নূ্যনতম আয় নয়-ক্রয়ক্ষমতা দিতে হবে - আর্থিক পরিকাঠামোয় আমূল পরিবর্তন চাই

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

করোনার কোপ, অর্থনীতির বেহাল দশায় দিন আনা, দিন খাওয়া মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত৷ আর্থিক দুর্দশা সাধারণ মানুষের  জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে৷ নোটবন্দি, অপরিকল্পিত জি.এস.টি ও  সরকারের পুঁজিপতি তোষণের ফলে আর্থিক দুর্দশা করোনার অনেক আগেই শুরু হয়েছে৷ গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত করোনা এসে  লক্ডাউন ও কোটি  কোটি মানুষের  কাজ  হারানোয় সেই দুর্দশা শত গুণ বাড়িয়েছে৷ মানুষের রোজগার নেই অথচ  নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম দিন দিন  অগ্ণিমূল্য হয়ে যাচ্ছে৷

সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে যাতে অর্থনীতির বেহাল দশা থেকে  বেরিয়ে আসার কিছু নিদান দিয়েছে৷ সেখানেই অর্থনীতির ক্ষত সারিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে প্রতিটি মানুষের নূ্যনতম আয় নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে৷

প্রবীন প্রাউটিষ্ট নেতা শ্রী প্রভাত খাঁ বলেন--- নূ্যনতম আয় অর্থনীতির ক্ষত সারানোর দাওয়াই নয়৷ যেভাবে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম দিন দিন বাড়ছে তা সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার  বাইরে চলে যাচ্ছে৷ এই অবস্থায় নূ্যনতম আয়  নিশ্চিত করলেই কি মানুষ রেহাই পাবে?

শ্রী প্রভাত খাঁ বলেন--- প্রতিটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে ও বাজারে  নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মানুষের হাতে ক্রয় ক্ষমতা তুলে দিতে হবে৷ তবেই মানুষ আর্থিক দুরাবস্থা থেকে মুক্তি পাবে৷

প্রাউটিষ্ট ইয়ূনিবার্সালের কেন্দ্রীয় সংঘটন সচিব আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত বলেন--- নূনতম আয় অসহায় মানুষের মনতুষ্টির উপায় হতে  পারে, কিন্তু  আর্থিক দুরাবস্থা  থেকে মুক্তির পথ হতে পারে না৷

পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার  অবধারিত  পরিণাম বর্তমান আর্থিক দুরাবস্থা৷ এখানে রাষ্ট্রশাসক  ও পুঁজিপতি  একই সম্প্রদায়ভুক্ত৷ উভয়েই শোষকের  ভূমিকায়  অবতীর্ণ৷ তিনি বলেন সম্প্রতি যে কৃষি আইন বলবত করা হয়েছে, পণ্যদ্রব্য আইন সংশোধন করা হয়েছে তার সুফল ধনিক শ্রেণীই পাবে৷ সাধারণ কর্ষকদের এতে কোন লাভ হয়নি৷ আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূতের কথায় আর্থিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার পথ তো আছে কিন্তু পুঁজিপতির অর্থেপুষ্ট রাজনৈতিক দল ও শাসকবর্গ সে পথে হাঁটবে না৷ কারণ সে পথে চলতে হলে বর্তমান আর্থিক পরিকাঠামোর খোল-নলচে পাল্টাতে হবে৷ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে নয়, আর্থিক পরিকল্পনা তৈরী করতে হবে ব্লকস্তরে নেমে৷ তবেই সাধারণ মানুষের আর্থিক সুরাহা হবে, কিন্তু পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক পরিকাঠামো মুখ থুবড়ে পড়বে৷ তাই পুঁজিবাদ আশ্রিত অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ কেউই সেই পথে চলবে না৷

তাই নূ্যনতম আয় নয়, প্রতিটি মানুষের জীবনধারণের নূ্যনতম প্রয়োজনের (অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা) নিশ্চিততা দিতে হবে৷ প্রাউটের (প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব) বিকেন্দ্রিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনার বাস্তব রূপ দিতে হবে৷ কৃষি ও শিল্পের সমন্বয়ে ব্লকভিত্তিক সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থনৈতিক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে৷ আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে কৃষিকে উন্নত করতে হবে, সেই সঙ্গে কৃষি নির্ভর , কৃষি সহায়ক  শিল্প গড়ে কৃষিও শিল্পের  মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে হবে৷ তবেই একটা বলিষ্ঠ অর্থনীতি গড়ে উঠবে, প্রতিটি মানুষ ক্রয় ক্ষমতা  অর্জন করবে৷

আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত খেদের সঙ্গে বলেন--- আমরা প্রাউটিষ্টরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদদের  দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদদের অর্থনৈতিক সঙ্কট থেক পরিত্রাণের পথের কথা বলে আসছি সন্তুলিত সামাজিক-অর্থনৈতিক সংরচনার কথা বলে আসছি কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি৷ আজও আমরা বিশ্বের সমস্ত  অর্থনীতিবিদদের নিশ্চিত করে জানিয়ে দিতে চাই ---বর্তমান অর্থনীতির রোগ সারাতে যিনি যে দাওয়াই দিক রোগ সারবে না৷ প্রাউটের  বিকেন্দ্রিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ণই একমাত্র দাওয়াই৷

এক প্রশ্ণের উত্তরে আচার্য প্রসূনানন্দ বলেন প্রাউটিষ্টরা এখন মানুষকে সমাজ-অর্থনীতি-রাজনীতি বিষয়ে  সচেতন করার কাজে নেবেছে৷ আগামী দিনে নিপীড়ণ ও শোষণের  অবসান ঘটাতে মানুষ আন্দোলন গড়ে তুলবে ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করবে৷ প্রাউটিষ্টদের এটাই জাগতিক লক্ষ্য৷