিল করলেন৷ এরফলে মানুষের কাছে যে ৫০০/১০০০ টাকার নোট ছিল, তা বাজারে অচল হয়ে গেল৷ কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্ত কাজ কারবার চলে অর্থের মাধ্যমে৷ হাতের টাকা অচল অথচ অর্থনৈতিক কাজ কারবার চালু রাখতে এর পরিবর্তে নোতুন টাকার যোগান অত্যন্ত কম৷ ফলে ব্যাঙ্কের সামনে দীর্ঘ লাইন৷ দীর্ঘ লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হ’ল৷ বহু ক্ষুদ্র শিল্পের উৎপাদন বন্ধ হ’ল৷ কাঁচামাল ক্রয় করা, উৎপাদিত মাল বিক্রয় করা, শ্রমিকদের মজুরী দেওয়া সমস্ত কিছুতে অভাবনীয় সমস্যা দেখা দিল৷ তার ফলে জনগণের কষ্টের সীমা থাকল না৷ মোদিজী বলেছিলেন, ‘‘ আমাকে ৫০ দিন সময় দিন, সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে৷ স্বাভাবিক কিন্তু হ’ল না৷ তবুও মানুষ এই কষ্ট স্বীকার করে নিয়েছিল সুদিনের আশায় ৷ ভাবল , সরকারের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ-হলে ‘আচ্ছে দিন’ আসবে৷ কিন্তু-প্রতিশ্রুতিপূর্ণ হ’ল কোথায়? কালো টাকাও বন্ধ হল না, আবার বাজারে নোতুন জাল টাকা এসে গেল, জঙ্গী হানাও বন্ধ হল না৷ কশ্মীরে শান্তিও এল না৷
সরকার বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সুইস ব্যাঙ্কে জমা টাকা টেনে বের করবেন৷ ফলে প্রতিটি গরীব মানুষের নামে ব্যাঙ্কে ১৫ লক্ষ টাকা করে জমা পড়ে যাবে৷ কিন্তু সুইসব্যাঙ্কের একটা টাকাও উদ্ধার হ’ল না৷
২০০৬ সালে সুইসব্যাঙ্ক এসোসিয়েশনের রিপোর্ট ছিল সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয় কালো টাকার পরিমাণ ১,৪৫,৬০০ কোটি টাকা৷
খবর প্রকাশিত হ’ল ৬৩৪ জন ভারতীয়দের বিদেশে সঞ্চিত কালো টাকার পরিমাণ ভারতীয় সম্পদের ২গুণ৷ কিন্তু কোনো কালো টাকার উদ্ধার তো হল না৷
এমনকি, সুপ্রিমকোর্ট যখন সরকারকে এই সমস্ত কালো টাকার কারবারিদের নাম ঘোষণা করতে বলল, তখনও কিন্তু সরকার তাদের নাম ঘোষণা করতে রাজী হল’ না৷
দেখা গেছে, নোটবন্দী ঘোষণার পর কালো টাকার রাঘববোয়ালরা বরং নানান্ কৌশলে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ও কর্মীদের হাত ক’রে তাদের কালো টাকা শাদা করে নিয়েছে৷ এমনকি শাসকদলের অনেক নেতানেত্রীর নোটবন্দীর ঘোষণার অব্যবহিত পূর্বে-জমি-বাড়ী ক্রয় করে তাদের কালো টাকাকে শাদা করার সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে ৷