গত প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে (গত ৩০ জুনের খবর) এ নিয়ে ২২ বার পেট্রল ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হ’ল৷ পেট্রল ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি মানে অন্যান্য সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ৷ কারণ তেলের ওপর নির্ভরশীল ট্রাক, বাস প্রভৃতি পরিবহন৷ ভোগ্যপণ্যের পরিবহন খরচ বাড়লে স্বাভাবিকভাবে তার দাম বাড়বে৷ এমনিতে করোনা সংক্রমণ রোখার জন্যে ৩ মাসের বেশি লকডাউনের ফলে স্থানীয় কলকারখানা কার্যতঃ বন্ধ৷
কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র শিল্পও প্রায় বন্ধ৷ লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক যাঁরা অন্যান্য রাজ্যে নানান কাজ করতেন, তাঁরাও এখন কপর্দকশূন্য হয়ে কেউ হেঁটে, কেউ নানাভাবে ট্রাকে, বাসে করে, শেষ পর্যন্ত কেউ বা বিশেষ ট্রেনে করে বাড়ী ফিরেছে৷ এখন চরম বেকার সমস্যা, মানুষের হাতে টাকা পয়সা নেই৷ তার ওপর আবার আমপান ঘুর্ণীঝড়ের তাণ্ডব হয়ে গেল৷ সাধারণ মানুষের ওষ্ঠাগত প্রাণ৷ এখন গরীব মানুষদের একটু স্বস্তি দিতে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে৷ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাদের আর্থিক সামর্থ্যের মধ্যে যতটুকু পারছে দুর্গত মানুষদের সেবায় এগিয়ে আসছে৷ এছাড়া কোনো উপায় নেই৷
এদিকে লকডাউনের ফলে এখনও ট্রেন বন্ধ৷ বাসই একমাত্র ভরসা৷ সরকারী বাসের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য৷ তাই বেসরকারী বাসের ওপরই ভরসা৷ আবার করোনা সন্ত্রাস রুখতে স্যোসাল ডিসট্যান্স মানতে হলে আগের মত গাদাগাদি করে বাসে লোক নেওয়া চলবে না৷ বড় জোর যতগুলি সিট তার চেয়ে বেশি লোক নেওয়া নিষিদ্ধ৷ কিন্তু তিনমাসের গৃহবন্দী অবস্থার পরে অফিস খুলেছে, শিল্প কলকারখানা খুলছে, দোকন-বাজার খুলছে৷ তাই রাস্তায় বেরুতে হবে৷ কিন্তু কীভাবে যাবে? বাসওয়ালারা বলছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে বাসে বেশি লোক নেওয়া যাবে না, তার ওপরে প্রায় প্রতিদিন ডিজেল-পেট্রলের দাম বাড়ছে, ফলে বাস চালানোর খরচ বাড়ছে৷ এত ক্ষতি করে আমরা বাস চালাতে পারব না৷ রাজ্যসরকার ভরতুকি দেবার কথা ঘোষণা করলেও তাতেও তাঁদের পোষাবে না জানিয়েছে৷ তাই বহু বাস মালিক এখন বাস নামাচ্ছে না৷ ফলে জনগণের দুর্ভোগের অন্ত নেই৷
মানুষের সেবার জন্যেই তো সরকার! ডিজেল ও পেট্রল দেশের অর্থনীতির, বলতে গেলে, প্রাণভোমরা ৷ সেই জ্বালানী তেল নিয়ে সরকারের নীতি বিস্ময়ের উদ্রেক করে৷ আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে তেলের দাম কমেছে,অন্যান্য সব অর্থোন্নত দেশগুলিতে যখন তেলের দাম হ্রাস করা হচ্ছে, তখন ভারতে কীভাবে তেলের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে? এটা কি পুঁজিপতিদের স্বার্থে? অথবা আগামী নির্বাচনের জন্যে অর্থসংগ্রহের নয়াকৌশল৷ মানুষ বাঁচলে তবে না আগামী নির্বাচনেও গদী দখলের স্বপ্ণ? কেন্দ্রীয় সরকারের এই জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে দেশের বিরোধী দলগুলি আন্দোলনে সামিল হচ্ছে৷
কেন্দ্রীয় সরকারের ভেবে দেখা উচিত, পুঁজিপতি স্বার্থ আগে নয়, জনগণের স্বার্থ আগে৷ বিভিন্ন ব্যাপারেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সরকার বড় বড় শিল্পপতিদের স্বার্থেই কাজ করছেন, তাঁদের কথা মতই চলছেন৷ সরকার দেশের সম্পদ খনি, রেল, বীমা প্রকল্প প্রভৃতি ধীরে ধীরে বেসরকারী মালিকানার হাতে ছেড়ে দিচ্ছেন৷
পুঁজিপতিরা জনগণকে বাঁচাবে না৷ ‘টিক্ল ডাউন’ তত্ত্ব জনগণেরে কল্যাণে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে৷ পুঁজিপতিদের দয়ায় দেশ বাঁচবে না৷ বরং অর্থনীতির চালিকা শক্তি যাতে জনগণের হাতে থাকে--- সরকারকে তারই ব্যবস্থা করতে হবে৷ সরকার মুখে দেশের জনগণকে আত্মনির্ভর হওয়ার কথা বলছেন৷ আত্মনির্ভরতা মানে পুঁজিপতি নির্ভরতা নয়৷ পুঁজিপতিরা মুনাফা ছাড়া কিছু বোঝে না৷ সরকারের কর্তব্য দেশের জনসাধারণের পাশে দাঁড়ানো, তাদের অভাব-অভিযোগ , তাদের দুঃখকষ্ট লাঘব করা৷ আর প্রকৃতি মা দেশের সর্বত্র যে সম্পদ দিয়েছেন--- কাঁচামালের সঞ্চয় রেখেছেন, তার ওপর নির্ভর করেই কৃষি, কৃষিনির্ভর শিল্প, কৃষি সহায়ক শিল্পের ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ নির্ভর শিল্প জনগণের যৌথ মালিকানায় গড় তুলতে হবে৷ এ ব্যাপারে সরকারকে জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে৷ জনগণকে আত্মনির্ভরশীল হতে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে৷ অর্থনৈতিক শক্তিকে জনগণের মধ্যে বন্টিত করতে হবে, তবে হবে জনগণের সরকার নাহলে তারা হবেন জনগণের সেবকের বেনামীতে জনগণের শোষক৷
- Log in to post comments